সম্পাদকীয়...
যেতে নাহি দিব
যাহার উপর ভালবাসা, নির্ভরতা জন্মিয়া যায়, তাহার যাইবার সময় হইলে সকলে উতলা হইয়া উঠে। শকুন্তলা পতিগৃহে যাইবার সময়ে হরিণশিশুও আঁচল টানিয়া ধরিয়াছিল। শিশু তাহার মাতার কোল হইতে নামিতে চাহে না মাতাকে হারাইবার ভয়ে। প্রেম তাহার সর্বশক্তিতে প্রেমাস্পদের দ্বার রোধ করিয়া দাঁড়াইয়া বলে, না, না, না। সমাজেও এমন আবেগ বিরল নহে। শোনা যায়, দক্ষিণী চিত্রতারকা রজনীকান্তের প্রতি তাঁহার ভক্তদের এমনই ভালবাসা, যে তিনি কখনও মৃত্যুর দৃশ্যে অভিনয় করিতে পারেন নাই। তাহার সম্ভাবনা কানে আসিবামাত্র ভক্তদের মধ্যে নিদারুণ আন্দোলন উপস্থিত হয়, ফলে প্রযোজক-পরিচালক বাধ্য হইয়া পিছাইয়া আসেন। রুপোলি পর্দাতেও তাঁহারা প্রিয় নায়কের বিয়োগব্যথা সহিতে রাজি নহেন। তবে সকল ক্ষেত্রে যে অন্ধ আবেগই প্রিয়জনের গমনপথ আটকাইয়া দাঁড়ায়, তাহা নহে। অন্যের প্রতি ভালবাসা, আস্থার সহিত নিজের হিতচিন্তাও কখনও কখনও পথ আটকাইতে উদ্বুদ্ধ করিয়া থাকে। তাই সংবাদপত্রে দেখা যায়, ডাক্তার বদলি হইবেন শুনিয়া গ্রামবাসী পথরোধ করিয়াছেন, কিংবা শিক্ষক বদলি হইবেন খবর পাইয়া ছাত্র ও অভিভাবকরা স্কুলে বিক্ষোভ দেখাইয়াছেন। ইহা শিক্ষক কিংবা ডাক্তারের প্রতি মানুষের আস্থা, ভালবাসার প্রকাশ তো বটেই, তৎসহ একটি সুব্যবস্থা হারাইবার ভয়েরও প্রকাশ।
সম্প্রতি হুগলিতে এবং পুরুলিয়ায় ইহার দুটি নিদর্শন দেখা গিয়াছে। বলাগড়ে কলেজের অধ্যক্ষকে (ছবিতে, বাঁ দিকে) যেতে না দিবার দাবিতে ঘেরাও করিয়াছেন ছাত্রছাত্রীরা, পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে সহকারী কৃষি অধিকর্তাকে (ডান দিকে) ধরিয়া রাখিতে গণস্বাক্ষর করিয়া স্মারকলিপি জমা দিয়াছেন কৃষকরা। কেন এই ভালবাসা? উভয় ক্ষেত্রেই তাহার উত্তর সহজ এবং স্পষ্ট। ওই অধ্যক্ষ এবং ওই কৃষি বিভাগের কর্মী তাঁহাদের মূল কাজটি করিয়াছেন যত্ন এবং দক্ষতার সহিত। অধ্যক্ষ কলেজ প্রশাসন শক্ত হাতে সামলাইয়াছেন, কৃষি কর্তা মাঠে গিয়া চাষিদের হাতে-কলমে নূতন ধরনের চাষের প্রশিক্ষণ দিয়াছেন। এগুলি তাঁহাদের নির্দিষ্ট কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। তাহার বাহিরে গিয়া ওই অধ্যক্ষ বা ওই কৃষি কর্তা কোনও অসামান্য কাজ করেন নাই। কেবল নিজের চাকরিটি যথাযথ ভাবে করিয়াছেন। তাহারই জন্য দু’জনেই মানুষের ঐকান্তিক ভালবাসা লাভ করিয়াছেন। তাঁহারা অপর কাহাকেও ‘খুশি’ করিয়া নিজের কাজ হাসিল করেন নাই, নিজের কাজ করিয়া সকলকে খুশি করিয়াছেন।
কবীরের দোহায় রহিয়াছে, যে দিন তুমি জগতে আসিয়াছিলে সে দিন সকলে হাসিয়াছিল, তুমি কাঁদিয়াছিলে। এমন কাজ করো যাহাতে যাইবার দিন সকলে কাঁদে, তুমি হাসিতে হাসিতে চলিয়া যাও। বড় সহজে সার্থক জীবনের মূল কথাটি বলিয়াছিলেন এই সাধক। কলেজের অধ্যক্ষ এবং কৃষিকর্তা প্রমাণ করিলেন, কেবল নিজের কর্তব্যটুকু করিলেই যাইবার দিন সকলকে কাঁদানো সম্ভব। তাহার অপেক্ষা চমকপ্রদ কাজ করিবার প্রয়োজন নাই। এ দেশে ধর্মপালন করিতে মানুষে নানা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বহু সময় এবং অর্থ ব্যয় করে, কিন্তু নিজের কাজ করাকে ধর্মাচরণ বলিয়া মনে করে না। তাহার একটি কারণ, নিজের কাজ করিয়া সহজে এবং ঘন ঘন হাততালি পাওয়া যায় না। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনা দুইটি স্পষ্ট দেখাইয়া দিল, আপন কাজ সৎ ভাবে ও নিষ্ঠাভরে করিয়া মানুষের মঙ্গল করিতে পারিলে যে ভালবাসা ও স্বীকৃতি পাওয়া যায়, তাহার দাম সহস্র হাততালির অধিক। আমরা শিখিব কি?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.