স্ত্রীকে ফোন মমতার
সুইসাইড নোটে ডিসিকে দায়ী করে আত্মঘাতী এসআই
লায় দড়িটা প্যাঁচানোই ছিল। দরজা ভেঙে উদ্ধার হওয়ার সময় কলকাতা পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর কার্তিক চট্টোপাধ্যায়ের দেহটা পড়ে ছিল ঘরের মেঝেয়। পাশেই পড়ে ছিল তাঁর হাতে লেখা সুইসাইড নোট। যেখানে মৃত্যুর জন্য দায়ী করা তাঁরই ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহকে।
শনিবার সকালে বাগুইআটির বিদ্যাসাগরপল্লির ওই ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। কার্তিকবাবু পার্ক স্ট্রিট থানায় কর্মরত ছিলেন। পুলিশ এই ব্যাপারে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে তদন্তে নেমেছে।
কার্তিক চট্টোপাধ্যায়
এ দিন দুপুরে বিধাননগরের কমিশনারকে মহাকরণে ডাকা হয়। সন্ধ্যায় কার্তিকবাবুর স্ত্রী জানান, মুখ্যমন্ত্রী নিজে তাঁকে ফোন করে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী সোমবার কার্তিকবাবুর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারেন বলে সরকারি সূত্রের খবর।
তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, সুইসাইড নোটে কার্তিকবাবু লিখেছেন: ডিসি (সাউথ) ডি পি সিংহ ৩ অগস্ট তাঁর চেম্বারে ডেকে আমাকে প্রচণ্ড অপমান করেন। আরও’বাবু (রিজার্ভ অফিসার) টি এন দাস চৌধুরী ও ভাস্করের (অন্য এক পুলিশকর্মী) সামনেই আমাকে সাসপেন্ড করবেন বলেছেন। আবার ২২ অগস্ট ডাকেন। অসুস্থ থাকায় ওই দিন আমি ছুটিতে ছিলাম। থানা থেকে ফের ২৩ ও ২৪ অগস্ট ফোন করে বলা হয়, কাজে যোগ দিলেই ডিসি-র সামনে আমাকে পুট-আপ (হাজির) হতে হবে। আমার অপমান সহ্য করার ক্ষমতা নেই। আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী ডি পি সিংহ, আইপিএস, ডিসি (সাউথ)।
ডিসি (সাউথ) অবশ্য অভিযোগ মানতে চাননি। কার্তিকবাবুকে অপমান করার কথাও অস্বীকার করেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “ওই অফিসার চার মাস আগে চেতলা থেকে পার্ক স্ট্রিটে থানায় বদলি হন। চেতলায় কিছু মামলার তদন্ত তাঁর হাতে ছিল। আমি তাঁকে ডেকে মামলাগুলির বর্তমান পরিস্থিতি আগের থানাকে বুঝিয়ে দিতে বলি। তার জন্য সময়ও দিয়েছিলাম।”
কার্তিকবাবুর বাড়ির লোকজনও জানিয়েছেন, সম্প্রতি তিনি কাজের চাপ সহ্য করতে পারছিলেন না। তাই অন্য বিভাগে বদলি চেয়েছিলেন। এ দিন সকালে মৃতদেহ উদ্ধারের পরে কার্তিকবাবুর দুই মেয়ে মৌসুমি ও শর্মিষ্ঠা বাগুইআটি থানায় গিয়ে একটি জেনারেল ডায়েরি করেন।
আর এখানেই পুলিশমহলে প্রশ্ন উঠেছে, কেন শুধুই অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করা হল? সুইসাইড নোটে যেখানে সরাসরি কাউকে দায়ী করে গিয়েছেন ওই অফিসার, সেখানে কেন আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার ধারা জোড়া হল না? তা হলে কি প্রথম থেকেই মামলা লঘু করার চেষ্টা শুরু হয়েছে, প্রশ্ন উঠেছে পুলিশমহলেই।
পুলিশের একাংশের যুক্তি, রিজওয়ানুর-কাণ্ডে যদি দুই আইপিএসের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ নথিভুক্ত হয়, তা হলে কার্তিকবাবুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রেও ওই ধারা প্রয়োগ করা উচিত। এ নিয়ে অবশ্য কলকাতা ও বিধাননগর, কোনও কমিশনারেটের কর্তারাই মুখ খুলতে চাননি।
স্ত্রী রুমাদেবী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ছিল কার্তিকবাবুর সংসার। সৎ-পরিশ্রমী হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন সতীর্থদের কাছে। রুমাদেবী বলেন, “উনি খোলা মনের মানুষ ছিলেন। শনিবারই ওঁর কাজে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁর মনের মধ্যে যে তোলপাড় চলছিল, তা বুঝতে দেননি।”
তাঁর বাড়ির লোকজন জানান, শুক্রবার রাতেও কার্তিকবাবু স্ত্রী-মেয়ের সঙ্গে গল্পগুজব করতে করতে খাওয়াদাওয়া করেন। শনিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দাদার বাড়িতে যান। বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেলেও কার্তিকবাবু না ফেরায় বেলা পৌনে ৯টা নাগাদ কাজের লোককে ওই ফ্ল্যাটে পাঠান তাঁর স্ত্রী। কিন্তু ডাকাডাকি করেও সাড়া না মেলায় শেষে লোক ডেকে দরজা ভেঙে দেখা যায়, শোওয়ার ঘরের মেঝেয় গলায় দড়ি লাগানো অবস্থায় পড়ে রয়েছেন কার্তিকবাবু। পুলিশ জানিয়েছে, দড়ির কিছুটা ঝুলছিল সিলিং ফ্যান থেকে। অনুমান, শরীর ঝুলে পড়ার টানে সেটি ছিড়ে যায়। পড়ে গিয়ে মাথাও ফেটেও যায় কার্তিকবাবুর। পাশেই পড়ে ছিল সুইসাইড নোটের কার্বন কপি। তার উপরে রাখা ২২০০ টাকা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.