তেল আমদানির প্রশ্নে ইরানের উপর থেকে ক্রমশ নির্ভরতা কমাচ্ছে ভারত। কিন্তু সেই সঙ্গে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কথা ভাবাচ্ছে ভারতকে। আর সে কথা মাথায় রেখেও ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করা দূরস্থান, বরং কৌশলগত যোগাযোগ বাড়ানোর পথেই হাঁটতে চাইছে নয়াদিল্লি। আগামী ২৮ অগস্ট জোট নিরপেক্ষ দেশগুলির (ন্যাম) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ইরানে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। এই সুযোগে আফগানিস্তান-ভারত-ইরান অক্ষটিকে ঝালিয়ে নেওয়ার কাজটিও সেরে রাখতে চাইছে নয়াদিল্লি। পাশাপাশি, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনেজাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক পার্শ্ব বৈঠকও করবেন প্রধানমন্ত্রী।
আর ভারতের এই পদক্ষেপে নিঃসন্দেহে খুশি হবে না হোয়াইট হাউস। সম্প্রতি মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন দিল্লিতে এসে সাংবাদিক সম্মেলনে বলে গিয়েছিলেন, ইরানের উপর ভারত চাপ না বাড়ালে পরমাণু প্রশ্নে আন্তর্জাতিক দর কষাকষির টেবিলে তেহরানকে বসানো কঠিন হবে। নয়াদিল্লি এ ক্ষেত্রে অবশ্য ভারসাম্যের কূটনীতি নিয়েই এগিয়েছে। বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ স্পষ্ট জানিয়েছেন, তেল আমদানির ক্ষেত্রে পশ্চিম এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে। কমানো হচ্ছে ইরান-নির্ভরতা। কিন্তু সেই সঙ্গে এ কথাও বলা হচ্ছে, সার্বভৌম দেশ হিসেবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে অসামরিক পরমাণু শক্তি ব্যবহারের পূর্ণ অধিকার রয়েছে ইরানের। কিন্তু অবশ্যই এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি মানতে হবে।
সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে ইরানের সঙ্গে এই বৈঠকটি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশেষত তিন দেশের (ভারত-আফগানিস্তান-ইরান) বৈঠকটি নিশ্চিত ভাবেই ভারতের কাছে অগ্রাধিকার পাবে। শীর্ষ বৈঠকের ফাঁকে পাক প্রেসিডেন্ড আসিফ আলি জারদারি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও বৈঠক করবেন মনমোহন। অনেক আগে থেকেই ইরানের চাবাহার বন্দরটি ব্যবহার করা এবং তার পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য তেহরানের কাছে দাবি জানিয়ে রেখেছিল ভারত। কারণ চাবাহারের মাধ্যমে পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার না করে সরাসরি আফগানিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে নয়াদিল্লি। আজ বিদেশসচিব রঞ্জন মাথাই বলেছেন, “এ বিষয়ে বেশ কিছু প্রস্তাব আমাদের কাছে এসেছে। তিন দেশের শীর্ষ স্থানীয় প্রতিনিধিরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসবেন।” |