|
|
|
|
সংস্কৃতি যেখানে যেমন |
|
শ্যামলছায়ায় সাহিত্যবাসর |
১৮ অগস্ট সন্ধ্যায় এক সাহিত্যের আড্ডা বসেছিল জলপাইগুড়ি শহরের প্রবীর রায়ের ‘শ্যামলছায়া’য়। সেখানে এসেছিলেন সাহিত্যিক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘দ্যোতনা’র সম্পাদক গৌতম গুহ রায়ের উদ্যোগে সাহিত্যপ্রেমীদের উপস্থিতিতে বৈঠকখানা হয়ে উঠেছিল জমজমাট। অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় সাহিত্যিক তপনবাবু জানালেন, তাঁর অসামান্য সৃষ্টিগুলির পশ্চাদভূমি। সরকারি আধিকারিকের পদে থেকে তাঁকে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে নানা অঞ্চলে। সেখানকার ভুগোল, ইতিহাস, মানুষ বার বার এসে পড়েচে তার সাহিত্যে। এভাবেই সুন্দরবনের প্রেক্ষাপটে তাঁর বিখ্যাত ছোট গল্প ‘ব্যাভিচারিণী’, উপন্যাস ‘নদী, মাটি, অরণ্য’। সুলতানি ও মোগল যুগের তথ্য সমৃদ্ধ ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের প্রেক্ষাপটে তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘মালব কৌশিক’। উপন্যাস লেখার সময় তাঁর পড়াশোনা, তথ্যানুসন্ধান, বজ্জু ও মৃগনয়নী চরিত্র নির্মাণে তাঁর ভাবনা, অভিজ্ঞতার কথা। বললেন, সাদামাটা ঘরোয়া ভঙ্গিতে। সহজাত রসবোধে শোনালেন কলেজ ম্যাগাজিনে ছাপা অক্ষরে তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হওয়ার মজার গল্প। উপস্থিত কবিদের মধ্যে কেউ কেউ পাঠ করলেন তাঁদের কবিতা। কথায় কথায় কখন সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমেছে, খেয়াল হয়নি কারও। প্রসঙ্গত, ‘শ্যামলছায়া’ কিন্তু বরাবরই কবি-সাহিত্যিকদের অন্যতম আকর্ষণ স্থল। গেট খুলে লম্বা ঘাস জমি পেরিয়ে যাঁরা পৌঁছেছেন ফুল-ফল-ঘাস-লতা ঘেরা ছোট্ট বাড়ি। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের চিফ ইঞ্জিনিয়র পদ থেকে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রবীরবাবু আজীবন ঘর করছেন কবিতার সঙ্গে। |
|
ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
১৯৮০ সালে ‘ম্যাজিক লণ্ঠন’ তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ। ‘খনিজ কবিতা’, ‘বরফ’, ‘নীলমাছিদের গান’, ‘কাঁচঘর’, ‘হাওয়ার গুদামঘর’, ‘বিষয় অবিষয়’, ‘কবিতা ০৯’-এর মতো ১৬টি অসামান্য কাব্যগ্রন্থ এ পর্যন্ত উপহার দিয়েছেন তিনি। জলপাইগুড়ি থেকে প্রকাশিত ‘এখন বাংলা কবিতার কাগজ’ (সম্পাদক অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়) খুব শীঘ্রই প্রকাশ করতে চলেছে তাঁর কবিতা সমগ্র।
এ শহরের সব কবিই কোনও না কোনও সময়ে এসেছেন শ্যামলছায়া। আসতেন রবি ভট্টাচার্য (ছড়াকার), জলপাইগুড়ির গর্ব প্রয়াত কবি শ্যামল সিংহ এবং তাঁর সমসাময়িক কবিরা। দু’দেশের ওপর সময় ধরে রবিবারের সকালগুলোতে বৈঠকখানা ঘরটি কবিতা পাঠে মুখর হয়ে থাকে। অনেক সদ্য কবিতা পাঠের আঁতুড়ঘরও এটি। কেবলমাত্র এই শহর নয়, উত্তরবাংলার নানা গ্রাম শহর থেকে, গঙ্গার ওপার থেকে এমনকী, ভিন রাজ্য থেকেও কবিরা আসেন এই আখরায়-কবিতা শুনতে, শোনাতে ও সহৃদয় খোলামেলা গঠনমূলক পাঠ প্রতিক্রয়া জানাতে। এমনই আডডা জমাতে নানা সময়ে এসেছেন কবি উত্তম দাস (সম্পাদক, ‘মহাদিগন্ত’), অতীন্দ্রীয় পাঠক (সম্পাদক, ‘অব্যয়’), সন্দীপ দত্ত (সম্পাদক, ‘লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্র’), বারীন ঘোষাল (সম্পাদক, ‘কৌরব’), অজিতেশ ভট্টাচার্য (মধুপর্ণী)। এসেছেন আনন্দ ঘোষ হাজরা, সজল বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বপন রায়, ধীমান চক্রবর্তী, প্রণব পাল, রঞ্জন মৈত্র, কাজল চক্রবর্তী, অমিতাভ মৈত্রদের মতো কবিরা। সপ্তাহ দুয়েক আগে দিল্লি থেকে এসেছিলেন দিলীপ ফৌজদার (সম্পাদক, দিল্লি হাটার্স)।
এমনই আরও অনেক প্রাণবন্ত সুন্দর অথচ অনাড়ম্বর সাহিত্য আসরের নীরব সাক্ষী হয়ে আছে ‘শ্যামলছায়া’, প্রবীর রায়, উকিলপাড়া, জলপাইগুড়ি ঠিকানাটি।
|
প্রতিবেদন: মৌসুমী মজুমদার |
|
|
|
|
|