একেই বলে ঠেকে শেখা! রাজ্যে ডেঙ্গি-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার পর তাকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা খেয়াল হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের।
এত দিন পর্যন্ত স্বাস্থ্যকর্তারা ডেঙ্গি নির্ণয়ে জ্বরের পাঁচ দিনের মাথায় ‘সেরোলজি’ পরীক্ষাই একমাত্র বিবেচ্য বলে দাবি করছিলেন। চিকিৎসক মহল জ্বরের এক বা দু’দিনের মধ্যে নন স্ট্রাকচারাল (এনএস-ওয়ান) পরীক্ষার উপরে জোর দিলেও স্বাস্থ্য দফতর বা পুরসভা তাকে আমল দিতে চায়নি। রোগীর সংখ্যা নিয়েও লুকোছাপা চলেছে। তাতেই পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এই অবস্থায় এনএস ওয়ান পরীক্ষাকে গুরুত্ব না দিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে তা বুঝেই শুক্রবার স্বাস্থ্য ভবনে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। সেখানেই পুর প্রতিনিধি, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিনিধিদের এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতেই চিকিৎসা শুরু করার বিষয়ে সকলকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এনএস-ওয়ান রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ হলে সেই তথ্য অবিলম্বে স্বাস্থ্য দফতরকে জানাতেও বলা হয়েছে।
তবে এত কিছুর পরেও পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বলেন, “ন্যাশনাল ভেক্টর কন্ট্রোল বোর্ডের গাইডলাইন মেনেই যা করার করছি। তারা এনএস-ওয়ান পরীক্ষাকে গুরুত্ব দিতে বলে না। তাই আমরা দিই না।” এর পর কী করবেন, তা স্পষ্ট করেননি অতীনবাবু। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি তপন কুমার মুখোপাধ্যায় আবার বলেছেন, তিনি ওই বৈঠকে আগাগোড়া ছিলেন। কিন্তু এনএস-ওয়ানকে আলাদা গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে বলে তাঁর মনে হয়নি। রাজ্যের হাসপাতালগুলি জ্বরের রোগীতে ভর্তি। শয্যা না পেয়ে বহু রোগী ফিরে যাচ্ছেন। বাঙুর হাসপাতালে ১২০ জন জ্বরের রোগী ভর্তি। তাঁদের মধ্যে ১২ জনের ডেঙ্গি। স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস জানান, সব মেডিক্যাল কলেজে আগামী কয়েক সপ্তাহ ডেঙ্গি রোগীদের জন্য ১০টি করে শয্যা প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এসএসকেএম তথা ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইপিজিএমইআর)-এর অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, “আজ, শনিবার থেকে সব মেডিক্যাল কলেজে ‘ফিভার ক্লিনিক’ চালু হচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত এই ক্লিনিক চালু থাকবে। ডেঙ্গি নয়, যে কোনও ধরনের জ্বরের রোগীরাই এখানে আসতে পারবেন। থাকবে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থাও। মেডিসিন, মাইক্রোবায়োলজি এবং কমিউনিটি মেডিসিন-এর এক জন করে চিকিৎসক এখানে থাকবেন।” ডেঙ্গি মোকাবিলায় বিধাননগর পুরসভার ভূমিকা নিয়েও সমালোচনার ঝড় ওঠে বৈঠকে। বিধাননগরের পরিস্থিতি কলকাতার চেয়েও সঙ্গিন। তবু মশা মারা অভিযানে বা সচেতনতা বাড়ানোর বিষয়ে পুরসভার ভূমিকা সক্রিয় নয় কেন, সেই প্রশ্ন তোলেন স্বাস্থ্যকর্তারা। পুরসভার তরফে পরিকাঠামোর অভাবের কথা বলা হলে কলকাতা পুরসভার কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার কথা বলা হয়। বিধাননগর পুরসভা এলাকায় ৫০টি দল গঠন করতে বলা হয়েছে। প্রতি দলে দু’জন করে থাকবেন। পরবর্তী ছ’দিনে ২০০০ বাড়িতে ঘুরে মশার লার্ভা মারা এবং সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করবেন এঁরা। |