অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এক দম্পতির। মিনাখাঁর বাবুরহাটের দেউলির ঘটনা। শুক্রবার সকালে এলাকার একটি আমবাগান থেকে দু’জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ জানায়, বাগানে একটি গাছের গোড়ায় পড়েছিল হাড়োয়ার কুলটি এলাকার ন’পাড়ার কিশোরী রুমেনা পারভিনের (১৮) দেহ। ওই গাছেরই ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় ওই এলাকারই মাখলা গ্রামের বাসিন্দা মোশাররফ মোল্লার (২৪) দেহ।
বসিরহাটের এসডিপিও আনন্দ সরকার বলেন, “অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ সঠিক ভাবে বলা সম্ভব নয়।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মোশাররফের সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রুমেনার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। মোশাররফের এর আগে একবার বিয়ে হওয়ায় রুমেনার পরিবার তাঁদের এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি। দু’জনের সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় রুমেনাকে তার মামারবাড়ি বাবুরহাটের দেউলিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মোশাররফও পড়াশোনা ছেড়ে সেলাইয়ের কাজ নিয়ে দেউলিতে তাঁর জামাইবাবুর বাড়িতে চলে যান। সেখানে দু’জনের মাঝেমধ্যেই দেখা হত। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় দুই পরিবারের সম্পর্কের অবনতি হয়। এ নিয়ে গ্রামে সালিশি সভা বসে। মোশাররফের আর্থিক জরিমানাও হয়। এরপরেও দু’জনের যোগাযোগ বহাল থাকে। মাস তিনেক আগে পরিবারের সদস্যেদের না জানিয়ে মোশাররফ ও রুমেনা রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেন। সে কথা জানাজানি হওয়ায় পরিস্থিতির অবনতি হয়। উভয় পরিবার দু’জনের বিয়ে মানতে চায়নি। |
পুলিশ জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহ ধরে কোনও খোঁজ মিলছিল না মোশারেফ এবং রুমেনার। এ ব্যাপারে দুই পরিবারই থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে। শুক্রবার ভোরে দেউলির এক বাসিন্দা মাঠে কাজ করতে যাওয়ার সময় দেখেন রাসখোলার মাঠের পাশে আমবাগানে মৃতদেহ পড়ে আছে। গাছেরই ডালে গলায় ওড়নার ফাঁস দেওয়া দেহ ঝুলছে এক যুবকের। খবর পেয়ে দুই বাড়ির লোক এলাকায় যায়। ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ।
মিনাঁখা থানার ওসি প্রসূন মিত্র জানান, রুমেনার দেহের পাশে একটি ব্যাগ পড়েছিল। ব্যাগে পাওয়া জিনিস থেকে জানা গিয়েছে, মোশাররফ এবং রুমেনা দিঘায় গিয়েছিলেন। সেখানে তোলা দু’জনের ছবিও মিলেছে। ব্যাগ থেকে কিছু অলঙ্কার এবং একটি সিম ছাড়া মোবাইলফোনও উদ্ধার হয়েছে।
এ দিন থানা চত্বরে দাঁড়িয়ে মোশাররফের দাদা মোক্তার আলি বলেন, “ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে দুই পরিবারের মধ্যে অশান্তি চলছিল। এর পরে ওরা নিজেরাই রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করে বাড়ি থেকে চলে যায়। মেয়ের মামারা সামাজিক ভাবে বিয়ে দেওয়ার নাম করে ওদের ডেকে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। সে জন্যই মোবাইলের সিম খুলে নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত মারধরের ফলে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।” মোশাররফের বাবা আনার আলি মোল্লারও একই বক্তব্য। তাঁর কথায়, “দু’জনের সম্পর্ক নিয়ে গ্রামে বিচারসভা বসেছিল। আমার ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেবে না বলে জেদ করে ওরা দু’জনকে পিটিয়ে মেরেছে।”
অন্য দিকে, মারধরের ঘটনায় তাঁরা যুক্ত নন দাবি করে রুমেনার মামা আব্দুল অহিদ মোল্লা বলেন, “ভাগ্নীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য আগে দু’বার মোশাররফের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। আমাদের বিশ্বাস দু’জনকে অন্য কোনও জায়গায় নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে মেরে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।” রুমেনার বাবা সইফুল মোল্লা বলেন, “ছেলেটির আগে একবার বিয়ে হয়েছিল বলে তাঁকে জামাই বলে মেনে নিতে পারিনি। দু’জনের মৃত্যু সন্দেহজনক। পুলিশকে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।” গ্রামবাসীদের বক্তব্য, এটি আত্মহত্যা হলে ওই দু’জন তো দিঘাতেই তা করতে পারতেন। ফলে এটা আত্মহত্যা না খুন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। |