ছুটন্ত ট্রাকের ধাক্কায় জখম হয়ে রাস্তার উপরেই প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পড়ে ছিল হনুমানটি। ছড়িয়ে ছিটিয়ে অসহায় মুখে বসেছিল তার সঙ্গী সাথীরা। ভিড় করে পথ চলতি মানুষও ছিলেন অনেকেই। কিন্তু কেউ-ই এগিয়ে আসেননি।
সামান্য দূরে প্রাণিসম্পদ দফতরের পশু পলিক্লিনিক। ‘কে নিয়ে যাবে বাবা!’ এ ওকে ঠেলতে থাকেন। আর বন দফতর? যাঁরা খবর দিতে গিয়েছিলেন, তাঁদের শুনতে হয়েছিল, “লোকজন নেই। কে যাবে?” বার বার ফোন করায় শেষ পর্যন্ত স্থানীয় বন বিভাগের রেঞ্জ অফিস থেকে হেলতে দুলতে দুই অস্থায়ী কর্মী এসেও দর্শক হয়ে যান! তুলে নিয়ে যান? তাঁরা পরস্পরকে বলতে থাকেন, ‘‘না বাবা, আঁচড়ে কামড়ে দিলে?’’
বহরমপুরে জেলাশাসকের বাংলোর সামনেই এ নিয়ে ঝাড়া দেড় ঘণ্টার ঠেলাঠেলির পরে স্থানীয় দুই বাসিন্দাই রিকশায় চাপিয়ে মৃতপ্রায় প্রাণীটিকে ওই পলিক্লিনিকে নিয়ে যান। মিনিট দশেকের মধ্যে সেখানেই মারা যায় হনুমানটি।
পলিক্লিনিকের দুই চিকিৎসক অভিজিৎ দত্ত ও অম্বিকাচরণ মাথুর বলেন, অক্সিজেন, স্যালাইন শুরু হলেও বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছিল। কিছুই করার ছিল না।”
এ দিন সকালে দুর্ঘটনাটি জেলাশাসকের বাংলোর অস্থায়ী কর্মী মালতী সিংহের প্রায় চোকের সামনেই ঘটেছিল। তিনি বলেন, “হনুমানের একটি দলটি আহত সঙ্গীকে ঘিরে রেখেছিল, অসহায় হয়ে তারা এ দিক ও দিক দেখছিল। হাঁর করে দাঁড়িয়ে তা দেখছিলেন পথচারীরাও। কেউই এগিয়ে আসেননি।” অবশেষে স্থানীয় বাসিন্দা জেলখানার পুজারি মঙ্গলময় ভট্টাচার্য ও তাঁর ভাই কাননবাবু একটি রিকশায় চাপিয়ে বন দফতরের রেঞ্জ অফিসে নিয়ে যান। তাঁরা বলেন, “কর্মরত অফিসার আমাদের বলেন, আবার একানে বয়ে আনলে কেন, মরে গেলে তোমরাই তো ফেলে দিলে পারতে।”
রেঞ্জার সত্যনারায়ণ পোদ্দার অবশ্য বলেন, “আমি অফিসে ছিলাম না। তবে ফোনে জানতে পেরে দু-জনকে তো পাঠিয়েছিলাম।” তা হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের বয়ে আনতে হল কেন, বন দফতরের কাজটা কী? উত্তর মেলেনি।
না মিললেও, উত্তরটা অবশ্য স্থানীয় বাসিন্দাদের অজানা নয়! |