|
|
|
|
শীর্ষ আদালতে অভিযোগ-মুক্ত চিদম্বরম |
টুজি প্রসঙ্গে চাপ কমাচ্ছে না বিরোধীরা |
সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি |
টুজি মামলা থেকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে মুক্তি দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত সাফ জানিয়ে দিয়েছে, চিদম্বরমের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার প্রমাণ নেই। আদালতের রায় সরকারকে কিছুটা স্বস্তি দিলেও বিরোধীরা যে টুজি প্রশ্নে চিদম্বরম তথা ইউপিএ-কে চাপে রাখতে বদ্ধপরিকর, এ দিনই তারা তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। বিরোধীদের বক্তব্য, টুজি স্পেকট্রামের দাম ঠিক করার দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, চিদম্বরম তাঁদের অন্যতম। তাই টুজি-তে সরকারের ক্ষতি হয়ে থাকলে তিনিও এর দায় এড়াতে পারেন না। বিজেপি এ নিয়ে সংসদের ভিতরে-বাইরে সরব হবে বলে জানিয়েছেন দলের মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ। বামেদের দাবি, জেপিসি-র কাছে টুজি নিয়ে সাক্ষ্য দিতে হবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে। চিদম্বরম নিজে কোনও মন্তব্য করতে চাননি রায় নিয়ে। তবে সংসদ সচল রাখার আবেদন জানিয়েছেন বিরোধীদের প্রতি।
প্রাক্তন টেলিকমমন্ত্রী এ রাজার পাশাপাশি চিদম্বরমও টুজি কেলেঙ্কারির জন্য দায়ী বলে দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছেন জনতা পার্টির নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। তিনি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সেন্টার ফর পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন’-এর আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ টুজি কেলেঙ্কারিতে চিদম্বরমের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত চেয়ে সিবিআই আদালতের দ্বারস্থ হন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁদের আর্জি খারিজ করে দেয় বিচারক ও পি সাইনির সিবিআই আদালত। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যান স্বামী ও প্রশান্ত।
আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জি এস সিঙ্ঘভি ও বিচারপতি কে এস রাধাকৃষ্ণনের বেঞ্চ জানিয়েছে, চিদম্বরম টুজি স্পেকট্রামের দাম নির্ধারণে যুক্ত ছিলেন। এ রাজার সঙ্গে তাঁর বৈঠকও হয়েছিল। কিন্তু, তিনি রাজার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্র করেছেন, এমন কোনও
প্রমাণ নেই। |
|
স্বস্তি শীর্ষ আদালতের রায়ে। সাংবাদিক বৈঠকে চিদম্বরমের পাশে
সলমন খুরশিদ ও শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়াল। নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই। |
চিদম্বরম ও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ চাইলে টুজি কেলেঙ্কারি আটকাতে পারতেন বলে অভিযোগ করেছিলেন স্বামী। তাঁর দাবি, রাজাকে কার্যত যা খুশি তাই করার অধিকার দেওয়া হয়েছিল। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, চিদম্বরম ও মনমোহনের হস্তক্ষেপে টুজি কেলেঙ্কারি আটকানো যেত কি না তা ভিন্ন প্রশ্ন। কেবল রাজার সঙ্গে বৈঠক করা বা টুজি স্পেকট্রামের দাম নির্ধারণে যুক্ত থাকলেই চিদম্বরমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যায় না। কোর্টের বক্তব্য, চিদম্বরম হয়তো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যে ভাবে টুজি স্পেকট্রামের দাম স্থির করা উচিত ছিল তা হয়তো করা হয়নি। কিন্তু, কেবল সেই কারণেই চিদম্বরমকে ষড়যন্ত্রের অংশীদার বলা যায় না। এতে স্বাভাবিক ভাবেই বড় ধাক্কা খেয়েছেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। তিনি রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাবেন।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে স্পষ্টতই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে কংগ্রেস তথা ইউপিএ সরকার। মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী কপিল সিব্বল থেকে শুরু করে আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ, সকলেই এক সুরে জানিয়েছেন তাঁরা খুশি। এক জন দক্ষ সহকর্মীকে আদালত মুক্তি দিয়েছে। সিব্বল বলেছেন, “চিদম্বরম দায়ী নন বলে প্রথম থেকেই বলে আসছি আমরা। সুব্রহ্মণ্যম স্বামী এমনও বলেছিলেন যে, যাঁরা এ কথা বলছেন তাঁরা সকলে অশিক্ষিত। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে কে অশিক্ষিত তা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।”
আইনি লড়াইয়ে চিদম্বরম ও সরকার স্বস্তি পেলেও টুজি কেলেঙ্কারি নিয়ে চাপ কমাচ্ছে না বিরোধীরা। বাম শিবিরের বক্তব্য, যৌথ সংসদীয় কমিটিতে (জেপিসি) এসে চিদম্বরমকে জবাবদিহি করতে হবে। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, আইন তার নিজের পথে চলবে। কিন্তু, টুজি কেলেঙ্কারি নিয়ে সরকারের কাছে জবাব চাওয়া বিরোধীদের কর্তব্য। তাই তাঁকে জেপিসি-তে সাক্ষ্য দিতে ডাকা উচিত। প্রায় একই সুরে সিপিআই নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত বলেছেন, জেপিসি-তে চিদম্বরমকে ডাকা যেতেই পারে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সঙ্গে এই বিষয়ের কোনও সম্পর্ক নেই।
টুজি স্পেকট্রামের দাম নির্ধারণে যুক্ত ছিলেন চিদম্বরম। তাই সে ক্ষেত্রে যদি দেশের ক্ষতি হয়ে থাকে তবে চিদম্বরম দায় এড়াতে পারেন না বলে মনে করেন বিজেপি মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদও। তাঁর বক্তব্য, অর্থমন্ত্রী এখনও সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে দায়বদ্ধ। বিজেপি তাই এ নিয়ে সংসদের ভিতরে-বাইরে সরব থাকবে আগামী দিনগুলিতে।
|
|
|
|
|
|