আচমকাই ফিরে এসেছিল এগারো বছর আগের আতঙ্কের সেই সকালটা। অফিস-টাইম সদ্য শুরু হয়েছে। চার দিকে ব্যস্ততা। তার মধ্যেই শহরের প্রাণকেন্দ্র ম্যানহাটনে একটা প্রায় আকাশছোঁয়া বাড়িকে ঘিরে গুলির শব্দ, আতঙ্কিত মানুষের ছোটাছুটি-আর্তনাদ।
শুক্রবার সকালে কয়েক ঘণ্টার জন্য নিউ ইয়র্ক ফিরে গিয়েছিল ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বরে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভেঙে পড়ার পর ১০২ তলার এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংই শহরের সব চেয়ে উঁচু বহুতল। আজ সকালে তার সামনের রাস্তায় আচমকাই এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে পঞ্চাশ পেরনো এক বন্দুকবাজ। এমনিতেই বছরভর বহু পর্যটক ভিড় জমান এখানে। তা ছাড়া, নিউ ইয়র্কের যাতায়াত ব্যবস্থার অন্যতম কেন্দ্রও এখানেই। ফলে দিন শুরুর ব্যস্ত সময়ে একের পর এক গুলির শব্দে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় ম্যানহাটনের ‘থার্টি ফোর্থ স্ট্রিট’ ও ‘ফিফথ অ্যাভিনিউ’-এ। স্রেফ আতঙ্কে বহু মানুষ এ দিক-ও দিক ছুটতে থাকেন। সাত-সকালে সিঁটিয়ে যায় গোটা শহর নিউ ইয়র্কে ফের জঙ্গি হামলা হল না তো? |
খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে পুলিশ। তখনই জানা যায়, এক বন্দুকবাজের কীর্তি এটা। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর অল্পক্ষণের মধ্যেই শোনা যায়, বন্দুকবাজের মৃত্যু হয়েছে। সম্ভবত পুলিশের গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে তার। কিন্তু ততক্ষণে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে অন্তত ১০ জনকে জখম করেছে সে। তার মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি হামলার কোনও যোগসূত্র মেলেনি বলেই দাবি নিউ ইয়র্কের পুলিশ সুপার রে কেলি-র।
বন্দুকবাজের সঙ্গে জঙ্গি-যোগ নেই জেনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন শহরের মানুষ। কিন্তু চলতি গ্রীষ্মেই এই নিয়ে তৃতীয় বার বন্দুকবাজের হামলার শিকার হলেন মার্কিনরা। গত ২০ জুলাই কলোরাডোর এক মাল্টিপ্লেক্সে ঢুকে ‘দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস’-এর প্রিমিয়ারে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ১২ জনকে হত্যা করে এক যুবক। এর কিছু দিন পরে, ৫ অগস্ট ওক ক্রিক গুরুদ্বারে এক নয়া নাৎসি বন্দুকবাজের গুলিতে নিহত হন ছ’জন। আর তার রেশ কাটতে না কাটতেই এ বার নিউ ইয়র্কে হামলা। |
মার্কিন মুলুকের অস্ত্র আইনে পরিবর্তন চেয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন বহু মানুষ। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নিবার্চনে সম্ভাব্য রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রোমনির কাছে এই আইনে পরিবর্তন চেয়ে আবেদনও করেছেন তাঁরা। দাবি উঠেছে, এক সঙ্গে একাধিক অস্ত্র কেনার উপর নিষেধাজ্ঞা আরও কড়া হোক। অস্ত্র কেনার আগে বাধ্যতামূলক হোক ক্রেতার অতীত যাচাই। এ দিনের হামলার পরে ফেসবুক, টুইটারের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে অস্ত্র আইনের বদল চেয়ে আমজনতার মতামত আছড়ে পড়েছে। বেশির ভাগেরই দাবি, যে ভাবেই হোক বন্দুকের এই নির্বিচার ব্যবহার ঠেকাতে সক্রিয় হোক প্রশাসন।
আজকের হামলা নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্তে নেমেছে নিউ ইয়র্ক পুলিশ ও এফবিআই। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, নিহত বন্দুকবাজ জেফ্রি জনসন ম্যানহাটনের ‘হাজান ইমপোর্ট’ নামের একটি অফিসে চাকরি করতেন। এক বছর আগে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয় তাঁকে। সেই আক্রোশ মেটাতেই আজ .৪৫ ক্যালিবারের একটি পিস্তল নিয়ে হাজির হন অফিসের সামনে। জেফ্রির গুলিতে নিহত হয়েছেন তাঁরই এক প্রাক্তন সহকর্মী।
|