স্কুলে যাওয়ার পথে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে এক যুবককে খুঁজছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে কাটোয়া শহর লাগোয়া নয়াচর গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে ওই ছাত্রীর বাবা জানান, যুবকটি তাঁর মেয়েকে খুনের চেষ্টাও করে। মেয়েটি অবশ্য ওই যুবককে চিনতে পারেনি। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “ধর্ষণের চেষ্টা ও খুনের চেষ্টার অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। সিআইডি-র সাহায্য নিয়ে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীর ছবি আঁকানো হবে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নয়াচর গ্রামটি আদতে নদিয়ার কালীগঞ্জ থানার গোবরা পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে। ওই গ্রাম থেকে অনেক পড়ুয়াই প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে কাটোয়ার পানুহাট রাজমহিষী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তে আসে। অন্য দিনের মতো শুক্রবারও সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রী গ্রাম থেকে আলপথ ধরে ভাগীরথীর মণ্ডলহাট বাঁধে আসছিল। তার বাবার অভিযোগ, “বাঁধ থেকে কিছুটা আগে এক অপরিচিত যুবক তার মাথায় ঘাসের বস্তা তুলে দিতে বলে আমার মেয়েকে। কিন্তু মেয়ে রাজি হয়নি। তখনই সে তার গলা টিপে ধরে পাট খেত পেরিয়ে কাশবনে তুলে নিয়ে যায়।” ছাত্রীটি পুলিশকে জানিয়েছে, সে ভয় পেয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়লে যুবকটি তার সঙ্গে ‘অসভ্যতা’ করে। তার পরে গলা টিপে ধরে ‘হুমকি’ দেয়। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছাত্রীটি কোনও রকমে বাড়ি ফিরে গিয়ে পাশের বাড়ির এক মহিলাকে ঘটনার কথা জানায়। ছাত্রীটির বাবা বলেন, “প্রথমে আমরা বুঝতে পারছিলাম না কী করব। বিকেলে কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় আমাদের বাড়িতে এসে কথা বলেন। তার পরে অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নিই।” সন্ধ্যায় কাটোয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
এ দিন দুপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির দাবিতে কাটোয়া থানায় স্মারকলিপি জমা দিতে যান কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা। তখনই ওই ছাত্রীর উপরে ‘অত্যাচারের’ খবর আসে। তার পরেই নয়াচরে মেয়েটির বাড়িতে যান বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবু। তিনি বলেন, “আমরা সবাই ওই পরিবারের পাশে আছি। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রোখার জন্য অভিযোগ দায়ের করা যে জরুরি, তা বুঝিয়েছি।” পুলিশের কাছেও দ্রুত অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
গত ৩ অগস্ট কাটোয়ার ইসলামপুর জিএনবি উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে চরসাহাপুর গ্রাম থেকে স্কুল যাওয়ার সময়ে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছিল। এ দিন সিপিএমের কাটোয়া জোনাল সম্পাদক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “ফের একই রকম ঘটনা ঘটল। এ রাজ্যে যে ছাত্রীদের কোনও নিরাপত্তা নেই, পরপর এমন ঘটনাতেই তা বোঝা যায়।”
এ দিন দুপুরে খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যান এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুব দাস, সিআই শচীন্দ্রনাথ পুড়িয়া ও কাটোয়া থানার ওসি সনৎ দাস। চরসাহাপুরের ওই ছাত্রীর বিবরণ শুনে অভিযুক্তের ছবি আঁকিয়েছিল সিআইডি। তা দেখে ঘটনার পরের দিনই পুলিশ এক যুবককে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, নয়াচর গ্রামের ছাত্রীটি তাদের জানিয়েছে, ওই যুবকের পরনে ছিল আকাশি রঙের জামা ও কালো প্যান্ট। এ ছাড়া সে অপরাধীর আর কোনও বিবরণ দিতে পারছে না। শুক্রবার রাতেই কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ছাত্রীটির ডাক্তারি পরীক্ষা হয়। |