ঠিকঠাক সংস্কার হয় না কখনওই। অবস্থা খুব খারাপ হলে তাপ্পি মেরে সামাল দেওয়া হয়। খানাখন্দে ভরা পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়কে প্রায়ই ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। শুক্রবার সকালে বেহাল রাস্তাই কেড়ে নিল আরও একটা প্রাণ। এমনই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
এ দিন পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়কে পিয়ারিগঞ্জের কাছে বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হয় এক মোটরবাইক আরোহী প্রণব মজুমদারের (২৮)। বাড়ি দুর্গাপুরের ইস্পাত নগরীর মহিস্কাপুর রোডে। বেহাল রাস্তার জন্যই এ দিনের দুর্ঘটনা ঘটেছে অভিযোগ তুলে রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন বাসিন্দারা। পরে পুলিশি মধ্যস্থতায় আধ ঘণ্টা পরে অবরোধ ওঠে। প্রসঙ্গত, ১৩ অগস্ট এই রাজ্য সড়কেই ধোবারুর কাছে ট্রাকের ধাক্কায় ইলামবাজারের বাসিন্দা মোটরবাইক আরোহী শুভাশিস ঘোষের (২৮) মৃত্যু হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকালে বাইকে চড়ে দুর্গাপুরের দিকে আসছিলেন প্রণববাবু। পিয়ারিগঞ্জের কাছে বেহাল রাস্তায় একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাঁকে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। পুলিশ জানিয়েছে, বাসটি সালার-আসানসোল রুটের। চালক ও খালাসি পলাতক। |
দুর্ঘটনার খবর পেয়েই ছুটে আসেন আশপাশের বাসিন্দারা। খবর যায় থানায়। রাজ্য সড়কের বেহাল দশার জন্যই ঘন ঘন এই রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটছে অভিযোগ তুলে বাসিন্দারা রাস্তা অবরোধ শুরু করেন। রাজ্য সড়কে যানজট হয়। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
দীর্ঘ দিন ধরেই পানাগড়-মোড়গ্রাম রাজ্য সড়কের বেহাল দশা। মাঝে মধ্যে তাপ্পি দেওয়া হয় ঠিকই, পরিস্থিত বদলায় না। বীরভূম ও বর্ধমান এবং উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম প্রধান যোগাযোগকারী রাস্তা এটি। আসানসোল, দুর্গাপুর, পুরুলিয়া-শিলিগুড়ি বাস চলাচল করে এই রাস্তা দিয়েই। বোলপুর থেকে কলকাতায় যাতায়াতকারী বাসগুলিও এই রাস্তা ব্যবহার করে থাকে। তার সঙ্গে দুর্গাপুর, আসানসোল, বাঁকুড়া থেকে বোলপুর, বহরমপুর, সিউড়িগামী বাস, প্রচুর মালবাহী ট্রাক, ব্যক্তিগত গাড়ি এবং মোটরবাইক তো আছেই। কিন্তু বর্ষায় গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তার অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ।
স্থানীয় বাসিন্দা পিয়ারিগঞ্জের চাঁদ পাঠকের দাবি, “বেহাল রাস্তার জন্য চালকেরা গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতে পারছেন না। তাই বার বার এমন দুর্ঘটনা ঘটছে।” বেলডাঙার বাসিন্দা মিঠুন কর্মকারের আশঙ্কা, “রাস্তাটি সারাই না করা হলে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়বে।”
রাস্তা সংস্কারের আর্জি জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলিও। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য তথা কাঁকসা জোনাল কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক বীরেশ্বর মণ্ডল বলেন, “এই রাজ্য সড়ক ইদানীং একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে গিয়েছে। যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।” প্রদেশ তৃণমূল সদস্য দেবদাস বক্সি বা কাঁকসা ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশা, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের বেহাল সড়কগুলি সারাইয়ে উদ্যোগী হয়েছেন। দ্রুত এই সড়কটিরও মেরামতি হবে।” গলসির বিধায়ক ফরওয়ার্ড ব্লকের সুনীল মণ্ডল অবশ্য জানান, এই রাজ্য সড়কটির সম্প্রসারণ ও সারাইয়ের কাজ শীঘ্র শুরু হবে বলে সরকারি তরফে আশ্বাস মিলেছে। |