তখন পদ্মার কত নামই না ছিল!
সর্বগ্রাসী, রাক্ষসী, মুখপুড়ি আরও কত কী। তারপর কেটে গিয়েছে এগারো বছর। আর এই কটা বছরে ‘অভিশাপ’ বদলে গিয়েছে ‘আশির্বাদে’। এক সময় যে পদ্মা বাড়ি, ঘর, জমি জায়গা সব গিলে খেয়েছে, আজ সেই নদীর সৌজন্যেই খেয়ে পড়ে বাঁচছে সীমান্তের পদ্মাপারের আটপৌরে মানুষগুলো। সেই সঙ্গে কাঁটাতারহীন সীমান্ত সুরক্ষার একটা গুরু দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে ঘোলা পদ্মা। হোগলবেড়িয়ার মধুগাড়ী, বাউসমারি, কাছারিপাড়া এলাকায় তাই সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে মানুষের জীবন, জীবিকা এমনকী নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও সে এখন বড় ভরসা।
১৯৯৭ থেকে ২০০১। পদ্মার ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে মধুগাড়ী, চেঁচানিয়া, কাছারিপাড়া ও বাউসমারির বিস্তীর্ন এলাকা। ভিটেহারা মানুষ ঘর বেঁধেছেন অন্যত্র। করিমপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ শঙ্কর মণ্ডলের সেই ভাঙনের স্মৃতি এখনও দিনের আলোর মত স্পষ্ট। শঙ্করবাবু বলেন, ‘‘ওই যেখানে জলটা পাক খাচ্ছে ঠিক ওখানেই ছিল আমাদের বাড়ি। ওইখানটাতে ছিল উঠোন, ধানের গোলা, তার ঠিক পাশেই ছিল একটা তুলসী মন্দির। এখনও স্পষ্ট মনে আছে।’’ |
পদ্মাপারের নরেশ মজুমদার, ইমরাজ মণ্ডলদের এমন কত স্মৃতি। ১৯৯৭ সাল থেকে টানা প্রায় পাঁচটা বছর গ্রামের আতঙ্কের নাম ছিল পদ্মা। দিনরাত তার তর্জন গর্জন আর ঝুপঝাপ বাড়ি ঘর ভাঙার শব্দ ওই ক’টা বছরে সব তছনছ করে দিয়েছে। আর এখন? সময়ের নিয়মে নদী তার আগ্রাসী চেহারা ছেড়ে পলি ফেলছে পাড়ে। চেনা গ্রাম গ্রাস করলেও মানুষজন ফের তার পাড়েই আবার ঘর বেঁধেছেন। নদী এ বার উল্টোমুখে ভাঙছে। গ্রামের হাসান আলি বলেন, “আপাতত বছর বিশেকের জন্য নিশ্চিৎ। এখন নদীর যত রোষ ও পাড়ে। তারপর হয়ত ফের এ দিক পানে চাইবে পদ্মা। তখন আবার আশীর্বাদের দিন শেষ!” অভিশাপের ধাক্কায় তখন হয়ত তাঁদের ফের ঠিকানা গোটাতে হবে। এখন অসময়ে সেচের জল থেকে মৎস্যজীবীদের পোয়াবারো হয়ে উঠেছে যে নদী, সেই তখন মুখ ফিরিয়ে নেবে। ফের পেশায়-রুজিতে টান পড়বে মানুষের। এই চেনা নিয়মই মেনে নিয়েছেন পলাশ মণ্ডল, পিন্টু মণ্ডল, আনসার মণ্ডলেরা। নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘বছর দশেক আগে হোগলবেড়িয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা পদ্মা ব্যাপকভাবে ভেঙেছিল। এখন সেই ভাঙন বন্ধ আছে ঠিকই তবে তার মানে এই নয় যে পদ্মা আবার ভাঙন শুরু করবে না। নদীর স্বাভাবিক নিয়মেই আবার ভাঙন শুরু হতেও পারে।’’ |