|
|
|
|
অগস্টেও নেই পর্যাপ্ত বৃষ্টি, সমস্যায় ধান চাষ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
অগস্ট মাস প্রায় শেষ, তবুও দেখা নেই পর্যাপ্ত বৃষ্টির। ফলে চলতি মরশুমে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে কৃষি দফতর। আর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও উৎপাদনে ঘাটতি থাকার সম্ভাবনা যে আছেই, একথাও জানাচ্ছেন তাঁরা। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতই যে ধান চাষে প্রধান বাধা তা জানিয়ে কৃষি দফতরের তথ্য আধিকারিক দুলাল দাস অধিকারী বলেন, “গত চার মাসের মধ্যে কেবল জুলাই মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে। বাকি সব ক্ষেত্রেই গড় বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের অর্ধেক। তাতেই ধান বোনার কাজ এগোতে পারেননি কৃষকেরা।”
কৃষি দফতর জানিয়েছে, নথি বলছে, মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয় ১৩৫ মিলিমিটার, কিন্তু চলতি বছরে হয়েছে ৫২.২ মিলিমিটার। জুন ও জুলাই মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ২৪৮.১ মিমি ও ৩১২.৭ মিমি। কিন্তু এবার তার পরিমাণ ১২৫.৯ ও ৩১৪.৯ মিমি। অগষ্ট মাসে সাধারনত বৃষ্টি হয় ৩১৪.৬ মিমি। সেখানে এ বছর এখনও পর্যন্ত অগষ্ট মাসে বৃষ্টি হয়েছে ১৭৫ মিলিমিটার মতো। ফলে বিগত কয়েক বছরে এই সময়ে ৮৬ শতাংশেরও বেশি ধান রোয়ার কাজ হয়ে গেলেও চলতি বছরে মাত্র ৬৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। বেশিরভাগ জমিই এখনও পতিত রয়ে গিয়েছে। তবে অগষ্ট মাসের শেষ পর্যন্ত যদি ভারি বৃষ্টিপাত হয় ও চাষিরা ধান রোয়ার কাজ শেষ করতে পারেন তাহলেও কিছুটা রেহাই মিলবে বলেও কৃষি দফতর জানিয়েছে। সেক্ষেত্রে ফলনও খুব বেশি কমবে না। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে কৃষি আধিকারিকেরা জানান, কয়েক বছর আগেও ১৫ অগষ্টের মধ্যেই ধান রোয়ার কাজ শেষ হয়ে যেত। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে সেপ্টেম্বর মাসেও ধান রোয়ার কাজ করেন চাষিরা। |
|
জলের অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে বীজতলা। |
কিন্তু তাতে ফলন ভাল হয় না। তাহলে কেন চাষিরা এত দেরি করে ধান বোনেন? কৃষি দফতরের দাবি, চাষি কিছুতেই জমি পতিত রাখতে রাজি নন। তাই খরচ হলেও ধান রোয়ার কাজ করেন তাঁরা। এক চাষি রাজেশ রায় বলেন, “বীজতলা ফেলার জন্য খরচ হয়েই গিয়েছে। আগে থেকে তো জানতাম না যে এমন খামখেয়ালী বর্ষা হবে। তাই চাষের জন্য সার কিনেও মজুত করে রেখেছি। এখন বর্ষায় বাড়িতে সার ফেলে রাখলে তা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই চাষ করে নিই। যদি কিছু লাভ হয়। তবে খড় ছাড়া তেমন কিছুই মেলে না। আবার কিছু ক্ষেত্রে খরচও পুষিয়েও যায়।” কৃষি দফতর জানিয়েছে, চাষের খরচ কিছুটা পোষালেও হেক্টর প্রতি যে সাধারণ উৎপাদন, তা কিছুতেই পাওয়া যায় না। সাধারণ ভাবে পশ্চিম মেদিনীপুরে হেক্টর প্রতি আমন ধানের ফলন হয় ৩৮-৪০ কুইন্টাল। আউস ধানের হেক্টর প্রতি ফলন ৩৫-৩৬ কুইন্টাল। কিন্তু ধান রোয়ার কাজ দেরি হলেই ফলন কমে দাঁড়ায় ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশে। জেলায় সাধারণত আউস ধানের চাষ হয় ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এবার তা অবশ্য প্রায় লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। ইতিমধ্যে চাষ হয়েছে ৪২ হাজার ৪০০ হেক্টর। আমন ধানের চাষ হয় সাধারণত সাড়ে ৫ লক্ষ হেক্টর। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ৩ লক্ষ হেক্টর জমিতে ধান রোয়া হয়েছে। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। বৃষ্টির পরিমাণ না বাড়লে এবং সব জমিতে চাষ না করা গেলে বেশ সমস্যায় পড়তে হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। সেক্ষেত্রে বেড়ে যাবে ধান ও চালের দামও। ধান চালের দাম বাড়লেই বাড়বে অন্যান্য সামগ্রীর দামও। যার প্রভাব পড়বে সাধারণ কৃষক পরিবারেও। কৃষি দফতর অবশ্য জমি পতিত রাখার বিপক্ষে। তাই ফলন কম হওয়ার বিষয়টিকে সামনে রেখেই কৃষকদের তাঁরা বিকল্প চাষের পরামর্শ দিচ্ছেন। ভুট্টা, তৈলবীজ, বাদাম প্রভৃতি চাষ করতে বলছেন। কিন্তু চাষিরা তা শুনবেন নাকি পুরোনো ধারণা নিয়েই বৃষ্টির অপেক্ষায় সেপ্টেম্বর মাসের শেষ পর্যন্তও ধান রুইবেন- সেটাই দেখার। |
|
|
|
|
|