|
|
|
|
১২ জন অটোয়, দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘাটালে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঘাটাল |
অটোয় চার জনের বেশি যাত্রী তোলা নিয়ে বিভিন্ন সময়েই হুঁশিয়ারি দিয়েছে সরকার। সম্প্রতি কলকাতার সিঁথি-কুঠিঘাট রুটে অদ্রিকা ঘোষাল নামে বছর চারেকের এক শিশুকন্যা তার মায়ের কোল থেকে পড়ে যাওয়ার পরেও অটো চালক গাড়ি না থামানোর ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায়। তারপরে অটোর দৌরাত্ম্য রুখতে ফের পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র মঙ্গলবার একই কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তারপরেও অন্তত মফস্সলে অটো-রাজ যে বন্ধ হয়নি, তার প্রমাণ মিলল বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল-রানিচক রুটে। চার জনের জায়গায় ওই অটোতে তোলা হয়েছিল বারো জনকে। সেই অটো উল্টে গিয়ে এক ব্যক্তি মারা গিয়েছেন। জখম হয়েছেন ১১ জন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সামনে-পিছনে মিলিয়ে চালক ছাড়া পাঁচ জন যাত্রী ওই অটোতে বসেছিলেন। বাকি ৭ জন কোনও রকমে পা রেখে ঝুলছিলেন। যাত্রীদের অধিকাংশই ছিলেন মহিলা। তবুও বেপরোয়া ভাবেই গতি বাড়িয়েছিলেন চালক। ঘাটাল থেকে রানিচক যাওয়ার পথে মনোহরপুরের কাছে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারান। অটোটি উল্টে যায়। ছিটকে পড়েন যাত্রীরা। অটোর নীচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান অরুণ মান্না (৩৯)। পেশায় কৃষক অরুণের বাড়ি দাসপুর থানার জোতকানুরামগড়ে। আহত ১১ যাত্রীকে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ৭ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হলেও বাকি চার জন এখনও সেখানেই চিকিৎসাধীন। ঘটনার পরই অটো রেখে পালান চালক। তাঁর বিরুদ্ধে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর মামলা শুরু করেছে পুলিশ।
অদ্রিকার দুর্ঘটনার পরে অটো-দৌরাত্ম্যে রাশ টানতে পরিবহণমন্ত্রী বিভিন্ন অটো ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মঙ্গলবারই সরকারি ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়, অটোয় চার জনের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না। পরদিনই ঘাটালের এই ঘটনা। তবে শুধু ঘাটাল নয়, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়েই বিভিন্ন রুটে অটো ও ট্রেকারে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ নিত্যকার ঘটনা। অটো-ট্রেকারে ঝুলেঝুলে যাতায়াত, এমনকী ট্রেকারের মাথায় চাপতেও অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন গাঁ-গঞ্জের মানুষজন। সরকারি নজরদারি নেই বলে তাঁদের দাবি। কিন্তু যাত্রীরাই বা কেন এমন বিপজ্জনক ভাবে যাতায়াত করেন? স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, বহু রুটেই বাস কম। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরে অটো বা ট্রেকার মেলে। গন্তব্যে পৌঁছনোর তাড়ায় অনেকেই বাধ্য হন ঝুঁকি নিয়ে তাতে চাপতে।
এ দিনের দুর্ঘটনার পর অবশ্য স্থানীয় মানুষজনের অভিযোগ, ঘাটাল-রানিচক রুটে প্রতিদিন গড়ে যে ২৫টি অটো-ট্রেকার চলে, তার আধিকাংশেরই সরকারি পারমিট নেই। নজরদারিও নেই। ফলে বেপরোয়া ভাবেই চলাচল করে অটো-ট্রেকারগুলি। ঘাটালের মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারী অবশ্য বলেন, “ঘাটাল মহকুমার সব রুটেই অটো এবং ট্রেকারের বৈধ কাগজপত্র দেখা হবে। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ রুখতে নজরদারিও চলবে।”
পরিবহণমন্ত্রী বলেছেন, নিয়ম লঙ্ঘন করলে অটো চালকের পারমিট বাজেয়াপ্ত হবে। দোষী চালক ছ’মাস বসে থাকবেন। কিন্তু পুলিশ অটো চালকের নামই জানাতে পারেনি। ঘটনার পর থেকেই তিনি পলাতক। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে স্বপন সামন্ত নামে ওই চালক কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি’র সমর্থক। আইএনটিইউ সি’র ঘাটাল ব্লক সভাপতি গৌতম হাজরা বলেন, “এ দিনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে ওই রাস্তাও খারাপ। যাকে চালকেরা অতিরিক্ত যাত্রী না তোলেন, তার জন্য প্রচার চালানো হবে।” |
|
|
|
|
|