লোকটাক লেকে পাখি শুমারি, কমছে পরিযায়ীদের আনাগোনা
ণিপুরের লোকটার সরোবরে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা উল্লেখ যোগ্যভাবে হ্রাস পেলেও পাখি শুমারিতে অন্তত তিনটি বিপন্ন প্রজাতির পাখির সন্ধান মিলেছে। এই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে লোকটাক সরোবরে পাখি শুমারি করা হয়। সরকারের আশা, অক্টোবরে সাঙ্গাই হরিণের শুমারিও শুরু করা যাবে।
২৪৬ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত লোকটাক সরোবর মাছের মতোই, পাখিদের জন্যও বিখ্যাত ছিল। বিখ্যাত ছিল সাঙ্গাই পরিণের জন্যও। তবে গত এক দশকে, সরোবরে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে। সরোবরের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য, বৃত্তাকার তৃণভূমি বা ‘ফুমদি’ও শেষ হওয়ার মুখে। এর আগে বিভিন্ন পশুপ্রেমী সংস্থা পাখিদের নিয়ে সমীক্ষা চালালেও সরকারি উদ্যোগে লোকটাকে পাখি শুমারি এই প্রথম। সরোবরে পরিযায়ী ও স্থানীয় পাখির গণনার জন্য এই বছর রাজ্য বনবিভাগ ‘বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি’-র সঙ্গে জোট বেঁধে শুমারি চালায়। শুমারির রিপোর্ট তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। সেখানেই ওই তিনটি বিপন্ন প্রজাতির পাখির উল্লেখ রয়েছে। বন দফতর সূত্রে খবর, সরোবরের জল ও ডাঙ্গা মিলিয়ে মোট ৫১টি প্রজাতির পাখির সন্ধান মিলেছে। যাদের মধ্যে ২২টি পরিযায়ী প্রজাতি। পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে ফেরিগুনাস পোর্চাড ও ডার্টার প্রায় বিপন্ন প্রজাতিভুক্ত। এ ছাড়া প্রথম তফশিলভুক্ত ‘লার্জ হুইসলিং ডাক’-এরও দেখা মিলেছে। মোট নথিভুক্ত পাখির সংখ্যা ২৩,৫৬১টি। রাজ্যের মুখ্য বনপাল অনিল কুমার জানান, এই প্রথম, বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি মেনে সরোবরে পাখি শুমারি হল। পশ্চিম ইম্ফল, বিষ্ণুপুর ও থৌবাল জেলাজুড়ে মোট ৪০টি এলাকা চিহ্নিত করে পাখিদের উপরে নজর রাখা হয়েছিল। সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, ইউনান প্রদেশের পাখির সন্ধান লোকটাকে মিলেছে। উল্লেখ্য, এর আগে লোকটাকে ১২৭ প্রজাতির পাখি দেখা যেত। বিভিন্ন নেতিবাচক কারণের প্রভাবে সংখ্যাটি এখন অর্ধেকরও কম। ‘জেনিম’-এর সভাপতি আর কে চিরঞ্জিৎ বলেন, “জলের আশপাশে বসতি বৃদ্ধি, সরকারি ঔদাসীন্য ও দূষণ বৃদ্ধির ফলেই পরিযায়ী পাখিরা আজকাল লোকটাক এড়িয়ে চলছে।”
মণিপুরে লোকটাক লেক। —নিজস্ব চিত্র
তবে বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি প্রতি বছর শীতকালে পাখি শুমারি চালানোর জন্য মণিপুর সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে। রাজ্য সরকার প্রস্তাবটি বিবেচনা করছে। পাশাপাশি, বিপন্ন ‘সাঙ্গাই’ হরিণের শুমারি প্রতি বছর করার ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা চলছে। ২০০৩ সালে শেষবার সাঙ্গাই শুমারি হয়েছিল। তখন সাঙ্গাইয়ের সংখ্যা ছিল ১৮০। এরপর লোকটাক ও কেইবুল লামজাও জঙ্গিদের ঘাঁটিতে পরিণত হওয়ায় শুমারি বন্ধ হয়ে যায়। গত দু’বছরে লোকটাকে সেনাবাহিনী ও আধা সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে জঙ্গিঘাঁটি নির্মূল করেছে। বনবিভাগের আশা, এ বছর অক্টোবর মাসে সাঙ্গাই হরিণের গণনার কাজ শুরু হতে পারে।
মণিপুরের প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ কোনও না কোনও ভাবে লোকটাকের উপরে নির্ভরশীল। প্রায় তিরিশটি নদী বা জলধারা থেকে লোকটাকে জল আসে। তবে সরোবরের জল বের হওয়ার রাস্তা একটিই, ‘ইথাই বাঁধ’। অবৈজ্ঞানিক নগরায়ন, কারখানা তৈরি ও অরণ্য ধ্বংসের ফলে নামবোলের মতো দূষিত নদী ও অন্যান্য নালা বেয়ে শহরের সব দূষণ, বর্জ্য, প্লাস্টিক ও পলি জলে এসে মিশছে। পলি জমে জলের গভীরতা কমছে। বর্জ্য ও রাসায়নিক মিশে জলের প্রকৃতিতে পরিবর্তন আনছে। মৎস্যচাষীরাও জলে নানা কীটনাশক মেশাচ্ছে। ফলে মাছ ও জলজ পোকা কমছে। কমছে পাখির খাদ্যও।
সরোবরে পদ্মবন বা লিলি এখন উধাও। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই সরকারের তরফে, লাভজনক সিলভার কার্প, গ্রাস কার্পের মতো মাছ লোকটাকের জলে চাষ করা হচ্ছে। ফলে বাস্তুতন্ত্রে প্রভাব পড়ছে। আজকাল লোকটাকের পরিচিত চান্না, গামু, গারিল, পাংবা, থারাকের মতো মাছ দেখাই যায় না। উধাও, বাদামি কাক বা সিরি পাখিও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.