ইচ্ছেডানা-র অনুষ্ঠান
মফস্সলি জলপাইগুড়ি থেকে মেট্রোপলিস মুম্বই বা ইলাহাবাদ কত দূর? জানে তন্দ্রা, অর্পিতা, রিমা, জবা, সুতপা, মৈত্রেয়ীরা। কেবল আকাশকুসুম কল্পনাই নয়, ‘ইচ্ছেডানা’-য় ভর করে মুক্তিও খোঁজে ওরা। নাটক তাদের নিয়ে এসেছে কলকাতা, ইলাহাবাদ, মুম্বইতে। জীবনযুদ্ধের অবকাশে নিজেদের কথা বলার পরিসর তৈরি করেছে ‘ইচ্ছেডানা’। কী পরিবারে, কী সমাজেমেয়েদের প্রতিনিয়ত যে বিচিত্র লড়াইয়ের সম্মুখীন হতে হয়, সেই সত্যটাকেই সামনে নিয়ে আসে ‘ইচ্ছেডানা’। তাদের প্রযোজনায় ‘আমার মণিপুরের মা’-তে জওয়ানদের দ্বারা ধর্ষিতা মনোরমা, ‘গঙ্গাস্নান’-এর যৌন অসুখে আক্রান্ত বারবনিতা ফুলকি, ‘কথামানবীর ভাষ্য’-তে পুরুলিয়ার নাচনিদের বিচিত্র জীবনগাথা বা ‘শ্যাওলা’-তে বোবাকালা পরিচারিকা ধর্ষিতা লক্ষ্মী অথবা স্বামী-শাশুড়ি-ননদ দ্বারা অত্যাচারিত গৃহবধূ রিমা এই কথাগুলিই মনে করিয়ে দেয়। রবীন্দ্রকাব্যে নারীর অবস্থান এবং সেখান থেকে উত্তরণের কথা নিহিত থাকে নাট্য-কোলাজ ‘টুকরো ফুলের গাঁথা মালা’-য়। দেখতে দেখতে দেড় বছরে পা দিল নাট্যদল ‘ইচ্ছেডানা’।
ছবি ও লেখা: অনিতা দত্ত
নির্দেশনা থেকে মঞ্চসজ্জা, মিউজিক থেকে মেকআপ ও আরও যাবতীয় খুঁটিনাটি সামলায় যে মেয়েরা, তাদের কেউ সেলসগার্ল, কেউ কলেজছাত্রী, কেউ বা কাজের মাসি কিংবা স্কুলশিক্ষিকা, কেউ বা নিছকই গৃহবধূ। ‘ইচ্ছেডানা’ প্রযোজিত নাটকগুলির সামগ্রিক পরিকল্পনা ও রূপায়ণ ঘটে এই মেয়েদের দ্বারাই। সেই বৃত্তে ঝিলিক দিয়ে ওঠে আলো অন্ধকার, ভাল লাগা মন্দ লাগাজেগে ওঠে তাদের স্বপ্ন, সাধনা, প্রত্যয়, প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির কথা। পথ চলা শুরু নাট্য-কোলাজ ‘টুকরো ফুলে গাঁথা মালা দিয়ে’। রাঁধার পরে খাওয়া আবার খাওয়ার পরে রাঁধার অভ্যস্ত জীবন থেকে বেরিয়ে এসে অন্য আর এক ভুবনের খোঁজে ‘টুকরো ফুলের গাঁথা মালা’। সুবোধ সরকারের ‘মণিপুরের মা’ কবিতা অবলম্বনে নাট্যরূপ ‘আমার মণিপুরের মা’ মঞ্চস্থ হল এমন প্রযোজনার মাসখানেকের মাথায়। একে একে মঞ্চস্থ হয় সুচিত্রা ভট্টাচার্যের গল্প ‘অবগাহন’ অবলম্বনে ‘গঙ্গাস্নান’, আনন্দবাজার পত্রিকার একটি প্রতিবেদনই রূপ নিল ‘কথামানবীর ভাষ্য’-তে। সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ এল অজস্র পুরস্কার। দলের জবা শর্মা জানালেন, “আমাদের জীবনে অজস্র অসম্মান আর অবহেলার শিকার হতে হয়। সেই কথাগুলিই আমরা তুলে ধরি। সেটা নাটক নয়, রূঢ় বাস্তব।” ইচ্ছেডানা-র হাত ধরে নিজেদের মেলে ধরেছেন তাঁরা।

উত্তরবঙ্গ বিশেষজ্ঞ
ছবি ও লেখা সমিত ঘোষ।
কিছু মানুষ নিজের প্রতিভা আর জনপ্রিয়তায় ক্রমশ ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হন। তখন সেই ব্যক্তির নামটি প্রতিষ্ঠানের নামের মতোই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। আসলে প্রতিভা ও মনন যদি সৃজনের অভিমুখে বেগবান হয়, তা হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অতি ব্যস্ত শীর্ষস্থানীয় অধ্যাপক পারেন ভারী ভারী বিষয় নিয়ে ১৬ হাজারেরও বেশি পৃষ্ঠা লিখেও কলম ধরে থাকতে। তিনি আর কেউ নন, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক ড. আনন্দগোপাল ঘোষ। জন্ম ও-পার বাংলার পাবনা জেলায়। পড়াশোনা শুরু আতাইকুলা হাইস্কুলে। জলপাইগুড়ির আনন্দচন্দ্র কলেজ থেকে ইতিহাসে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৭৮ সালে ‘ইকনমিক হিস্ট্রি অব নর্থ বেঙ্গল’ বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি পান। কর্মজীবন শুরু কোচবিহারের এ বি এন শীল কলেজে। এর পর উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে যোগ দেন। লেখালেখি শুরু কলেজজীবনেযা আটের দশকে নিবিড় চর্চায় পরিণত। বর্তমানে ড. ঘোষ ভারত সরকারের জাতীয় মহাফেজখানার সদস্য, ওয়েস্ট বেঙ্গল কলেজ সার্ভিস কমিশনের সদস্য, রাজ্যের হেরিটেজ কমিশনের উত্তরবঙ্গ নোডাল সেন্টারের অন্যতম প্রতিনিধিস্থানীয় ব্যক্তিত্ব এবং এ ছাড়াও অগুন্তি প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা মণ্ডলীর প্রধান। অজস্র লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গেও তাঁর আত্মিক সম্পর্ক। জলপাইগুড়ির বাসিন্দা হলেও তাঁর বিচরণ সমগ্র উত্তরবঙ্গ জুড়ে এবং তিনি উত্তরবঙ্গ বিশেষজ্ঞ হিসেবেই সবিশেষ পরিচিত। নিজস্ব ব্যক্তিত্বের আলোকে তাঁর নাম আজ উত্তরবঙ্গের জনমানসে সু-মুদ্রিত। বিশিষ্ট এই গবেষক, প্রাবন্ধিক ও ইতিহাসবিদের ব্যক্তিগত সংগ্রহে রয়েছে প্রচুর মহার্ঘ গ্রন্থ। নিজের লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ১০টিরও বেশি। সম্প্রতি প্রকাশিত হল ওঁর ‘উত্তরবঙ্গে রবীন্দ্রচর্চা’। এ ছাড়া প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে আরও কয়েকটি গ্রন্থ। ইতিমধ্যেই ড. ঘোষ ঐতিহ্যবাহী ‘সাহিত্যসেতু’-সহ একাধিক পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত। তিনি উত্তরের ভূমিপুত্র, একক ও অদ্বিতীয় সত্তা এবং উত্তরবঙ্গের গর্বএ-ই তাঁর বড় পরিচয়!

রমণী বর্মার কালবৈশাখী
ছবি ও লেখা তীর্থঙ্কর মণ্ডল।
দিনহাটার বড় শৌলমারি গ্রামের বাসিন্দা রমণীমোহন বর্মা দিনহাটা তথা উত্তরের লেখালেখির জগতে এক বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। নির্ভীক নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার নেশা থেকেই জন্ম নিয়েছে তাঁর পাক্ষিক ‘কালবৈশাখী’ পত্রিকা আর আপাতত ‘কালবৈশাখী’- কে ঘিরেই তাঁর যাবতীয় স্বপ্ন। দারিদ্র তাঁকে হার মানাতে পারেনি। সত্তরের দশকে তাঁর লেখালেখি শুরু হলেও ১৯৮০ সালে তাঁর এই পত্রিকা রেজিস্ট্রেশন পায়। তার পর থেকে এই সাহিত্যের এই নেশাকেই তিনি পেশা করে নিয়েছেন। ফলত উত্তরের এই প্রত্যন্ত গ্রামে থেকেও একটি পাক্ষিক পত্রিকাকে নির্ভর করেই জীবনযাপনের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন আজও একই উদ্যমে। তাঁর এই পত্রিকা জন্ম দিয়েছে বহু কৃতী লেখকের। তা ছাড়াও বয়সে প্রবীণ রমণীবাবুর এই কর্মোদ্যম ও লেখালেখির প্রেরণা ছড়িয়ে পড়ছে নবীন প্রজন্মের শিরায় শিরায়।

পেশা আর নেশা গাড়ি ও ক্যামেরা
ছবি ও লেখা সুদীপ দত্ত।
রামনাথ রায়ের পেশা গাড়ি চালানো। তাঁর গাড়িতে পেশাদার কয়েক জন ফটোগ্রাফার বহু বার ডুয়ার্স ভ্রমণ করেছেন। এঁরা সকলেই ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার। রামনাথের ছবি তোলার নেশার উৎস এটাই। ওঁদের সঙ্গে থেকে শিখেছেন কী ভাবে ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি করতে হয়। শিখেছেন আই এস ও, শাটার স্পিড, অ্যাপারচার আর টেলি-ফটো লেন্স। নিজের ক্যামেরা নেই, অন্যের ক্যামেরা নিয়ে ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফিতে নেমে পড়েছেন রামনাথ। অন্যের ক্যামেরা দিয়েই তুলে ফেলেছেন ষাটেরও বেশি ছবি। কলকাতার একটি প্রদর্শনীতে তাঁর দুটি ছবি মনোনীত হয়েছে। ছবি পাঠিয়েছেন স্থানীয় একটি প্রদর্শনীতেও। এখন তারই নির্বাচনের প্রতীক্ষা। জলপাইগুড়ির ১ নম্বর সুভাষনগরের বাসিন্দা রামনাথের আক্ষেপক্যামেরার ব্যবহার এখনও পুরোপুরি শেখা হল না, নিজের একটা ক্যামেরা থাকলে...

উত্তরের বনফুল
ছবি ও লেখা শুভাশিস দাশ
পেশাগত কারণে যে-হাতে ছুরিকাঁচি ওঠে, সেই হাত দিয়েই কলম ধরে সৃষ্টি করেন ছোটগল্প। ছোটবেলা থেকেই লেখালিখির প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর। প্রত্যন্ত মহকুমা শহর দিনহাটায় বসে যিনি চিকিৎসা-পেশায় থেকেও অনবরত সাহিত্যসৃষ্টি করছেন, তাঁর নাম উজ্জ্বল আচার্য। ইতিমধ্যেই চল্লিশ ছুঁইছুঁই উজ্জ্বল আচার্যের দশখানি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। যার মধ্যে ছোটগল্পের বই চারখানা। চিকিৎসা সংক্রান্ত বইগুলোতে মানুষের অসুখের কথা এবং তার প্রতিকার সম্পর্কে জ্ঞাতব্যকে সহজ ভাবে ব্যক্ত করেছেন। উজ্জলের ছোটগল্প উত্তরবঙ্গ তো বটেই, কলকাতার অনেক পত্রপত্রিকায়ও প্রকাশ পেয়েছে। কিশোর বয়স থেকেই লেখালিখির ঝোঁক ছিল। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ‘কিশোর জ্ঞানবিজ্ঞান’-এ প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। কলকাতায় ডাক্তারি পড়ার সময় একবার সত্যজিৎ রায়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন উজ্জ্বল। সে স্মৃতি আজও উজ্জ্বল তাঁর মনে। লেখালিখির পাশাপাশি চিকিৎসা-বিষয়ক দুটি টেলিফিল্ম-ও তিনি করেছেন, যা এতদঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। বাবা-মা ও দাদার প্রেরণা তো আছেই, এ ছাড়া প্রতিনিয়ত উৎসাহ জুগিয়েছেন প্রয়াত সাহিত্যিক অলোক গঙ্গোপাধ্যায়। চিকিৎসা পেশার সঙ্গে যুক্ত থেকেও সাহিত্যসৃষ্টির জন্য অনেকেই উজ্জ্বল আচার্যকে ‘উত্তরের বনফুল’ বলে থাকেন। কেননা বলা বাহুল্যই, বাংলা সাহিত্যের অমর গদ্যশিল্পী বনফুল (বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়)-ও যে ছিলেন পেশায় ডাক্তারই! আপাতত উত্তরের বনফুলেরও গন্ধ ছড়াচ্ছে সেই একই পথে!


উত্তরের কড়চা
এবিপি প্রাঃ লিমিটেড,
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড
শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.