পাসপোর্টের জন্য পুলিশি ছাড়পত্র পেতে গুজরাতে লাগে ১৪ দিন, বিহারে ২৮ দিন, কেরলে ৩৫ দিন আর পশ্চিমবঙ্গে গড়ে ১২০ দিন! কোনও কোনও জেলার ক্ষেত্রে লেগে যায় ১৮০ দিনও। অবিলম্বে এই সময় কমিয়ে ফেলার জন্য রাজ্য পুলিশের ডিজি-র কাছে অনুরোধ করল বিদেশ মন্ত্রক।
কলকাতায় এসে বিদেশ মন্ত্রকের মুখ্য পাসপোর্ট অফিসার মুক্তেশ পরদেশী জানিয়ে গেলেন, পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ২৮ দিনের মধ্যে পুলিশকে ছাড়পত্র জমা দিতে হবে, সম্প্রতি বিহারে এমন আইন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কনস্টেবল সেই সময়ের মধ্যে ছাড়পত্র জমা না দিতে পারলে তাঁর জরিমানা হবে। একই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে দিল্লি ও উত্তরাখণ্ডেও। মুক্তেশবাবু জানান, পশ্চিমবঙ্গেও এই ব্যবস্থা চালুর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এ দিন দেখা করেন মুক্তেশবাবু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পাসপোর্ট দফতরের প্রিন্সিপাল কনসালট্যান্ট গোলক সিমলি এবং রাজ্যের পাসপোর্ট অফিসার আর শিবকুমার।
নতুন পাসপোর্ট পেতে গেলে পুলিশের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক। পুলিশ আবেদনকারীর বাড়ি গিয়ে খতিয়ে দেখে, তাঁর নাম-ঠিকানা সঠিক কি না, তিনি ভারতীয় কি না এবং কোনও অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে কখনও জড়িয়ে পড়েছেন কি না। এই ছাড়পত্র না পেলে পাসপোর্টই দেওয়া হয় না। পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর সময়েও যদি কেউ ঠিকানা বদল করেন, তা হলেও পুলিশের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক। অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রেই এই ছাড়পত্র পেতে আবেদনকারীকে নানা ভাবে হেনস্থা হতে হয়।
পাসপোর্টের আবেদন করার নতুন ব্যবস্থা নিয়ে মূলত দুটি অভিযোগ উঠছে। এক, আবেদনকারীরা পিএসকে (পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র)-তে সাক্ষাৎকারের সময় চেয়েও পাচ্ছেন না। দুই, পাসপোর্ট ওয়েবসাইটে নির্ধারিত বিকেল চারটের সময়ে ওই সাক্ষাৎকারের জন্য ঢোকার চেষ্টা করেও অনেকে বিফল হচ্ছেন। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে টিসিএস-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট তন্ময় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, তাঁদের ২৪ ঘণ্টার অভিযোগ কেন্দ্রে এই সব অভিযোগ জানিয়ে বহু ফোন-কল আসছে। তিনি বলেন, “কলকাতার পিএসকে-তে রোজ এক হাজার আবেদনকারীকে সাক্ষাৎকারের সময় দেওয়া হয়। কিন্তু, চারটের পর শুরু হয়ে সেই সাক্ষাৎকারের কোটা শেষ হতে এক মিনিটেরও কম সময় লাগছে।”
শিবকুমার জানিয়েছেন, প্রধানত পাসপোর্ট অফিসারের অভাবেই এই অসুবিধা হচ্ছে। এক জন অফিসার প্রতি দিন ১০০-র বেশি পাসপোর্ট পরীক্ষা করেন। এখন সাত জন রয়েছেন। আরও তিন জন এলে প্রায় ১৫০০ আবেদনকারীকে সাক্ষাৎকার দেওয়া যাবে। মুক্তেশবাবু জানিয়েছেন, খুব তাড়াতাড়ি কলকাতার জন্য দু’জন অফিসার পাঠানো হচ্ছে। অফিসারেরা যাতে দিনে আরও বেশি পাসপোর্ট পরীক্ষা করেন, তার জন্য অতিরিক্ত বোনাসও ঘোষণা করা হয়েছে।
কলকাতা ছাড়া এখন বহরমপুরেও পাসপোর্ট কেন্দ্রে আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে। মুক্তেশবাবুর অভিযোগ, সেখানে ২০০টি আবেদন জমা নেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও দিনে গড়ে ১৪০টি আবেদন জমা পড়ে। উত্তরবঙ্গের মানুষদের ওই কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, কলকাতার উপর থেকে চাপ কমাতে শিলিগুড়ি ও খড়্গপুরেও পাসপোর্ট ‘লঘু কেন্দ্র’ খোলা হচ্ছে। টিসিএস-এর সাহায্য না নিয়ে এই দুই কেন্দ্রে সমস্ত কাজ বিদেশ মন্ত্রকের কর্মী-অফিসারদের দিয়েই করানো হবে। কবে শিলিগুড়ির কেন্দ্র খোলা হবে, তা অবশ্য নিশ্চিত করে বলতে পারেননি আধিকারিকেরা। যেখানে কর্মী-অফিসারের অভাবে কলকাতা কেন্দ্র চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে, সেখানে কী ভাবে আর একটি নতুন কেন্দ্র খোলা হবে, তারও সদুত্তর মেলেনি।
|
সব জেলা সদরে প্রশিক্ষিত ডুবুরি
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বন্যায় ভেসে যাওয়াই হোক বা কুয়োয় পড়ে যাওয়া, সঙ্গে সঙ্গে প্রশিক্ষিত ডুবুরি পেতে হিমশিম খেতে হয় প্রশাসনকে। এই সমস্যা সমাধানে রাজ্যের প্রতিটি জেলা সদরে অন্তত চার জন ডুবুরি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতর। ওই দফতরের মন্ত্রী জাভেদ খান মঙ্গলবার জানান, আপাতত ১১টি বন্যাপ্রবণ জেলায় ডুবুরি মোতায়েন করার কাজ শুরু হচ্ছে। তবে ওই ডুবুরিরা সরকারি চাকরি পাবেন না। সরকার তাঁদের জন্য মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করবে। বেশ কিছু জেলায় প্রশিক্ষিত ডুবুরি রাখার জন্য এর মধ্যেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। রাজ্যের যে-সব প্রতিষ্ঠান ডুবুরিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে, তাদের সঙ্গে আলোচনাও শুরু হয়েছে সরকারের। |