চলতি বছরে রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষিনিবাসে রেকর্ড সংখ্যক পরিযায়ী পাখি এসেছে বলে মনে করছে বন দফতর। ইতিমধ্যেই পাখি দেখতে উপচে পড়ছে ভিড়। রায়গঞ্জের বিভাগীয় বনাধিকারিক অপূর্ব সেন বলেন, “পাখি গণনা শেষ হলেই সঠিক তথ্য জানা যাবে। রেকর্ড সংখ্যক পাখি এসেছে বলে মনে হচ্ছে।” রায়গঞ্জের পরিবেশ প্রেমী সংগঠন হিমালয়ান মাউন্টেনার্স অ্যান্ড ট্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি অতীন্দ্রনাথ বক্সি বলেন, গত দুবছরের তুলনায় এবছর পক্ষিনিবাসে অনেক বেশি পরিমাণে পরিযায়ী পাখি এসেছে। সংগঠনের তরফে পড়ুয়াদের নিয়ে পক্ষিনিবাস চত্বরে নিয়মিত প্রকৃতি পাঠ শিবির ও পরিযায়ী পরিচিতি শিবির চালানো হচ্ছে। বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, প্রতি বছর জুন-জুলাই মাস নাগাদ ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্য সহ বিভিন্ন দেশ থেকে ওপেন বিল স্টর্ক, নাইট হেরণ, করমোন্যান্ট, ইগ্রেট সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি কুলিক পক্ষিনিবাসে আসে। প্রজননের পর জানুয়ারি-ফ্রেব্রুয়ারি মাস নাগাদ তারা ফেরে। পরিযায়ীদের দেখতে প্রতি বছর রাজ্যের বিভিন্ন জেলা সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকেও বহু পর্যটক পক্ষিনিবাসে ভিড় জমান। |
পরিযায়ী পাখিরা পক্ষিনিবাসের কয়েকশো বড় বড় গাছে বাসা বেঁধে আশ্রয় নেওয়ার পর সেখানে ডিম পাড়ে। ১৯৮৪ সাল থেকে প্রতি বছরই জানুয়ারি মাস নাগাদ দফতরের তরফে পাখি গণনার কাজ করা হয়। বন দফতরের হিসেব অনুযায়ী, ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পক্ষিনিবাসে প্রতি বছর গড়ে ৬০ হাজারেরও বেশি বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এসেছিল। ২০০৭ সালে ৭১ হাজার ৬০৮, ২০০৮ সালে ৯১ হাজার ৫৪০ টি পরিযায়ী পাখি পক্ষিনিবাসে এসেছিল। ২০০৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লক্ষ ১৪ হাজার ২৪ টিতে। তবে ২০০৯-এর তুলনায় ২০১০ ও ২০১১ সালে পক্ষিনিবাসে আসা পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৫০ হাজার ও ৬৮ হাজারে। পরিযায়ী পাখি গণনার কাজে নামার আগে বন দফতরের প্রাথমিক ধারণা, এবছর প্রায় দেড় লক্ষ পরিযায়ী পাখি এসেছে। তবে নাইট হেরন, ইগ্রেট ও করমোন্যান্টের চাইতে এবছর ওপেন বিল স্টর্ক প্রজাতির পরিযায়ীদেরই পক্ষিনিবাসে বেশি দেখা যাচ্ছে। বনকর্মী নারায়ণ মণ্ডল বলেন, “গত বছর পক্ষিনিবাসে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৬৮ হাজার পরিযায়ী পাখি এসেছিল। তা দেখতেই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১০ হাজার পর্যটক পক্ষিনিবাসে ভিড় জমিয়েছিলেন। এবছর অনেক বেশি পরিমানে পরিযায়ী পাখি আসায় আশা করছি পক্ষিনিবাসে রেকর্ড পর্যটক ভিড় করবেন।” এক বনকর্তা জানান, পক্ষিনিবাস চত্বরে পাখিদের খাবার ও প্রজননের সমস্যা নেই। কিন্তু গত দু বছর পক্ষিনিবাসে কেন কম পরিমাণে পরিযায়ী পাখি এসেছে তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে।” রবিবার পক্ষিনিবাসে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পরিযায়ী পাখি দেখতে যান চাকুলিয়ার কিশোর ঝা। তিনি বলেন, “এত পাখি দেখতে পাব তা এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। তাই আমরা খুব খুশি।” |