সম্পাদক সমীপেষু...
তিন শিক্ষক, ১৮৯ জন ছাত্র
পড়ছে কিন্তু কিছুই শিখছে না, কেন আমাদের স্কুলের এই হাল’ শীর্ষক সুগত মারজিতের রচনার প্রেক্ষিতে এই পত্র। আমি যে স্কুলে শিক্ষকতা করি, সেখানে শিক্ষকের সংখ্যা প্রধান শিক্ষক-সহ ৩ জন, শিক্ষার্থী ১৮৯ জন। বিগত এক বছর ধরে শিক্ষক দেওয়ার জন্য এস আই অফিসে (অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক) মৌখিক ও লিখিত ভাবে জানিয়েছি। সেখানেও কাজ না-হওয়ায় জেলা বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি, মুখ্যমন্ত্রী, বিদ্যালয় শিক্ষামন্ত্রী, রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির গোচরে আনার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। এমনকী কলকাতা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিকেও চিঠি প্রকাশ করে সকলের নজরে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। অবস্থা একই রকম আছে।
তিন জন শিক্ষকের মধ্যে এক জনকে বছরের বেশির ভাগ সময়ই নির্বাচনী তালিকা প্রস্তুত-সহ নানা কাজে জড়িয়ে রাখা হয়। শিক্ষক প্রশিক্ষণ-সহ বিভিন্ন প্রয়োজনেও এক জনকে তুলে নেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রধান শিক্ষককে এস আই অফিস, ব্লক অফিস, পঞ্চায়েত অফিস, ব্যাঙ্ক প্রভৃতি স্থানে মাসে বেশ কয়েক বার দৌড়তে হয়। মিড ডে মিলের দৌলতে দোকান-বাজার-জ্বালানি-সহ নানা বিষয়ে বেশ কিছু সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। ওই সব কাজ করতে যেখানে শিক্ষার্থী অনুপাতে ৬ জন শিক্ষকের প্রয়োজন, সেখানে কী ভাবে পঠন-পাঠন করানো সম্ভব! আবার এক জন এস আই-কে ২/৩টি সার্কেলের দায়িত্ব পালন করতে হয়। সরকার পঞ্চায়েতের বিভিন্ন স্কুলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য ‘শিক্ষাবন্ধু’ তৈরি করলেও তিনি নির্দিষ্ট জায়গায় থাকেন না। এর উপর সর্বশিক্ষা মিশনের দৌলতে মাসে মাসে প্রচুর কাগজপত্র (তথ্য সংবলিত) পূরণ করে পাঠাতে হয়। বর্তমানে আবার নানা বিষয়ে হিসাবপত্র রাখার জন্য প্রায় ১৫/১৬টি খাতা পাঠানো হয়েছে, যা প্রতিদিনের হিসাব করে রাখতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী বা করণিক নেই। পঠন-পাঠন ছাড়া যদি তাঁদের ওই সব কাজেই নিয়োজিত করা হয়, তা হলে শিক্ষার মান কেন নিম্নমুখী হবে না?
সুগতবাবুকে কয়েকটি প্রশ্ন:
‘মাসের প্রথম দিনে মাইনে পাচ্ছেন’ এটা শুধু আপনার কথা নয়, এখন আমজনতার ‘ট্যাগলাইন’। আরেকটাও আছে, ‘শিক্ষকদের ডি এ বেড়েছে’ (আর কারও নয় কিন্তু!)। একটা সময় শিক্ষকরা কয়েক মাস বা তারও বেশি সময় পরে বেতন পেতেন। সরকারি কর্মীরা কবে এ ভাবে অপেক্ষা করে অথবা নিদেনপক্ষে মাসের ১৬ তারিখ বেতন পেয়েছেন, সুগতবাবু? কর্মীদের মাসের শেষ দিনে অথবা পরের মাসের পয়লায় বেতন পাওয়া কোনও ক্রমেই নিবন্ধে উঠে আসে না কেন? শিক্ষকদের মাসপয়লা বেতনে অন্যায় বা অযৌক্তিকতাটা কোথায় যে, সকলে এমন রে রে করে উঠছেন?
‘সরকারের অর্থ যে খোলামকুচি নয়...’। শিক্ষাক্ষেত্র বাদে অন্যান্য সরকারি বিভাগে যেখানে নিত্য হাজার হাজার শুকতলা ক্ষয়ে যাচ্ছে, চুল সাদা হয়ে যাচ্ছে, মৃত্যুও অস্বাভাবিক নয়, সরকারের অর্থ বোধ হয় খোলামকুচি, তাই না?
সক্ষমতার যে জায়গা থেকে এক জন শিক্ষার্থী বিষয় নির্বাচন করে পড়াশোনা করে, সেখান থেকেই ‘মেধা’ শব্দটি উঠে আসে এবং ভাগ হয় উচ্চ-মধ্য-নিম্নে। শিক্ষার শুরুতে সেই শিক্ষার্থীর সঙ্গে শব্দটির সম্পর্ক কী বা কেমন?
পড়ুয়ারা ঠিকঠাক শিখছে, তা কিন্তু কেউই বলছেন না
পড়ছে কিন্তু কিছুই শিখছে না’ (১০-৭) প্রকাশিত আমার একটি লেখার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে (শিক্ষকদের অবস্থা ৮অগস্ট)। প্রকাশিত হয়েছে শৈবাল করের একটি মনোজ্ঞ রচনা (শিখতে পারে কিন্তু কেন শিখবে? ৮ অগস্ট)। এ বিষয়ে আমার বক্তব্যের খানিকটা হয়তো ঠিক ভাবে বোঝা হয়নি। তাই কতকগুলো ব্যাপার পরিষ্কার করে দেওয়া প্রয়োজন।
আমি আমার লেখায় বলার চেষ্টা করেছি যে, একেবারে গোড়ার দিকে সিলেবাসে কাটছাঁট করে শুধু ভাষা ও গণিতের উপর জোর দেওয়া যায় যাতে ছাত্রছাত্রীদের ওপর চাপ কম পড়ে। শিক্ষকদের ওপরও চাপ কম পড়ার কথা। শিক্ষক-ছাত্র অনুপাতের খামতির জন্যই কি ছোট পড়ুয়ারা ঠিক মতো শিখছে না? জানা নেই।
কোনও প্রতিবেদকই কিন্তু বলছেন না যে, পড়ুয়ারা ঠিকঠাক শিখছে বা তাঁদের বিদ্যালয়ে এই সমস্যা নেই। তাঁরা সমস্যাটি নিয়ে দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন।
আমার লেখার মূল প্রতিপাদ্য: আমরা যাদের পড়াই তারা ঠিক মতো শিখছে কি না, তার দায় আমাদের উপর বর্তায়। সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলার দায়িত্ব, কোন কোন কারণে তারা ঠিক মতো শিখছে না বা কোথায় ঠিকঠাক শিখছে সেটা বিশ্লেষণ করার নৈতিক দায়িত্ব শিক্ষকদের। আজ অবধি কোথাও কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকা সংগঠনকে দেখিনি পড়াশোনার মান কী হচ্ছে, তা নিয়ে কোনও ধরনের আন্দোলনে নামতে। ছোট ছোট পড়ুয়ারা ক্লাসে যায় অথচ ঠিকঠাক শেখে না কেন? সে বিষয়টি উত্থাপন করার জন্য বড় গবেষকদের প্রয়োজন হবে কেন? ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত, মিড ডে মিল তত্ত্বাবধান, প্রাথমিক শিক্ষার মান সবই আন্দোলনের অঙ্গ হতে পারে।
এক প্রতিবেদক বলেছেন, গড়বেতা অঞ্চলে দারিদ্র এত বেশি, যার জন্য শিশু পড়ুয়ারা পড়াশোনার সময় পায় না। বাড়ির কাজ করতে হয় ইত্যাদি। কিন্তু যত ক্ষণ স্কুলে থাকে কী শেখে তারা? অনেক বেশি সংখ্যক শিশু এখন স্কুলে ভর্তি হয়। যদি লেখাপড়ার ভার কমিয়ে দিই, তা হলে স্কুলে থাকাকালীন শিশুটি বেশ খানিকটা শিখতে পারবে।
প্রতিটি স্কুলে শিশুরা ঠিক মতো শিখছে কি না, সে বিষয়ে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সচেতন থাকাটা বাঞ্ছনীয়। শিক্ষক-শিক্ষিকারা কত কষ্টে আছেন, স্কুলের পরিকাঠামো কত খারাপ, এই সব বিষয় যদি আলোচিত হয়, তা হলে প্রশ্ন উঠবে যে, গত বিশ বছর ধরে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন স্তরে যা উন্নতি হয়েছে সেই অনুপাতে শিশুশিক্ষার মান কতটা উন্নত হয়েছে। কিংবা পরিকাঠামো যেখানে ভাল সেখানকার শিশুরা কি খুব ভাল ফল করেছে? আর সমাজে দারিদ্র থাকলেই যে শিশুশিক্ষার এই অবস্থা হবে, সেই যুক্তি ধোপে টেকে না। কারণ বহু সমাজই শিক্ষার হাত ধরে সচ্ছল হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.