একেই বলে শাপে বর। টাকার মূল্য হ্রাস সাধারণ ভাবে দেশের আর্থিক স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল লক্ষণ না হলে শেয়ার বাজারের পক্ষে তা আপাতত আশীর্বাদ হিসাবেই দেখা দিচ্ছে। কারণ, টাকার দাম কমার ফলে এখন আগের থেকে তুলনামূলক ভাবে কম ডলারে বেশি শেয়ার কেনা যাচ্ছে। আর এটাই বিশেষ ভাবে ভারতের বাজারে লগ্নি করতে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাকে আকৃষ্ট করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই। এর জেরেই গত কয়েক দিন ধরে দ্রুত গতিতে না হলেও অল্প অল্প করে বাড়ছে শেয়ার বাজার। বাজার বিশেষজ্ঞদের মধে কেউ কেউ মনে করছেন চলতি মাসেই সেনসেক্স ১৯ হাজার ছাড়াতে পারে। এ ছাড়া, মঙ্গলবার সেনসেক্সের উত্থানে যে সব কারণ বিশেষ ভাবে ইন্ধন জুগিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে:
• মার্কিন মুলুকে শিল্প বিরোধ মামলায় ইনফোসিসের জয়
• দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে ভাল বৃষ্টিপাত
• সামান্য হলেও খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার কমা
মঙ্গলবার সেনসেক্স এক লাফে ১৯৪.১৮ পয়েন্ট বেড়ে বাজার বন্ধের সময়ে দাঁড়ায় ১৭,৮৮৫.২৬ পয়েন্টে। যা গত পাঁচ মাসে সর্বোচ্চ। দুটি বা তিনটি নয়। এ দিন বিভিন্ন শিল্প ক্ষেত্রের শেয়ার দরেই ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা গিয়েছে। যেমন, ইনফোসিসের হাত ধরে তথ্যপ্রযুক্তি, গাড়ি, বিদ্যুৎ, নির্মাণ সংস্থার শেয়ার ইত্যাদি। সূচক বিশেষ করে যে সব সংস্থার উপর ভর করে উঠেছে, তার মধ্যে ইনফোসিস ছাড়াও রয়েছে টাটা মোটরস, স্টারলাইট, এনটিপিসি।
আমেরিকার আদালতে ইনফোসিসের মামলা জয়ে শেয়ার বাজার খুশি। এই দিন ইনফোসিসের শেয়ার দর প্রায় ৪ শতাংশ বৃদ্ধির মূলে এটাই কাজ করেছে বলে বাজার সূত্রের খবর। প্রসঙ্গত, আমেরিকায় ইনফোসিসের জনৈক কর্মী জ্যাক পামার ২০১১-য় মামলা ঠুকেছিলেন সংস্থার বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ ছিল, বেআইনি ভাবে বি-১ ভিসায় কর্মীদের মার্কিন মুলুকে এনে কাজে নিযুক্ত করে সংস্থা। উল্লেখ্য, এইচ-১বি ভিসাতেই কর্মীদের আনার কথা। কিন্তু ওই ভিসা নিয়ে ঊর্ধ্বসীমা আইন এড়াতে সংস্থা বি-১ ভিসার সুযোগ নিয়েছিল। অথচ বি-১ ভিসায় সাময়িক ভাবে বৈঠক ইত্যাদির জন্যই শুধু কর্মীদের আনা যায়। এই বেআইনি ভিসার বিষয়টি ধরে ফেলার জন্য সংস্থা তাঁকে হেনস্থা করে বলে পামার আলাবামা-র আদালতে অভিযোগ আনেন। তাঁর আরও অভিযোগ ভারতীয় কর্মীদের কম বেতন দেওয়া হয় মার্কিন কর্মীদের তুলনায়। আদালত সোমবার পামারের অভিযোগ খারিজ করে দেয়।
এ দিকে, বাজার বিশেষজ্ঞ ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের ডিরেক্টর এস কে কৌশিক জানান, “এ মাসের মধ্যেই সেনসেক্স ১৯ হাজার অঙ্ক ছাড়িয়ে যেতে পারে।” তাঁর মতে, “বাজার মূলত বাড়ছে বিদেশি বিনিয়োগের জেরেই। টাকার মূল্য হ্রাস ওই সব সংস্থাকে ভারতে লগ্নি করতে উৎসাহিত করছে। কারণ, ওই সব সংস্থা বিদেশ থেকে ডলার সংগ্রহ করে শেয়ারে বিনিয়োগ করে। টাকার দাম কমার ফলে এখন একই পরিমাণ ডলার দিয়ে আগের থেকে বেশি সংখ্যক শেয়ার কিনতে পারছে তারা।” |