|
|
|
|
জখম ৭ |
মন্তেশ্বরে দুষ্কৃতীদের গোষ্ঠী-সংঘর্ষ, গুলিতে যুবক হত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মন্তেশ্বর |
দুই সমাজবিরোধী গোষ্ঠীর গণ্ডগোলে গুলি-বোমায় অশান্ত হল মন্তেশ্বর।
মঙ্গলবার সকালে ওই গণ্ডগোলে গুলিতে এক পক্ষের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন এক স্কুলছাত্র-সহ দুই নিরীহ বাসিন্দা। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “দুই গোষ্ঠীর গণ্ডগোলে এক জন নিহত ও সাত জন জখম হয়েছেন। মৃতের নাম কাউসার শেখ (২৩)। পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এলাকা থেকে কিছু বোমা উদ্ধার হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মন্তেশ্বরের তেঁতুলিয়া গ্রামে কাশেম শেখ ও ফটিক শেখ নামে দুই দাগি দুষ্কৃতীর দু’টি গোষ্ঠী রয়েছে। দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই নানা দুষ্কর্মের অভিযোগ রয়েছে। মাঝে-মধ্যেই গোলমাল বাধে। কাশেম শেখ ও তার দলবলের বাস শেখপাড়ায়। ফটিক শেখরা থাকে মোল্লাপাড়ায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ৯টা নাগাদ শেখপাড়া থেকে জনা চল্লিশের একটি দল বোমা, বন্দুক ও ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বেরিয়েছিল। রাস্তায় ফটিক-গোষ্ঠীর জনা ছ’য়েকের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় তাদের। বোমা-গুলি ছুড়তে ছুড়তে তাদের তাড়া করে সশস্ত্র দলটি। |
|
ছেলের মৃত্যুর খবরে সংজ্ঞাহীন কাউসার শেখের বাবা। মন্তেশ্বরে। —নিজস্ব চিত্র |
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিল বামুনপাড়া অঞ্চল জুনিয়র হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র, বছর তেরোর ইন্তাজুল মির্ধা। তার পায়ে গুলি লাগে। বুকে গুলি লাগে চুমকি বিবি নামে এক মহিলার। তাড়া খেয়ে মোল্লাপাড়ায় ফিরে কাবুল শেখ নামে এক জনের বাড়ির দরজা খোলা পেয়ে ঢুকে পড়ে ফটিকের লোকেরা। স্ত্রী ও কিশোরী মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে যান কাবুল। কাবুল শেখের কথায়, “হঠাৎ কয়েক জন হুড়মুড় করে বাড়িতে এসে ঢুকল। পিছন থেকে বোমা-গুলির আওয়াজ আসছিল। বিপদ আসছে বুঝেই স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে যাই।”
বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া ছ’জন ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। কাশেমের লোকেরা সকেট বোমা মেরে অ্যাসবেস্টসের চালের কিছুটা উড়িয়ে দেয়। তার পরে দেওয়াল টপকে ভিতরে ঢুকে কয়েক মিনিট ধরে যথেচ্ছ গুলি ও বোমা ছোড়ে। ঘটনাস্থলেই কাউসার শেখের মৃত্যু হয়। গুরুতর জখম হন জুয়েল শেখ, নয়ন শেখ, সাইফুদ্দিন শেখ, ওয়াননাচ শেখ, আতারুল মির্ধা নামে পাঁচ জন। এর পরে বাড়ির পাশে কাবুলের একটি খড়ের চাল দেওয়া মাটির ঘরে আগুন দিয়ে কাশেমের লোকজন গুলি-বোমা ছুড়তে ছুড়তে পালায়। কাবুলের স্ত্রী মাশরুফা বিবির আক্ষেপ, “আমরা নিরপরাধ। মাঝখান থেকে আমাদের ক্ষতি হল!”
কেন এই গণ্ডগোল, পুলিশ কিন্তু দিনের শেষে তা স্পষ্ট করে জানাতে পারেনি। তবে ফটিকের আত্মীয় এয়ারুল শেখের দাবি, “২০০৯ সালে খেতে কাজ করার সময়ে ফটিকের উপরে চড়াও হয় কাশেমের দল। ফটিক গুলি খায়। মন্তেশ্বর থানায় ২২ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। কয়েক দিনের মধ্যে কালনা আদালতে সেই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়া কথা। সেই কারণেই এই হামলা।” জখম ছাত্র ও মহিলাকে প্রথমে মন্তেশ্বর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান গ্রামবাসী। পরে তাঁদের বর্ধমানের নার্সিংহোমে পাঠানো হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। বাকি আহতদেরও নানা নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর। উত্তেজনা থাকায় এলাকায় পুলিশ টহল দিচ্ছে। |
|
|
|
|
|