স্বনির্ভরগোষ্ঠী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিতর্কের জেরে প্রায় বছরখানেক ধরে স্তব্ধ মিড ডে মিল বন্ধ।
শান্তিপুরের আড়বান্দি নেতাজি বিদ্যাপীঠের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা তাই ক্রমেই কমছে। আশপাশের দুঃস্থ গ্রামগুলি থেকে ওই স্কুলে ভিড় করা ছেলেমেয়েদের মিড-ডে মিল একটা বড় ‘আকর্ষণ’ ছিল। কিন্তু সে সুযোগ থমকে যাওয়ায় পড়ুয়ারাও মুখ ফিরিয়েছে, এমনই দাবি অভিভাবকদের।
তাঁদের অভিযোগ, পরিচালন সমিতির সদস্যরা সংকীর্ণ রাজনীতি করতে গিয়েই বন্ধ করে দিলেন মিড-ডে মিল। বর্তমান পরিচালন সমিতিটি কংগ্রেস ও তৃণমূল জোটের। সমিতির সদস্যদের মধ্যে শরিকি বিবাদ দীর্ঘ দিনের। তার জেরেই বন্ধ মিড-ডে মিল। অভিভাবকদের সুরেই অভিযোগ সিপিএমেরও। দলের শান্তিপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক শান্তনু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পরিচালন সমিতির সদস্যরা শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে মিড-ডে মিল বন্ধ রেখেছে। দু’টো দল নিছক রাজনীতি করতে গিয়েই এতগুলো ছোট ছেলেমেয়ের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছে।’’ রান্না বন্ধ। তা বলে চাল-ডালের জোগান তো থেমে নেই। স্কুলের গুদামে পচে নষ্ট হচ্ছে প্রায় ১৫ বস্তা চাল। স্কুলে এসে প্রায় ‘অনাহারে’ অন্তত ১৩৫০ জন পড়ুয়া।
ওই স্কুলে রান্না করতেন দুই রাধুনি। কিন্তু স্কুলটি বছরখানেক আগে জুনিয়র হাইস্কুল, অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ায় নিয়ম অনুসারে স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের রান্নার দায়িত্ব দেওয়ার কথা ছিল স্কুল কর্তৃপক্ষের। সে ব্যাপারেও অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা স্থানীয় পঞ্চায়েত এলাকার কোনও গোষ্ঠীর। কিন্তু সে পথে না হেঁটে স্কুলের পরিচালন সমিতিতি দূরবর্তী গ্রামের একটি গোষ্ঠীকে ওই রান্নার দায়িত্ব দেয়। বিবাদের সূত্রপাত তা থেকেই।
প্রধান শিক্ষক সুভাষ দাস বলেন, ‘‘পরিচালন সমিতির সম্মতির বৈঠকে স্থির হয়েছিল পাশের গ্রামের একটি স্বনির্ভরগোষ্ঠীকে রান্নার দায়িত্ব দেওয়া হবে। সেইমত ওই গোষ্ঠীর মহিলারা রান্নাও শুরু করেন। কিন্তু গ্রামের মহিলারা বেঁকে বসেন। তাঁরা বিরোধিতা শুরু করেন।” প্রশাসন জানায়, মিড-ডে মিল রান্নার দায়িত্ব দিতে হবে স্কুলের নিকটবর্তী স্বনির্ভরগোষ্ঠীকে। তাহলে কেন দূর-গ্রামের স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ওই দায়িত্ব দেওয়া হল? সুভাষবাবুর কাছে কোন স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।
রান্না থমকে যাওয়ায় বিষয়টি মহকুমাশাসককে জানানো হয়। ঝামেলা এড়াতে তিনি প্রথামিকভাবে রান্না বন্ধ রাখতে বলেন। স্কুল পরিচালন সমিতির এক সদস্য জানান, সব পক্ষকে সন্তুষ্ট রাখতে শেষ পর্যন্ত কোন স্বনির্ভরগোষ্ঠীকে না নিয়েই বারো জন মহিলার একটি তালিকা তৈরি করে প্রশাসনক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা সরকারি নির্দেশিকার পরিপন্থী হওয়ায় প্রশাসন সেই তালিকা অনুমোদন করেনি।
স্কুলের পরিচালন সমিতির বর্তমান সম্পাদক তৃণমূলের রামপ্রসাদ সাধুখাঁ বলেন, ‘‘আমি নভেম্বর মাসে নতুন পরিচালন সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছি। স্বনির্ভরগোষ্ঠী নির্বাচন সংক্রান্ত গন্ডগোল আগের পরিচালন সমিতির আমলে হয়েছিল। তারাই গ্রামের গোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে পাশের গ্রামের গোষ্ঠীকে নির্বাচন করেছিল। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সবরকমভাবেই মিড ডে মিল চালু করার চেষ্টা করছি।’’ স্কুলের প্রাক্তন সম্পাদক কংগ্রেসের সনাতন মাঝি এ বারেও স্কুল পরিচালন সমিতির সদস্য। তিনি বলেন, ‘‘পাশের গ্রামের স্বনির্ভরগোষ্ঠীর মহিলারা আসলে খুবই গরিব। তাই ওদের কথা ভাবা হয়েছিল। এতদিন যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে এবার আমরা সবাই মিলে দ্রুত মিড ডে মিল চালু করার চেষ্টা করছি।’’
রানাঘাটের মহকুমাশাসক সুমন ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা ওই স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি যত দ্রুত সম্ভব মিড ডে মিল চালু করতে হবে। এ ভাবে দিনের পর দিন মিড-ডে মিল বন্ধ রাখা বরদাস্ত করা যাবে না।’’ |