|
|
|
|
পশ্চিমে ইন্দিরা আবাস |
১১ হাজার বাড়ি তৈরির টাকা পড়ে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বরাদ্দের মাত্র ২২ শতাংশ টাকা খরচ হয়েছে। বাকি টাকা পড়েই রয়েছে। অথচ, এই অর্থ খরচ করা গেলে অন্তত ১১ হাজার বাড়ি তৈরি হতে পারে। পশ্চিম মেদিনীপুরে ইন্দিরা আবাস যোজনার চিত্রটা এমনই। প্রকল্পের কাজ কেমন চলছে পর্যালোচনা করতে গিয়ে এই তথ্য পেয়েছেন জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি দেখে তাঁদের আশঙ্কা, এমন ‘ঢিলেঢালা’ ভাবে কাজ চলতে থাকলে চলতি আর্থিক বছরে এই প্রকল্পে বরাদ্দ পেতে চরম সমস্যায় পড়তে হবে। ইতিমধ্যে রাজ্য থেকে ‘চাপ’ আসতে শুরু করেছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “কিছু সমস্যা হচ্ছে। সমস্যার কথা রাজ্য সরকারকেও জানানো হয়েছে। বিডিওদেরকে দ্রুত পদক্ষেপ করতে বলেছি। কিছু ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব দেখা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ পেয়েছি।”
পঞ্চায়েত সমিতিগুলো তৎপর না হওয়ার জন্যই এই পরিস্থিতি বলে অভিযোগ। জেলা পরিষদের অবশ্য বক্তব্য, এখন বিডিওদেরই বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে বলেছে রাজ্য সরকার। ফলে, বিডিওদেরও দায় রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের সঙ্গে তাঁদের সমন্বয়ের ‘ঘাটতি’ থেকে যাচ্ছে। ইন্দিরা আবাস নিয়ে বৃহস্পতিবার জেলা পরিষদে এক পর্যালোচনা বৈঠক হয়েছে। সভাধিপতির পাশাপাশি জেলা পরিষদের সচিব, কয়েকজন কর্মাধ্যক্ষও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে এই প্রকল্পের খতিয়ান দেখে ‘উদ্বিগ্ন’ই হয়ে পড়েন কর্তৃপক্ষ। এক আধিকারিক জানান, “ইউসি (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) চেয়ে রাজ্য থেকে ‘চাপ’ আসছে। এ ভাবে কাজ চলতে থাকলে চলতি আর্থিক বছরের বরাদ্দ পেতে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। দেখা যায়, প্রকল্পের কয়েক কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। এর ফলে গরিব মানুষই বঞ্চিত হচ্ছেন।
এই প্রকল্পে বিভিন্ন ব্লকে সব মিলিয়ে প্রায় ৫৭ কোটি ৮ লক্ষ ৯১ হাজার টাকা পড়ে রয়েছে। এরমধ্যে বেলপাহাড়িতে (বিনপুর- ২) পড়ে রয়েছে ৭ কোটি ২৯ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা। খড়্গপুর-২ তে পড়ে রয়েছে ৭ কোটি ৯৮ লক্ষ ১৭ হাজার, নারায়ণগড়ে পড়ে রয়েছে ৪ কোটি ৫০ লক্ষ ৫৪ হাজার, ঘাটালে পড়ে রয়েছে ৩ কোটি ৪৬ লক্ষ ৩২ হাজার। বিভিন্ন ব্লকের কাজের খতিয়ান থেকে দেখা যাচ্ছে, বরাদ্দের গড়ে মাত্র ২২.৩ শতাংশ টাকা খরচ হয়েছে। যে বিপুল পরিমান অর্থ পড়ে রয়েছে, তাতে অন্তত ১১ হাজার ২৯৫ টি বাড়ি তৈরি হতে পারে। বেশ কয়েকটি ব্লকে অবশ্য ভালো কাজ হয়েছে। যেমন চন্দ্রকোনা- ২ তে বরাদ্দের ৮২ শতাংশ খরচ হয়েছে। মেদিনীপুরে (সদর) ৯৬ শতাংশ খরচ হয়েছে। লালগড়ে (বিনপুর- ১) ৬১ শতাংশ খরচ হয়েছে। গোপীবল্লভপুর- ১ এ ৬৭ শতাংশ খরচ হয়েছে। ইন্দিরা আবাস প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ হয়। দু’ভাগে এই টাকা দেওয়া হয়। কারা এই সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন, তার জন্য প্রতি ব্লকে তালিকা রয়েছে।
সেই তালিকা ধরেই এই প্রকল্পের টাকা বরাদ্দ হয়। প্রকল্পের কাজ সময় মতো এগোতে কী কী সমস্যা হচ্ছে? জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বাড়ি তৈরির সমস্ত সরঞ্জামের দাম বেড়েছে। অথচ, এই প্রকল্পের বরাদ্দ বাড়েনি। পরিবার পিছু ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ হয়। তাও দু’ভাগে। প্রথমে ২৪ হাজার ২৫০ টাকা। পরে আরও ২৪ হাজার ২৫০ টাকা। সরকারি নিয়ম রয়েছে, এ ক্ষেত্রে পাকা বাড়ি তৈরি করতে হবে। কিন্তু, অনেক উপভোক্তাই এখন বরাদ্দ অর্থে পাকা বাড়ি তৈরি করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, এখন ইট-বালি-চিপস্ সমস্ত কিছুর দাম বেড়েছে। সঙ্গে গ্রামস্তরে ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা’ও রয়েছে। তার জন্যও প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। দুর্নীতি তো রয়েছেই। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, দ্রুততার সঙ্গে কাজ এগোনোর চেষ্টা চলছে। এ ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। জেলা সভাধিপতি বলেন, “পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতেই পর্যালোচনা বৈঠক করেছি। প্রকল্পের কাজ স্বাভাবিক গতিতে এগোচ্ছে না, এটা ঠিক। ব্লকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|