বনকর্মীদের আশঙ্কাই সত্যি হল। নকশালবাড়ি এলাকায় ঘুরে বেড়ানো জখম দাঁতালটি মারা গেল। সোমবার সকালে সেটির মৃত্যু হয়। জুন মাসে দাঁতালটি নেপালে জখম হয়। তখনই বিভিন্ন পরিবেশ প্রেমী সংগঠনের পক্ষ থেকে দ্রুত দাঁতালের চিকিৎসার দাবি তোলা হয়। দ্রুত চিকিৎসা না-হলে দাঁতালটি মারা যেতে পারে বলে বনকর্মীদের পক্ষ থেকেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। শেষ পর্যন্ত শনিবার দাঁতালের চিকিৎসা করানো হয়। ততদিনে দাঁতালের শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। শরীর রক্তশূন্য হয়ে পড়ে। ঘুমপাড়ানি গুলি করে অচেতন করে চিকিৎসা শুরুর পরে সেটি মাটিতে শুয়ে পড়ে। তার পরে চেষ্টা করেও বনকর্মীরা আর সেটিতে দাঁড় করাতে পারেননি। বন্যপ্রাণ বিভাগের উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল ব্রিজরাজ শর্মাও এদিন স্বীকার করেন, “দাঁতালের চিকিৎসায় সত্যিই দেরি হয়েছিল।” তবে তাঁর দাবি, দাঁতালটিকে জুন মাসেই চিকিৎসার জন্য বন দফতরের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়ার পরে সেটি ফের নেপালে চলে যাওয়াতেই চিকিৎসায় দেরি হয়েছে। |
তিনি বলেন, “দ্বিতীয় দফায় প্রায় দুই সপ্তাহ পরে দাঁতালটি নেপাল থেকে ফেরে। তার পরে কুনকি হাতি জোগাড় করে চিকিৎসা করতে দেরি হয়।” হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “কী ভাবে পরিকাঠামো গড়ে তোলা গেলে জখম হাতির দ্রুত চিকিৎসা করানো সম্ভব সেটা বন দফতরের ভেবে দেখা দরকার। বহু বার বলার পরেও দাঁতালের চিকিৎসা যখন হল ততক্ষণে সেটির মরার অবস্থা।” বন আধিকারিকদের উদাসীনতায় নেপালে গিয়ে বার বার বুনো হাতির পাল কেন হামলার মুখে পড়ছে সেই প্রশ্নও তুলেছেন পরিবেশ প্রেমীরা। মৃত দাঁতাল নেপালে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় বলে সন্দেহ বনকর্মীদেরই। চিকিৎসার সময়ে শরীরে কোনও গুলি মেলেনি। পরে হাতিটির সামনের বাঁ পায়ের একটি ক্ষত থেকে যেভাবে মাংস বার হয়ে এসেছে তাতে বনকর্মীদের সন্দেহ, ওই জায়গায় গুলি ঢুকেছিল। পরে পচন ধরে মাংস ফুলে বার হয়ে এলে গুলিটিও বার হয়ে যায়। ততদিনে গোটা শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। নকশালবাড়ি বিজ্ঞান ক্লাবের সম্পাদক প্রাণগোপাল নাগ অভিযোগ করেন, “নেপালে ঢোকা বুনো হাতির পালের উপরে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতি বছর যথেচ্ছ গুলি করে। বন দফতরকে বহু বার বলার পরেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। দাঁতাল জখম অবস্থায় হাতির পালের সঙ্গে নেপালে ঢুকে গেলে দিল্লিতে নেপাল বন দফতরের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা হয়। পরে তা বাতিল হয়। কেন ওই বৈঠক হল না, স্পষ্ট নয়। রাজ্য বন দফতরের উদাসীনতা মানা যায় না।” ন্যাফের মুখপাত্রও বলেন, “নেপালে বুনো হাতির পালে হামলা ঠেকাতে রাজ্য বন দফতরকেই উদ্যোগী হতে হবে। না-হলে বুনো হাতির মৃত্যু ঠেকানো যাবে না। |