নিশ্চেষ্ট পুরসভা, ভেঙে পড়ল জীর্ণ বাড়ির অংশ’ (১৯-৭) শীর্ষক সংবাদ নগরজীবনের মারাত্মক গ্লানিকর দিকের সমস্যা সমাধানে কলকাতা পুরসভা ও রাজ্য সরকারের চূড়ান্ত গাফিলতি এবং অপদার্থতার যথার্থ চিত্র। ১৮ জুলাই সকাল পৌনে এগারোটা নাগাদ সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে বটগাছের পাতা-শিকড়ে আবৃত, এক পাশে হেলে-থাকা পুরসভা কর্তৃক ‘বিপজ্জনক’ ঘোষিত একটি পুরনো বাড়ির দেওয়াল খসে শতাধিক ইটের টুকরো আচমকা হুড়মুড়িয়ে পড়ে কলকাতার ব্যস্ততম জনবহুল রাস্তা ক্রিক রো-য়। এক সময় মনে হচ্ছিল, জীর্ণ বাড়ির গোটা অংশটাই ভেঙে পড়বে। সৌভাগ্যবশত তা না-হওয়ায় এবং ওই সময়ে দুর্ঘটনাস্থলে পথচলতি কোনও মানুষ বা গাড়ি না-থাকায় কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। স্থানীয় মানুষজন জানিয়েছেন, প্রায় প্রতি দিনই ওই বাড়ি থেকে ইট খসে পড়ে। যে-কোনও মুহূর্তে পুরো বাড়িটাই হুড়মুড়িয়ে ক্রিক রো-র উপরে ভেঙে পড়ে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। ওই জীর্ণ বাড়িটির উল্টো দিকে অবস্থিত রাজা সুবোধ মল্লিকের শতাব্দীপ্রাচীন তথা ‘বিপজ্জনক’ ঘোষিত বাড়িটিরও একই দশা। এত কিছুর পরেও কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় দার্শনিক রকমের উদাসীন ও নির্বিকার। পরিশেষে পুলিশের অনুরোধে ওই দিন দুপুরেই পুরকর্মীরা জীর্ণ বাড়িটির বিপজ্জনক অংশ ভাঙার কাজ শুরু করে দেন। ‘বিপজ্জনক’ বাড়ি ভাঙার ক্ষেত্রে পুরসভার কেরামতি কতখানি, আরও এক বার তা প্রত্যক্ষ করল কলকাতা।
|
ক্রিক রো-র ভেঙে পড়া বাড়ি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক |
প্রসঙ্গত, কলকাতা পুরসভার দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, কলকাতা মহানগরীর প্রথম ১০০টি ওয়ার্ডে অবস্থিত ২ লক্ষ ২৫ হাজার পাকাবাড়ির মধ্যে অন্ততপক্ষে ৬ হাজার বাড়ির অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার বাড়ির মারাত্মক বিপজ্জনক দশা। যে-কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পুর আইনের ৪১১ (৪) অনুযায়ী এই শহরের কোনও বাড়ি বিপজ্জনক অবস্থায় থাকলে যে-কোনও সময়ে সেটি ভেঙে দিতে পারে কলকাতা পুরসভা। এমনকী, ওই বাড়ি নিয়ে আদালতে মকদ্দমা চলাকালীনও এর অন্যথা হওয়ার নয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বাড়ি ভাঙার জন্য মহানাগরিকের অনুমতি অত্যাবশ্যক। অজ্ঞাত কারণে অবশ্যকরণীয় ওই কর্তব্য পালন করে না পুরনিগম। বিশেষত, পুরবিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে বাঙালির প্রিয় শহরে নির্মিত ১০০টির বেশি বেআইনি বহুতল বাড়ি ভেঙে ফেলার অত্যাবশ্যকতা সত্ত্বেও অদ্যাবধি এগুলি মাথা উঁচু করে বহাল তবিয়তে দাঁড়িয়ে আছে। স্মরণে আছে, বিগত বিশ বছরে দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর ও শরৎ বসু রোড, মধ্য কলকাতার কলিন্স লেন ও জ্যাকেরিয়া স্ট্রিট এবং বেহালার বুড়ো শিবতলা-সমেত বৃহত্তর কলকাতার বেশ কয়েকটি বহুতল ও পাকা বাড়ি ভেঙে পড়ায় ১৫০ জনের বেশি মানুষের অপমৃত্যু ঘটলেও এক জন দোষীরও সাজা হয়নি।
যে কোনও সভ্য শহরে একটি বাড়ি নির্মাণ করতে হলে কতিপয় জরুরি পুরবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। যথাযথ আয়োজন ব্যতিরেকে ইমারত তৈরির নকশা অনুমোদন করানোও সেখানে অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু কলকাতা ভিন্ন গ্রহের শহর। বাঙালির প্রিয় শহরের নাম মেগাসিটির তালিকায় উঠলেও ওই তালিকা তৈরি হয়েছে জনসংখ্যার বিচারে, পুর পরিকাঠামোর মাপকাঠিতে নয়। এই শহরের ২০০০ উঁচু বাড়ির নির্মাণের মালমশলা পরীক্ষা করা হয়নি। ওই সব বহুতলে বিদ্যুৎ সংযোগের সঠিক ব্যবস্থা নেই। অগ্নিনির্বাপণের বন্দোবস্ত অকিঞ্চিৎকর। স্বভাবতই যখন-তখন বাড়ি ভেঙে পড়ে, যত্রতত্র আগুন জ্বলে ওঠে। হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিপুল হলে মাননীয় মন্ত্রী ও পুরকর্তারা দল বেঁধে অকুস্থলে যান, তত্ত্বতল্লাশ করেন। অবব্যস্থা রোধে হরেক আশ্বাস দেন। কিন্তু অনুকূল জমি তৈরির প্রাথমিক শর্ত পূরণের অভাবে প্রতিশ্রুতির একটিও পালিত হয় না। পুনরায় পুরবিধির ফাঁক-ফোকর গলে অথবা ইচ্ছাকৃত ভাবে পুর আইন অমান্য করে ব্যাঙের ছাতার মতো শহরের যত্রতত্র বেআইনি ভাবে গজিয়ে ওঠে বহুতল ইমারত। এ ক্ষেত্রে বেনিয়ম বন্ধ করা পুরসভা, পুলিশ, দমকল ও রাজ্য সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব হলেও কবে এরা সে-আয়োজন সম্পন্ন করবে তা বলা অসম্ভব।
অনুমান করা চলে, এ রাজ্যে শাসক ও বিরোধী পক্ষ, উভয় দলের রাজনীতিকদের সঙ্গে প্রোমোটারদের আঁতাত নিবিড়। পারস্পরিক যোগাযোগের বলয় গড়ে ওঠে এক পক্ষের লাগামছাড়া আইনি অপব্যবহারের বিনিময়ে অপর পক্ষকে বিপুল উপচারে তুষ্ট রাখার বন্দোবস্তর মাধ্যমে। আমাদের দেশে রাজনৈতিক ক্ষমতা যেহেতু অন্যান্য ক্ষমতাকে করায়ত্ত করতে পারে, অতএব অর্থবান অসাধু ব্যবসায়ীরা সহজেই নিজ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করে নেয়। ফলে, কোনও বাড়ি বা বহুতল ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরসভা থেকে অপরাধের রেকর্ড অদৃশ্য হয়ে প্রতারক প্রোমোটারের জালিয়াতির প্রমাণ লোপ পেয়ে যায়। পাশাপাশি, কেলেঙ্কারি কারচুপির ঘটনা ধামাচাপা দিতে জটিলতম পুর আইনের দোহাই পেড়ে বিচার ব্যবস্থাকে বিপথগামী করার অবিরাম প্রচেষ্টা চলে। অতঃপর শুরু হয় জনস্মৃতি থেকে কলঙ্কিত অধ্যায় মুছে ফেলার জোর তৎপরতা।
প্রশ্রয়দাতাদের মদতে বন্দোবস্তের দ্বারা এই সব অপকর্ম দীর্ঘ দিন ধরেই নির্বিঘ্নে অতিবাহিত হয়ে আসছে। চূড়ান্ত ব্যর্থতা সত্ত্বেও সরকার ও পুরসভা নিজেদের অপদার্থতার দায় চুনোপুঁটি বাড়ির মালিকদের কাঁধে চাপিয়ে বঙ্গবাসীকে বিভ্রান্ত করছে। কলকাতার কালব্যাধি আজ অনেক গভীরে। সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে সুপরিকল্পিত উপায়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য হানিকর বিপজ্জনক ব্যবস্থা জিইয়ে রাখা হয়েছে। সময় থাকতে ব্যবস্থা না করলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়ে মহানগরী মহেঞ্জোদারোতে রূপান্তরিত হবে।
মানসকুমার রায়চৌধুরী। কলকাতা-২৬
|
বর্ধমান-কাটোয়া-বাদশাহি রোডের ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগস্থল নরজা বাসস্টপ। ঠিক তার একটু আগেই এক ফেন্সিংবিহীন, সংকীর্ণ, নিচু কালভার্ট।
এই ব্যস্ত কালভার্টের উপর দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে বাস, লরি-সহ কয়েকশো যানবাহন। সংকীর্ণ এই কালভার্টটিতে পাশাপাশি দুটি চার চাকার যান চলাচলে অক্ষম বহু দিন থেকেই। এই ব্যস্ত বাস রুটটির উপর দিয়ে বর্ধমান হয়ে কাটোয়া, বহরমপুর, সিউড়ি, বোলপুরে বাস আনাগোনা করে। অকস্মাৎ দুটি চার চাকার যান কালভার্টটিতে ঢুকে পড়লে নির্ঘাত যানজট শুরু হয়ে যায়। ফেন্সিংবিহীন কালভার্টটিতে গাড়ি পিছিয়ে আনাও দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাই যানজট শুরু হয়ে যায়। তাই বিপদসঙ্কুল কালভার্টটির অনতিবিলম্বে প্রসারণ-সহ সংস্কার প্রয়োজন।
এ এস এম সালাহউদ্দিন। শিক্ষক, রাজবাটি, বর্ধমান |