চিত্র-১: বর্ষায় বাস টার্মিনাসের বিস্তীর্ণ অংশ ভরে রয়েছে বৃষ্টির জলে। যার জেরে টার্মিনাসে রাস্তার পিচ উঠে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। তারই মধ্য দিয়ে দুলতে দুলতে ঢুকছে সমস্ত বাস। পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গীন যে, জমা জল পার হয়েই অফিসের ব্যস্ত সময়ে বাসে ওঠার লাইনে দাঁড়াতে হয় যাত্রীদের। এমনই বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে সল্টলেকের করুণাময়ী বাস টার্মিনাস।
চিত্র-২: টার্মিনাসের আশপাশে একটু চোখ ঘোরালেই দেখা যাবে চার দিক ভরে আছে জঙ্গল ও আবর্জনায়। সাফাই হয় না দীর্ঘদিন। গোটা টার্মিনাসের ভরসা ছিল একটি মাত্র শৌচাগার। পাশেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ চলায় ভেঙে দেওয়া হয়েছে সেটি। ফলে ওই টার্মিনাস এখন অনেকের কাছেই প্রাকৃতিক কাজ সারার জায়গা। আপাত দৃষ্টিতে ‘নরকের’ চেহারা নিয়েছে উপনগরীর গুরুত্বপূর্ণ এই বাস টার্মিনাসটি।
সোমবার এ বিষয়ে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি শুনলাম। মঙ্গলবারই এ নিয়ে চেয়ারম্যানকে রিপোর্ট দিতে বলছি। যত দ্রুত সম্ভব সংস্কারের কাজ শুরু করার ব্যবস্থা হবে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভায় করুণাময়ী বাস টার্মিনাস নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাণিজ্যিক ভাবে সেটি ব্যবহারের কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। |
নয়ের দশকে এই বাস টার্মিনাসটি গড়ে উঠেছিল রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের জমির উপরে। পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বললেন, “পরিবহণ দফতরকে বিষয়টি জানিয়েছি। কথাবার্তা চলছে। পরিবহণ দফতর আমাদের দায়িত্ব দিলে আমরাও টার্মিনাসটির সংস্কার করতে পারি।” বাম আমলে ‘জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন’ (জেএনএনইউআরএম) প্রকল্পের আওতায় বাস টার্মিনাসটির সংস্কারের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। টার্মিনাসের বিভিন্ন বাসকর্মীর অভিযোগ, প্রশাসনের সর্বস্তরে টার্মিনাসটির হাল ফেরানোর আবেদন করা হলেও এ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
বিপন কর নামে জনৈক চা বিক্রেতার অভিযোগ, ’৯৫ সালে টার্মিনাসটির যা অবস্থা ছিল, এখনও তা-ই রয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “দূরপাল্লার বাস চলাচল করে এই টার্মিনাস থেকে। যাত্রীরা মালপত্র নিয়ে এসে নামেন, অথচ, বসার তেমন জায়গা নেই। মহিলা যাত্রীদের জন্য একটি সুলভ শৌচাগারও এত বছরে কোনও সরকার তৈরি করতে পারল না। এ সব নিয়ে আমরা অনেক বার সরকারের কাছে আবেদন করলেও অবস্থা বদলায়নি।”
করুণাময়ী থেকে দক্ষিণ কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী এক সরকারি বাসের চালকের অভিযোগ, ‘‘রাতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাস টার্মিনাসে থাকতেই হয়। মশার উপদ্রবে বসা যায় না। বৃষ্টির জমা জলটুকুও এক-দু’দিন অন্তর বার করে দিলে পরিবেশ খানিকটা পরিচ্ছন্ন থাকে। এর পরে রোদ উঠলেই দুর্গন্ধ বেরোবে।”
সল্টলেক থেকে কলকাতা তো বটেই, করুণাময়ীর এই টার্মিনাস থেকে দুর্গাপুর, আসানসোল-সহ বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার জন্যও দিনের বিভিন্ন সময়ে প্রচুর বাস ছাড়ে। সারা দিন কমবেশি ১২টি রুটের বাস চলাচল করে করুণাময়ী বাস টার্মিনাস থেকে। তবু এর সামান্য রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও এ পর্যন্ত কেন কোনও পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিত্যযাত্রীরা। |