মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কার্যত আলিমুদ্দিনকে নিজের ক্ষমতা ‘দেখিয়ে দিতে’ চান সিপিএম নেতা গৌতম দেব।
আগামী ১ অক্টোবর ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে সমাবেশ করার জন্য কলকাতা পুলিশের কাছে আবেদন জানিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম। গৌতমবাবুর দাবি, ২১ জুলাই মমতা ধর্মতলায় যে সমাবেশ করেন, তিনি তার থেকেও বড় জমায়েত করবেন। আলিমুদ্দিনের ‘সবুজ সঙ্কেত’ নিয়েই গৌতমবাবু এই সমাবেশ ডাকলেও তাঁর লক্ষ্য কিন্তু আলিমুদ্দিনেরই কিছু নেতা, যাঁরা আড়ালে গৌতমবাবুর সমালোচনা করেন। ১ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব শান্তি দিবসে’ কলকাতায় মহা-মিছিল করবে রাজ্য বামফ্রন্ট। তার ঠিক এক মাস বাদে গৌতমবাবুর এই ‘মহা জমায়েতে’ লোক আসবেন শুধু উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।
সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, গত ২০ বছর জেলা রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও তাঁর নিজস্ব সাংগঠনিক দক্ষতা যে এখনও অটুট, আলিমুদ্দিনের নেতাদের তা ‘দেখিয়ে দেওয়া’ই গৌতমবাবুর অন্যতম লক্ষ্য। সিপিএমের অনেকেই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতমবাবুকে রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর উত্তরসূরি হিসেবে ভাবতে আরম্ভ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে দলের একাংশ, বিশেষ করে পশ্চিম-মেদিনীপুর ও বর্ধমান-লবির নেতাদের গৌতমবাবু দেখাতে চান, তিনি একাই ২১ জুলাই-এর পাল্টা সমাবেশ করতে সক্ষম। এ কাজে সফল হলে দলের অভ্যন্তরীন লড়াইয়ে গৌতমবাবু অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন।
’৯০-এর দশকে কংগ্রেসকে ‘চ্যালেঞ্জ’ জানিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা থেকে কলকাতায় এই রকম জমায়েত করছেন প্রয়াত সিপিএম নেতা সুভাষ চক্রবর্তী। গৌতমবাবুর মতোই সুভাষবাবুও আলিমুদ্দিনের তৎকালীন নেতাদের (বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, প্রয়াত অনিল বিশ্বাস প্রমুখ) তাঁর সাংগঠনিক ‘ক্ষমতা’ দেখিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। যদিও কলকাতায় ‘সফল’ জমায়েতের পরেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে সুভাষবাবুকে বহু বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল!
অতীতে সুভাষবাবুর ডাকা জমায়েত সফল করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতেন নেপালদেব ভট্টাচার্য। এখনও গৌতমবাবুকে সাহায্য করছেন সেই নেপালদেববাবুই। কলকাতার সমাবেশ থেকেই পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার শুরু করে দিতে চান গৌতমবাবু। সিপিএম নেতৃত্বের ধারণা, যদি পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেস, তৃণমূল ও বামফ্রন্টের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হয়, তা হলে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ ধরে রাখার একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা রয়েছে।
কেন জেলা সদর বারাসত বা অন্যত্র কেন্দ্রীয় জমায়েত না করে ধর্মতলায় করা হচ্ছে? গৌতমবাবুদের ব্যাখ্যা, জমায়েত থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিতে হলে কলকাতাতেই জমায়েত করতে হবে। মূলত আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও কৃষকদের সমস্যা নিয়ে মহাকরণে মমতার কাছে গিয়ে স্মারকলিপি দিতে চান গৌতমবাবু-সহ পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল। জমায়েত সফল করার জন্য গত দু-মাস ধরে জেলা জুড়ে সভা করছেন গৌতমবাবু ও তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতারা। গৌতমবাবুর শিবিরের বক্তব্য, কয়েকটি জমায়েতে ভাল ভিড় হলেও আলিমুদ্দিনের নেতাদের তা চোখে পড়েনি। কলকাতায় ভাল ভিড় হলে আলিমুদ্দিনে আলোচনা হবে। চাপে পড়বেন গৌতম-বিরোধীরা।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা পলিটব্যুরোর সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র কৃষক ফ্রন্টের নেতা। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতৃত্ব। আর এক পলিটব্যুরোর সদস্য নিরুপম সেনের পিছনে রয়েছেন বর্ধমান জেলা নেতৃত্ব। দুই জেলা নেতৃত্বই বড় জমায়েত করতে সক্ষম। কিন্তু তাঁদের কলকাতায় সমাবেশ করার সুবিধা ততটা নেই। অন্য দিকে ভৌগোলিক সুবিধার কারণেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্ব কলকাতায় জমায়েত করতে পারেন। আর সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নন গৌতমবাবু। বিমান-বুদ্ধকে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, ২১ জুলাইয়ের থেকেও বড় সমাবেশ হবে। এখন পুলিশ রাস্তা আটকে সভা করার অনুমতি দেয় কি না, সেটাই দেখার। গৌতমবাবু জানিয়েছেন, পুলিশের অনুমতি না পেলে তিনি হাইকোর্টে যাবেন। তাঁর প্রশ্ন, “মমতা যদি ওখানে সভা করতে পারেন, আমি পারব না কেন?” |