মাও জে দংয়ের নেতৃত্বে চিনে কমিউনিস্ট বিপ্লব ঘটে গিয়েছে প্রায় তেষট্টি বছর আগে। একাংশের মতে, তার পর অন্তত নীতিগত ভাবে নাস্তিকতায় বিশ্বাস করার কথা চিনাদের। যদিও বেশ ক’বছর ধরেই তার ব্যতিক্রম চোখে পড়ছে চিন সরকারের। চার, তেরো, চোদ্দোর মতো ‘অপয়া’ সংখ্যা যেন ক্রমশই চিনাদের অপছন্দের সংখ্যার তালিকায় উপরে উঠে আসছে। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে, অনেকেই নিজেদের গাড়ির নম্বরে ওই সংখ্যা ব্যবহার করতে রাজি নন। কেউ বা আবার বাড়ির নম্বরে ওই সংখ্যাগুলি রাখতে চান না।
এতেই সমস্যায় পড়েছে প্রশাসনের একাংশ। আপাতত তাই নতুন নির্দেশ জারি করেছে সরকার গাড়ি, বাড়ি, কোথাও কোনও ভাবেই ওই সংখ্যাগুলির ব্যবহার আটকানো যাবে না। চিনা সরকারের বার্তা কোনও অন্ধবিশ্বাসের জায়গা নেই চিনে। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত বেজিং শহরের জন্যই ওই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। পরে অবশ্য ওই নির্দেশিকা ধীরে ধীরে চিনের বাকি অংশেও জারি করা হবে।
১৩ সংখ্যাটি অনেকেই ‘অপয়া’ মনে করেন। যেমন, ইংরেজরা। লন্ডনের বিশালাকায় নাগরদোলা ‘লন্ডন আই’-তে তাই ১৩ নম্বর আসনটাই নেই।
কিন্তু ৪ বা ১৪? চিনে তো এখন এই নম্বরগুলোও ‘ব্রাত্য’। চিনা সংখ্যাতত্ত্বে (নিউমেরোলজি) এই সংখ্যাগুলিকে অপয়া ভাবা হয়। কারণ, চিনের অন্যতম ভাষা, ম্যান্ডারিনে এই সংখ্যাগুলির উচ্চারণের সঙ্গে কিছু না কিছু অশুভ ঘটনার উচ্চারণের মিল রয়েছে। যেমন, ম্যান্ডারিন ভাষায় চার সংখ্যাটির সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায় ‘মৃত্যু’ শব্দটির। তাই এই সংখ্যাগুলি পারতপক্ষে ব্যবহার করতে চান না চিনের বাসিন্দারা। কোনও কোনও বহুতল আবাসনে চার, তেরো বা চোদ্দো তলারও অস্তিত্ব নেই। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বরেও কেউ এই সংখ্যাগুলি ব্যবহার করতে চান না। পরিবর্তে আট সংখ্যাটিকে শুভ বলে মনে করেন চিনারা। তাই বেজিং অলিম্পিকও শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালের অগস্টের (আট নম্বর মাস) অষ্টম দিনটিতে। তা-ও আবার কাঁটায় কাঁটায় ঠিক রাত আটটায়।
সংখ্যার মধ্যে এ হেন বৈষম্য রুখতে সরকারের নির্দেশিকা বেজিংয়ের নতুন আবাসনে এই নম্বরগুলি ব্যবহার করতেই হবে। কোনও ভাবেই এড়ানো যাবে না ‘অপয়া’ সংখ্যার ব্যবহার।
আপাতত এ ভাবেই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নয়া ‘বিপ্লব’ শুরু করতে চলেছে চিন। |