পঞ্চাশ বছর পর আবার তাঁরা লড়াইয়ের ময়দানে! খেলা অবশ্য জাকার্তায় হচ্ছে না। এই মধ্য সত্তরে তাঁদের পায়ে বুটও নেই। তবু প্রতিপক্ষ রয়েছে। এ বার আর দক্ষিণ কোরিয়া নয়। ফাইনালে যাদের ২-১ হারিয়ে তারা জাকার্তায় সোনা জিতেছিলেন। এ বারের প্রতিপক্ষ ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। জাকার্তায় সোনাজয়ীরা কার্যত ফুটবল সংস্থার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করলেন। লড়াইয়ের প্রেক্ষাপট হল, আগামী ২১ অগস্ট নয়াদিল্লিতে নেহরু কাপ শুরু হওয়ার আগের রাতে চুনী গোস্বামীর নেতৃত্বে ১৯৬২-র সেই দলকে সংবর্ধনা দেওয়ার কথা। প্রবীণ ফুটবলাররা অনেক আগ্রহ নিয়ে এই অনুষ্ঠানের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। শোনা যাচ্ছিল, আজকাল সব ক্রীড়াসংস্থা যা করে সেই মডেলে এআইএফএফ-ও এঁদের জন্য আর্থিক পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখবে। এখন অবশ্য চুনীরা জানতে পেয়েছেন স্রেফ একটা মেমেন্টো তুলে দিয়ে ৫০ বছর আগের ঐতিহাসিক পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি দেওয়া হবে। টিমের মনোভাব হল, এই বয়সে স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার সঙ্গে লড়াই করার জন্য আর্থিক আনুকূল্যের খুব প্রয়োজন। সেই সদ্বিচ্ছা যদি ফুটবল কর্তারা না দেখান, স্রেফ ফুলের তোড়া হাতে নিতে আমরা নয়াদিল্লি যাব না। |
ফেডারেশনের অন্যতম শীর্ষ কর্তা সুব্রত দত্ত বৃহস্পতিবার বললেন, “টাকা দিতে গেলে তো কার্যকরী কমিটির বৈঠকে অনুমোদন করাতে হবে। সেটা ২১ তারিখের আগে সম্ভব নয়।” সুব্রতবাবু জানালেন, প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেলকে ধরাই কষ্টকর হয়। একমাত্র তিনি যদি হস্তক্ষেপ করেন, সমস্যা আগামী ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে মিটতে পারে। নইলে ফুটবলাররা অনুষ্ঠানে আসুন, তার পর নয় ভাবা যাবে। এই প্রস্তাবে চুনীরা রাজি নন। ফেডারেশন সচিব কুশল দাসকে ফুটবলারদের তরফে এ দিন মেল করেন চুনী গোস্বামী। মেলে তিনি লিখেছেন, “আমার টিমের আঠারো জনের মধ্যে বারো জন জীবিত। এদের সবার বয়স ৭৫ বছরের বেশি। এই বয়সে ফেডারেশনের আর্থিক আনুকূল্য পেলে অনেকের চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যাপারে সুবিধা হত। আমরা খুব হতাশ শুনে যে তার কোনও ব্যবস্থা নেই। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নয়াদিল্লির অনুষ্ঠানে যাওয়ার অক্ষমতা প্রকাশ করছি।” এ দিকে, চুনী-পিকে-বলরামরা একজোট হলেও, অরুময় নৈগম আর ইথিরাজ আনন্দবাজারকে বলেন, “আমরা অনুষ্ঠানে যাব।” এতে প্রচণ্ড রেগে যান বলরাম। রাতের দিকে চুনী জানান, অরুময়রাও অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না। শুধু যোগাযোগ করতে পারিনি চন্দ্রশেখর আর আফজালের সঙ্গে। ওদের নম্বর পাওয়া যায়নি। চুনী বলেন, “প্রশ্নটা টাকার তো নিশ্চয়ই। একই সঙ্গে সম্মানের। সব ক্রীড়াসংস্থা যখন সম্মান দেয়, ফুটবল দেবে না কেন?” পিকে উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘‘অসম্মান করাটা এখন ফেডারেশনের জলভাত হয়ে গিয়েছে।” বলরাম বলেন, “ফেডারেশন বাঁদর নাচালে মোটেও নাচব না। আমি কুকুর নই যে একটা রুপোর থালার লোভে দিল্লি ছুটব।” অরুণ ঘোষ বলছিলেন, “ওই টিমের ক’জন মাত্র ফুটবলার জীবিত আছে। তাদেরও সম্মান জানাতে কষ্ট হচ্ছে বুঝি!” রাতে চুনী বললেন, “থঙ্গরাজ আর জার্নেলকে যদি ওপরে ফোন করার সুযোগ থাকত, আমি নিশ্চিত ওরাও বলত, ক্যাপ্টেন, কেউ যেও না।
ফুটবল মহল নজিরবিহীন এই বিদ্রোহে হতবাক। ফুটবলকর্তাদের নিশ্চেষ্টতা দেখে স্তম্ভিতও বটে। |