কয়েক জন কর্মীকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে লিলুয়ার এক কারখানার মালিকের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন বালির তৃণমূল বিধায়ক সুলতান সিংহ। তাঁর অভিযোগ, মালিকপক্ষের লোকেরা তাঁকে হেনস্থা করেছে। মালিকপক্ষের তরফে বিধায়কের উপস্থিতিতে বহিরাগতেরা হাঙ্গামা বাধিয়ে চালু কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে বলে পুলিশে অভিযোগ করা হয়। মালিকপক্ষের এই অভিযোগকে সমর্থন করেছেন তৃণমূলেরই আর এক বিধায়ক অশোক ঘোষ।
বৃহস্পতিবার সকালে এর জেরে দফায় দফায় গণ্ডগোল হয় জয়সোয়াল হাসপাতাল থেকে বালি থানা পর্যন্ত। নামানো হয় পুলিশ ও র্যাফ। ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন হাওড়া সিটি পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা।
পুলিশ সূত্রে খবর, কারখানাটি বালি ও উত্তর হাওড়া বিধানসভার সীমানা এলাকা আহমেদ মামুজি স্ট্রিটে। এ দিন সেখানে কয়েক জন দলীয় কর্মীকে নিয়ে যান সুলতান সিংহ। অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে মালিকপক্ষের সংঘর্ষ বাধে। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে পাঁচ জন আটক হয়েছে। জানা গিয়েছে, তাঁরা সবাই কারখানা কর্তৃপক্ষের লোক।
|
কারখানা চত্বরে ভাঙা বাইক। —নিজস্ব চিত্র |
এ দিন বালি থানায় সুলতান বলেন, “৪৫ জন কর্মীকে আচমকা ছাঁটাই করে নতুন লোক নিয়োগ হয়। বিষয়টি জেনে কিছু দিন আগে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করি। আজকেও পুরনো কর্মীদের নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলাম।” তাঁর অভিযোগ, কারখানায় ঢোকার পরেই মালিকপক্ষের ভাড়া করা কিছু দুষ্কৃতী লাঠি, রড, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চড়াও হয়। কয়েক জন কর্মীকে বেধড়ক মারধর করা হয়। সুলতানবাবু আরও অভিযোগ করেন, “আমাদের দলেরই কিছু লোক ওই কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই গোলমাল বাধিয়েছে।”
অভিযোগ অস্বীকার করে ম্যানেজার মোহন্ত পাল বলেন, “সকালে আচমকা কয়েক জন বহিরাগত বালির বিধায়ক সুলতান সিংহকে সঙ্গে নিয়ে কারখানায় ঢুকে কর্মীদের মারধর করতে শুরু করে। ভাঙচুর চালায়। অফিসের টাকা, কর্মীদের মোবাইল লুঠ করে।” তিনি দাবি করেন, কোনও কর্মীকেই বসিয়ে দেওয়া হয়নি। বিধায়কও তাঁদের সঙ্গে কোনও আলোচনায় বসেননি।
খবর পেয়ে কারখানায় আসেন উত্তর হাওড়ার বিধায়ক তৃণমূলের অশোক ঘোষ। তিনি বলেন, “বাইরের কিছু লোক বালির বিধায়ককে নিয়ে কারখানায় এসে হামলা চালিয়েছে বলে শুনলাম। তাঁরা যদি নতুন ইউনিয়ন করতে চান, তবে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করুন। এখানকার সব শ্রমিকই আমার উত্তর হাওড়া কেন্দ্রের তৃণমূল কর্মী।” দলীয় কর্মীদের জড়িত থাকার ব্যাপারে সুলতান সিংহের মন্তব্যের বিষয়ে অশোকবাবু বলেন, “ওঁর সঙ্গে ঘটনার পরে কথা হয়নি। তাঁর বালি কেন্দ্রের যদি কেউ জড়িত থাকে, তবে উনি ব্যবস্থা নেবেন। আমার কেন্দ্রের কেউ থাকলে আমি ব্যবস্থা নেব।”
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি মোটরবাইক ভাঙচুর করা হয়েছে। অফিস ঘর লণ্ডভণ্ড। কয়েকটি চেয়ার, টেবিল ভাঙা অবস্থায় পড়ে। হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (সদর) নিশাদ পারভেজ বলেন, “মালিকপক্ষের তরফে অভিযোগ পেয়েছি। পুরো ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” |