যেন ২৪ ঘণ্টাই ‘ভিজিটিং আওয়ার্স’! হাসপাতালের কোনও ওয়ার্ডে কে-কখন ঢুকছে, কখন বেরোচ্ছেতার ঠিকঠিকানা নেই। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এই পরিস্থিতির সুযোগে প্রসূতি বিভাগে ঢুকে শুক্রবার এক সদ্যোজাত শিশুপুত্রকে চুরির চেষ্টার অভিযোগ উঠল এক মহিলার বিরুদ্ধে। তবে প্রসূতি বিভাগের অন্য রোগিণীদের আত্মীয়েরা ওই মহিলাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে রূপসেনা বিবি ওরফে রূপা বিবি নামে ওই মহিলাকে। তাঁর বাড়ি, গঙ্গারামপুরের ভাঙাপাড়ায়। মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ইংরেজবাজার থানায় ওই মহিলার বিরুদ্ধে শিশু চুরির চেষ্টার অভিযোগ জানিয়েছেন।
ইংরেজবাজারের টিপাজানির গোবর্ধন হালদারের স্ত্রী অঞ্জনা হালদারকে গত শনিবার মালদহ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত সোমবার সেখানে অঞ্জনাদেবীর ছেলে হয়। অঞ্জনাদেবীর অভিযোগ, “এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ এক মহিলা এসে বলতে থাকেন, ‘খুব সুন্দর ছেলে হয়েছে’। হঠাৎ উনি ছেলেকে বেড থেকে কোলে নিয়ে দরজার দিকে হাঁটা দেন। সন্দেহ হওয়ায় চিৎকার শুরু করি। তখন ওই মহিলা দৌড় মারেন।”
প্রসূতি বিভাগে সে সময় হাজির ছিলেন অন্য রোগিণীর সঙ্গে দেখা করতে আসা হেনা বিবি, সালমা বিবিরা। তাঁরা বলেন, “ভেবেছিলাম, ওই প্রসূতির কোনও আত্মীয় বাচ্চাটাকে ঘোরাতে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বাচ্চার মা’র চিৎকারে বুঝি, ব্যাপারটা অন্য। তাড়া করে ওই মহিলাকে ধরা হয়।”
ঘটনার পরে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রোগীর পরিবারের লোকজন।
সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন হাসপাতাল সুপার হিমাদ্রী আড়ি। তিনি জানান, হাসপাতালের আটটি ওয়ার্ডে প্রায় সব সময় হাজারের বেশি রোগী থাকেন। নিরাপত্তারক্ষী যাঁরা আছেন, তাঁরা বহিরাগতদের ভিড় সামলাতে হিমসিম খান। তাঁর কথায়, “হাসপাতালের নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিকঠাক রাখতে গেলে ৫৮ জন নিরাপত্তারক্ষীর প্রয়োজন। আছেন মাত্র ২৮ জন। এই বিশাল হাসপাতাল ওই সংখ্যক কর্মী দিয়ে সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।”
মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ উচ্ছল ভদ্র বলেছেন, “প্রতিটি ওয়ার্ডে এত লোক ঢোকে এবং দীর্ঘ ক্ষণ থাকে যে মনে হয় ২৪ ঘণ্টাই ‘ভিজিটিং আওয়ার্স’। এটা বন্ধ করতে হবে। প্রসূতি বিভাগ-সহ কয়েকটি ওয়ার্ডে সিসিটিভি (ক্লোজড-সার্কিট টিভি) বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের সমস্ত কর্মী, চিকিৎসক-নার্সদের পরিচয়পত্র দিয়ে, তা ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।” পাশাপাশি, ওয়ার্ডে রোগীর আত্মীয়দের ঢোকা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও অধ্যক্ষ জানিয়েছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, জেরায় রূপা বিবি তাদের কাছে দাবি করেছেন, এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখাতে তিনি এ দিন মালদহ শহরে এসেছিলেন। সেখান থেকে হাসপাতালে যান প্রসূতি বিভাগে ‘চিকিৎসাধীন’ তাঁর মাসতুতো বোনের সদ্যোজাত শিশুকে দেখতে। পরে অঞ্জনাদেবীর ছেলেকে কোলে নিয়ে তিনি আদর করছিলেন। চুরির চেষ্টা করেননি।
তবে মালদহ শহরের ওই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ পুলিশকে জানিয়েছেন, রূপসেনা বা রূপা বিবি নামে কেউ তাঁকে এ দিন দেখাতে আসেননি। পুলিশের কাছে তাঁর মহিলা মাসতুতো বোনের যে নাম বলেছেন, সেই নামে হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে কেউ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন সুপার।
জেলা পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই মহিলাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।” |