আখ খেয়ে দু’টি গরু মারল দাঁতাল
যেন মাঝে-মধ্যে সামান্য হাওয়াবদল। বা দূর থেকে এক ঝলক শহর দেখে যাওয়া। একটু লুকোচুরি খেলে আবার ফিরে যাওয়া।
বাড়ির সামনেই একটি দোকান চালান দুর্গাপুরের মানা মোড়ের বাসিন্দা ধুড়া চৌধুরী। শুক্রবার ভোরের দিকে ধুপধাপ শব্দ পেয়ে চোর ঢুকেছে ভেবে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি। চোখ কচলে যা দেখলেন, তাতে তো চক্ষু চড়কগাছ। প্রকান্ড এক দাঁতাল শুঁড় দিয়ে বিস্কুট, লজেন্সের কাচের পাত্রগুলি এক এক করে ফেলছে। বাড়িতে খবর দিতেই ধুড়াবাবুর বড় ছেলে চূড়া ইট ছুড়লেন ছাদ থেকে। পলকের মধ্যে অন্ধকারে মিশে গেল দাঁতাল।
সকালে ধানজমিতে গিয়ে রাজকুমার রায় দেখেন, সদ্য রোয়া ধানের বেশ কিছুটা দাঁতালের পায়ের চাপে শেষ। আখের খেতে গিয়ে বুঝলেন, যাওয়ার পথে দাঁতাল সামান্য আখের স্বাদ নিয়ে গিয়েছে। মাঠের পাশে থাকা রাতপাহারার ঝুপড়িটিও ভেঙে দিয়েছে সে। কিন্তু সে কোথায়? সকাল ৭টা নাগাদ তাকে দেখা গিয়েছে, দামোদরের মানায়। তার পর আর দেখা নেই। বেলা বাড়তে অবশ্য খবর এল, দামোদরের মাঝের চরে দাঁতের গুঁতোয় দু’টি গরুকে মেরেছে হাতিটি। সব মিলিয়ে, শুক্রবার ওয়ারিয়া মানা এলাকার বাসিন্দাদের সারা দিন ধরে আতঙ্কে রাখল একটি দাঁতাল। রাতেও অস্বস্তিতে রয়েছেন তাঁরা, যদি ফের সে আসে।
তছনছ খেতের পাহারাদারের ঘর। —নিজস্ব চিত্র।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দাঁতাল সম্ভবত রেসিডেন্ট হাতি। থাকে বড়জোড়ার জঙ্গলে। মাঝে-মধ্যেই খাবারের লোভ বা একটু বৈচিত্র্যের খোঁজে দামোদর পেরিয়ে চলে আসে দুর্গাপুরের পাড়ে। দু’এক দিন কাটিয়ে যায় দামোদরের মানায়। সেখানকার জমিতে নানা রকম ফসল কিছুটা খেয়ে, কিছুটা নষ্ট করে ফিরে যায় সে। কখনও আপন খেয়ালে, কখনও বা বাসিন্দাদের তাড়া খেয়ে। এখনও পর্যন্ত হাতিটি খুব বেশি ক্ষতি করেনি বলেই বন দফতর সূত্রে জানা যায়। তবে গত বছর এপ্রিলে ৫টি বড় ও দু’টি ছোট হাতির দল ঢুকে এসে পড়েছিল আর একটু ভিতরে। রাতুরিয়া, অঙ্গদপুর গ্রামের পিছনে, দুর্গাপুর কেমিক্যালস কারখানার বাংলোর মাঠে ঘুরে বেড়ানো হাতির দলকে শেষ পর্যন্ত বন দফতরের হুলাপার্টি দামোদর পার করায়।
বড়জোড়ার দাঁতালের হামলায় এখনও পর্যন্ত তেমন কেউ জখম না হলেও আউশগ্রাম বা কাঁকসার জঙ্গলে থাকা রেসিডেন্ট বা দলছুট হাতির হানায় অবশ্য মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের জুনে দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের নাচন গ্রামের বৃদ্ধা ঊর্মিলা মণ্ডলের বাড়ির একাংশ ভেঙে মেঝেতে রাখা ধান খেয়ে যায় হাতি। সে বছর জুলাইয়ে উঠোনে শুয়ে ঘুমনোর সময়ে হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় কাঁকসায় চুয়া গ্রামের জামবনি আদিবাসী পাড়ার বৃদ্ধ ভরত মুর্মুর। গত নভেম্বরে কাঁকসার ঝিনুকগড়িয়া গ্রামের দুই বাসিন্দা হাতির লাথিতে জখম হন।
বন দফতর জানায়, গত কয়েক বছর ধরে দলছুট একটি হাতি এলাকায় ঘোরাফেরা করছে। সেটি মাঝে-মাঝেই আউশগ্রাম ও কাঁকসার বিভিন্ন গ্রামে ঢুঁ মারে। গাছপালা ভেঙে দেয়। একবার ভাল্কি মাচানেও তাণ্ডব চালিয়েছিল সেটি। বন দফতর গভীর জঙ্গলে পাঠিয়ে দিলেও কিছু দিন পরপরই সে ফিরে আসে জনপদে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.