‘মিস কৌতূহল’ মঙ্গলে, তবে আগামী কয়েক দিন নাসার ‘কিউরিওসিটি’ পৃথিবীর দিকেও। ২৩ অগস্ট পৃথিবীর ‘রেডিয়েশন বেল্টে’ তারা পাঠাতে চলেছে দুই যমজ পাহারাদারকে।
অভিযান ‘আরবিএসপি’, পুরো কথায় ‘রেডিয়েশন বেল্ট স্টর্ম প্রোবস’। তেজস্ক্রিয় বিকিরণের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে ‘রেডিয়েশন বেল্টে’ এক জোড়া
মহাকাশযানকে পাঠাচ্ছে নাসা। আগামী দু’বছর সেখানেই থাকবে তারা।
কী এই রেডিয়েশন বেল্ট?
মাধ্যাকর্ষণ বলের টানে পৃথিবীকে ঘিরে রয়েছে উচ্চশক্তিসম্পন্ন ইলেকট্রন এবং প্রোটন কণার অদৃশ্য দু’টি বৃত্ত। বিজ্ঞানী জেমস ভ্যান অ্যালেনের নাম অনুসারে এদের ‘ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট’ও বলা হয়। সূর্যে মাঝেমধ্যেই ছোটবড় ঝড় লেগে থাকে। এই সৌরঝড়ের ফলেই ‘রেডিয়েশন বেল্টে’ এসে জমা হয় ইলেকট্রন-প্রোটন কণার স্তর। কিছুটা কসমিক রশ্মির প্রভাবও থাকে। |
সৌরঝড়ের প্রভাবে পৃথিবী ও পৃথিবীর চারপাশের আবহমণ্ডলে চুপিসাড়ে পরিবর্তন ঘটে চলেছে। মহাকাশের আবহেও প্রভাব ফেলছে সৌরঝড়, বিস্ফোরণ, তেজস্ক্রিয় কণার উদগীরণ। বদলাচ্ছে রেডিয়েশন বেল্টের চরিত্রও। এই বেল্টের হালহকিকত খতিয়ে দেখতে নাসার ‘আরবিএসপি’ অভিযান। নাসার হেলিওফিজিক্স বিভাগের প্রধান বারবারা জাইলস বলেন, “সূর্যের বদলে যাওয়া আচরণ ও পৃথিবীর রেডিয়েশন বেল্টে তার প্রভাব বিশ্লেষণ করাই হবে জোড়া-যানের মূল কাজ।”
প্রশ্ন হল তেজস্ক্রিয় বিকিরণ নিয়ে বিজ্ঞানীদের কেন এত মাথাব্যথা?
রেডিয়েশন বেল্টের বাড়বাড়ন্ত তেজে মেরু অঞ্চলে যাতায়াতের সময় বিপদের মুখে পড়তে পারে বিমানযাত্রী এবং চালকেরা। এ ছাড়া কৃত্রিম উপগ্রহের কাজ করার ক্ষমতাও নষ্ট করে দিতে পারে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ। এমনকী বিকল হয়ে যেতে পারে বিদ্যুৎ গ্রিডও। বসার ঘরের ‘বোকা বাক্স’ থেকে টেলিফোন, যে কোনও দিন সমস্যার মুখে পড়তে পারে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিজ্ঞানীদের কথায়, পরিস্থিতি সামলানোর একমাত্র উপায় হল মহাকাশ আর পৃথিবীর রেডিয়েশন বেল্টে কড়া নজর রাখা। ‘আরবিএসপি’-র বিজ্ঞানী ব্যারি মক বলেন, “ভ্যান অ্যালেনের রেডিয়েশন বেল্টের স্বভাব ভারি খামখেয়ালি। আগে থেকে বোঝা দায়। আমাদের লক্ষ্য হল পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রকে গবেষণাগারের মতো ব্যবহার করে মহাকাশের চরিত্র ঠাহর করা। খতিয়ে দেখা, কী ভাবে
তৈরি হচ্ছে রাসায়নিক বিকিরণ, কী ভাবে
বাড়ছে তার তেজ, আর কী ভাবেই বা তা ছড়িয়ে পড়ছে মহাবিশ্বে। ‘অ্যাটলাস ভি’ রকেটে চেপে মহাকাশ পাড়ি দিতে আরও ১৩ দিন বাকি। তাই ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল মহাকাশযান উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে আপাতত সময়ের অপেক্ষায় দুই ‘জোড়া-যান।’ বারবারার কথায় “নজর এখন মঙ্গল থেকে ফের পৃথিবীতে।” |