জেলা কমিটির বৈঠকে কি আগামী রবিবার মুখোমুখি হবেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং রেজ্জাক মোল্লা? প্রবল জল্পনা শুরু হয়েছে সিপিএমে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জেলা কমিটির বর্ধিত সভায় এমনিতে রেজ্জাকের হাজির থাকারই কথা। কিন্তু বৈঠকে যে নেতৃত্ব দেবেন বুদ্ধবাবু! যাঁর সঙ্গে দলের অন্দরে রেজ্জাকের ‘সম্পর্ক’ সুবিদিত।
বারুইপুর জেলা সিপিএম অফিসে ওই বৈঠকে জেলা কমিটির সদস্য ছাড়াও জোনাল স্তরের সদস্যদের আমন্ত্রণ করা হয়েছে। সম্প্রতি বুদ্ধবাবু কয়েকটি জেলায় গিয়ে ওই ধরনের বর্ধিত বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। সংগঠন মজবুত করতে দলীয় সদস্যদের নানা পরামর্শও দেন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে সংগঠন জোরদার করতেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন জেলায় ওই সফর।
কিন্তু রেজ্জাক কি ওই বৈঠকে থাকবেন? কৃষকনেতা হিসাবে পঞ্চায়েত ভোটে যাঁর ‘গুরুত্ব’ স্বীকার করে দলও?
এমনিতে রেজ্জাক ইদানীং আলিমুদ্দিনে রাজ্য কমিটির বৈঠকেও হাজির হন না। বিভিন্ন অজুহাতে বৈঠক এড়িয়ে যান। তবে বিধানসভায় নিয়মিত থাকেন। রবিবার কি তিনি থাকছেন? জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য জানিয়েছেন, রেজ্জাক মোল্লা সম্ভবত ওই বৈঠকে হাজির থাকবেন না। ওই সদস্যর বক্তব্য, “ঘনিষ্ঠ মহলে রেজ্জাক’দা জানিয়েছেন, সংগঠনের বিষয়ে তাঁর আর নতুন কোনও পরামর্শের প্রয়োজন নেই। তা ছাড়া, শুধু ঘরে বসে মিটিং করে সংগঠন জোরদার করা যায় না! এতে নিচুতলার কর্মীদের সমস্যা বোঝা যায় না। মাঠে নেমে সরাসরি কথা বললে বাস্তব পরিস্থিতি বোঝা যায়। বিধানসভা ভোটের পর থেকে যেমন তিনি নিয়মিত তাঁর এলাকায় (ক্যানিং ও ভাঙড়) গিয়ে বৈঠক করছেন।”
বিধানসভা ভোটে বামফ্রন্টের ভরাডুবির জন্য বুদ্ধবাবুকে প্রকাশ্যেই কটাক্ষ করেছিলেন রেজ্জাক। সরকারে থাকার সময়েও বিভিন্ন প্রশ্নে বুদ্ধবাবু এবং প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ হয়েছে। যা নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে নিজের উষ্মা গোপন করেননি রেজ্জাক। গত কয়েক মাস রাজ্য কমিটির বৈঠকেও তিনি যাননি। শেষ রাজ্য কমিটির বৈঠকে মাত্র কিছুক্ষণ ছিলেন। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য যাকে ‘বুড়ি ছোঁওয়া’ বলে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু জেলা সিপিএম সূত্রের খবর, রেজ্জাক দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কৃষকসভা থেকে শুরু করে সিপিএম এবং বামফ্রন্টের সব বৈঠক ও সভায় থেকেছেন। বিধানসভা ভোটের পর থেকেই রাজ্য কমিটির নেতাদের কিছুটা এড়িয়ে চলা শুরু করেছেন রেজ্জাক। সেই থেকেই তিনি বুদ্ধবাবুর মুখোমুখি হবেন কিনা, তা নিয়ে যাবতীয় জল্পনা।
প্রশ্ন করা হলে রেজ্জাক বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, “ক্যানিং ও ভাঙড় এলাকায় তৃণমূল লাগাতার সন্ত্রাস করছে। নিচুতলার সিপিএম কর্মীদের মারধর করছে। আমি সব সময় তাঁদের থাকার পাশে থাকার চেষ্টা করছি।” একাধিক জেলা কমিটির সদস্যকে এই কথাই বলেছেন তিনি। যাঁদের কয়েকজনের বক্তব্য, বৈঠকে যে তিনি থাকবেন না, তা এই ভাবে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিচ্ছেন রেজ্জাক। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “রেজ্জাক মোল্লা খুব একরোখা। বৈঠকে সম্ভবত তিনি থাকবেন না।” জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেন, “আমি তো জানি সব আমন্ত্রিত সদস্যই বুদ্ধবাবুর নেতৃত্বে বৈঠকে থাকবেন।” রাজ্য কমিটির এক সদস্যের আশাবাদী বক্তব্য, “রেজ্জাক সাহেব যে একরোখা, তা আমরাও জানি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বিমান বসু ও দলীয় নেতাদের অনুরোধে তিনি নকশালপন্থীদের আন্দোলনে সিঙ্গুর যাওয়া বাতিল করেছিলেন। এ ক্ষেত্রে কী হয়, সেটা দেখার।” |