আট বছর আগের এক দিনের ‘কলঙ্ক’ থেকে অবশেষে মুক্তি। খুনের চেষ্টার অভিযোগে ধৃত এক যুবককে বেকসুর খালাস করল আদালত। উল্টে মিথ্যে অভিযোগে এক নিরপরাধকে ‘ফাঁসানোর’ জন্য আঙুল উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে।
আদালতের নথি বলছে, রাতে বন্ধুর বাড়ি থেকে ফেরার সময়ে পুলিশের ‘খপ্পরে’ পড়েছিলেন সুশান্ত দাস। অভিযোগ, সদ্য মাধ্যমিক পাশ ওই তরুণ রিজেন্ট পার্ক থানার পুলিশকে ‘ঘুষ’ দিতে অস্বীকার করায় তাঁকে মিথ্যে অভিযোগে জড়ানোর হুমকি দেওয়া হয়। হুমকিতেই শেষ নয়। মুর অ্যাভিনিউয়ের এক বাড়িতে ঢুকে গৃহকর্তাকে খুনের চেষ্টার মামলায় তাঁকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩১৩ ধারায় এই বৃত্তান্ত আদালতকে জানিয়ে সুশান্তের দাবি, ঘুষ না-দেওয়ায় পুলিশের আক্রোশের শিকার হয়েছিলেন তিনি।
সোমবার আলিপুর আদালতের রায়ে বেকসুর খালাস পেয়েছেন সুশান্ত। আলিপুরের সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শশীকলা বসু তাঁর রায়ে জানিয়েছেন, সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবেই ওঁকে রেহাই দেওয়া হল। শুনে এজলাসে হাজির সুশান্ত ও তাঁর বৃদ্ধা মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ঠিক কী হয়েছিল সে দিন?
আদালতের নথি বলছে, ২০০৪-এর ১৮ নভেম্বর মুর অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা অশোক চক্রবর্তীর বাড়িতে চড়াও হয়েছিল কয়েকটি ছেলে। গৃহকর্ত্রী অনিতাদেবী বাড়িতে ছিলেন না। তিনি ফিরে দেখেন, তাঁর স্বামী সংজ্ঞাহীন হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেয় পড়ে। পরে অনিতাদেবী ও তাঁদের গাড়ির চালক সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে, এসি-মেকানিকের ভেক ধরে দুষ্কৃতীরা বাড়িতে ঢুকেছিল। অনিতাদেবী তাঁদের ক’জনকে ঢুকতে ও বেরোতেও দেখেছিলেন। ৬৪ বছরের অশোকবাবু আদালতে তাঁর সাক্ষ্যে বলেছিলেন, ‘হামলাকারী’রা ওই তল্লাটে যথেষ্ট প্রভাবশালী। সম্পত্তি-সংক্রান্ত বিবাদের জেরে তাঁকে ওরা লোহার রড দিয়ে মেরেছিল।
আর এই মামলাতেই পুলিশ জড়িয়েছিল সুশান্তকে, যার পক্ষে কোনও প্রমাণ মেলেনি বলে জানান তাঁর আইনজীবী শ্যামলকান্তি বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্যামলবাবুর কথায়, “সুশান্তের তখন সবে আঠারো বছর। একেবারে রোগা-পাতলা চেহারা। আসল অপরাধীদের আড়াল করতে ওকে ফাঁসানো হয়েছিল।” সুশান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আদালতও অবশ্য গোড়া থেকেই সন্দিহান ছিল। গ্রেফতারির দু’দিন বাদে তিনি জামিনে ছাড়া পেয়ে যান। আর মুর অ্যাভিনিউয়ের ওই ঘটনার মামলার বিচার আট বছর পরে শেষ হয়েছে। সুশান্তের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ ধোপে টেকেনি।
বলা বাহুল্য, ‘আসামি’র তকমা নিয়ে এই আটটা বছর পেরিয়ে আসা সুশান্তের পক্ষে খুব সহজ হয়নি। মুখচোরা রোগা ছেলেটি চুপচাপ এজলাসে এসে বসে থাকতেন। কারও সঙ্গে বিশেষ কথা বলতেন না। তবে যখন যেমন দরকার, আদালতে নিজের বক্তব্য দৃঢ় ভাবে জানিয়েছেন।
চূড়ান্ত রায়ের পরেই তাঁকে আবেগে বেসামাল হতে দেখা গেল। মুক্তির আনন্দে। |