ছাদ থেকে যখন-তখন খসে পড়ছে চাঙর। দেওয়ালে ধরেছে ফাটল। কুলটির বরাকর মারোয়ারি বিদ্যালয়ের এমনই হাল। অভিযোগ, চার ধরে ধরে দাবি জানালেও স্কুলটি সংস্কারের জন্য সরকারি সাহায্য মেলেনি। একাধিক বার চিঠি পাঠানো হলেও সর্বশিক্ষা মিশনের তরফে কোনও আর্থিক অনুদান মেলেনি। নড়বড়ে ক্লাসরুমে বসেই পড়াশোনা করতে বাধ্য হচ্ছে পড়ুয়ারা। কেউ কেউ আবার ভয়ে স্কুলে যাওয়াও বন্ধ করে দিচ্ছে।
প্রায় সত্তর বছরের পুরনো এই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা হাজারখানেক। আসানসোল শিল্পাঞ্চলের এই স্কুলটিতেই বাংলা ও হিন্দি মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করে। সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ও পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ অনুমোদিত এই স্কুলের মূল সমস্যা বিপজ্জনক ক্লাসঘর। দীর্ঘ দিন সরকারি অর্থ সাহায্য না মেলায় বহু বছর ধরে শ্রেণিকক্ষগুলির সংস্কার হয়নি। ফলে স্কুল ভবনটির দোতলার ছ’টি ঘর পুরোপুরি খারাপ হয়ে গিয়েছে। ছাদের বেশির ভাগ জায়গা থেকে চাঙর খসে পড়ে। কয়েকটি ঘরের ছাদের অর্ধেক অংশই ঝুলে পড়েছে। দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক রঘুনাথ সিংহের দাবি, “গত চার বছর ধরে আমরা সরকারের বিভিন্ন স্তরে ও সাংসদ, বিধায়ক, পুর কর্তৃপক্ষকে আর্থিক সাহায্য চেয়ে আবেদন করেছি। কেউ আমাদের কথায় কর্ণপাত করেননি। শিক্ষা দফতরের অধিকর্তা থেকে জেলা স্কুল পরিদর্শক প্রত্যেককেই একাধিক বার চিঠি লিখে আবেদন করা হয়েছে। আর্থিক অনুদান চাওয়া হয়েছে সর্বশিক্ষা মিশন, সাংসদ, বিধায়ক, পুরসভার কাছেও। কোনও ফল মেলেনি।’’ |
রঘুনাথবাবুর কথায়, “প্রতিদিন আমরা পালি করে কয়েকটি ক্লাসের পঠন-পাঠন বন্ধ করে দিচ্ছি। এতে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ক্ষতি হচছে। কিন্তু ওই বিপজ্জনক ক্লাসঘরগুলিও আর ব্যবহার করা যাচ্ছে না। যে কোনও দিন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
বর্ধমান জেলার সর্বশিক্ষা মিশনের প্রজেক্ট অফিসার সুদেষ্ণা মিত্র। চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগর করা যায়নি। ফলে সর্বশিক্ষা মিশনের আর্থিক অনুদান কেন মেলেনি, তার উত্তর মেলেনি। প্রধান শিক্ষকের দাবি, “জেলা স্কুল পরিদর্শককেও বিষয়টি একাধিক বার জানানো হয়েছে।” যদিও এ কথা অস্বীকার করেছেন জেলা স্কুল পরিদর্শক নীলিমা গিরি। তাঁর দাবি, “এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। খোঁজখবর নিচ্ছি। সর্বশিক্ষা মিশনের খাতে কিছু অর্থ সাহায্য করার ব্যবস্থা করব।”
কুলটির পুরপ্রধান তথা এলাকার বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “ক্লাসঘরগুলির এতটা খারাপ অবস্থা বলে জানান ছিল না।” তাঁর আশ্বাস, “রাজ্য শিক্ষা দফতরের সঙ্গে কথা বলে ভবনটি সংস্কারের জন্য অর্থ সাহায্য আনতে চেষ্টা করব।”
কিন্তু এ সব আশ্বাসে আর মন গলছে না পড়ুয়াদের। অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রাহুল বাউরি বলে, “পড়াশোনা করতে করতে মাঝেমধ্যেই ছাদের চাঙর খসে পড়ে। খুব ভয় পেয়ে যাই।” নবম শ্রেণির সমিত রুইদাসের দাবি,“ছাদ ভেঙে পড়ার ভয়ে অনেক সময় পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে।”
স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক তারকেশ্বর সিংহের দাবি, “আমরা চার বছর ধরে অনেক আবেদন করেছি। কোনও ফল পাইনি। এ বার ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে নামব।” তিনি দাবি করেন, সম্প্রতি পরিচালন সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দিন কয়েকের মধ্যেই শেষ বারের মতো অর্থ সাহায্য চেয়ে শিক্ষা দফতরকে চিঠি পাঠানো হবে। এক মাসের মধ্যে ইতিবাচক সারা না মিললে আন্দোলনে নামা হবে। |