সাইনা নেহওয়াল হেরে আর বিজেন্দ্র সিংহ জিতে অলিম্পিক পদকের থেকে এক ধাপ দূরে থাকলেন।
শুক্রবার লন্ডন গেমসের সেমিফাইনালে ভারতের সর্বকালের সেরা মেয়ে ব্যাডমিন্টন তারকা সাইনা চিনের বিশ্বসেরা ইহান ওয়াংয়ের কাছে মাত্র ৪২ মিনিটে ১৩-২১, ১৩-২১ এক রকম উড়ে গেলেও দেশকে পদক দেওয়ার সম্ভাবনা থেকে ছিটকে যাননি। শনিবার ব্রোঞ্জ পদকের লড়াইয়ে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা আর এক চিনা জিন ওয়াংকে হারালে সাইনা ইতিহাস গড়বেন।
ভিওয়ানির সুদর্শন বক্সার বিজেন্দ্র আবার শনিবার মিডলওয়েট (৭৫ কেজি) বিভাগে কোয়ার্টার ফাইনাল লড়াইয়ে জিতে সেমিফাইনালে উঠতে পারলেই উপর্যুপরি দ্বিতীয় অলিম্পিক ব্রোঞ্জ পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে যাবেন। যে নজির অলিম্পিক ইতিহাসে আজ পর্যন্ত কোনও ভারতীয় ক্রীড়াবিদের কোনও ব্যক্তিগত ইভেন্টে নেই। বৃহস্পতিবার ভারতীয় সময় মধ্যরাতে বিজেন্দ্র প্রি-কোয়ার্টারে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে আমেরিকার টেরেল গাউশা-কে মাত্র এক পয়েন্টে (১৬-১৫) হারান। শেষ চারে ওঠার লড়াইয়ে বিজেন্দ্রর প্রতিপক্ষ উজবেকিস্তানের আতোয়েভ। |
“কোর্টে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আজ অবিশ্বাস্য দ্রুত ছিল। সোজা কথা, ওয়াংয়ের গতি সামলানো আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল,” শীর্ষ বাছাইয়ের কাছে প্রায় বিনা যুদ্ধে হেরে গিয়ে বলেছেন চতুর্থ বাছাই সাইনা। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে পাঁচ নম্বরে থাকা হায়দরাবাদিকে এ দিন ওয়েম্বলি এরিনায় এক-এক সময় কিছুটা মন্থর এবং ক্লান্তও দেখিয়েছে। আঠারো ঘণ্টার মধ্যে অলিম্পিকের মতো মঞ্চে কোয়ার্টার ফাইনাল-সেমিফাইনাল খেলার ধকলটা কি খুব বেশি হয়ে গেল? সাইনা প্রথমে “আমি আজ কোর্টে ভাল নড়াচড়া করতে পারিনি, ইহান সেটার পুরো ফায়দা তুলেছে,” বলার পর যোগ করেছেন, “তবে আমি কোনও অজুহাত দিচ্ছি না। এমনকী আঠারো ঘণ্টার মধ্যে দু’টো বড় ম্যাচ খেলতে হওয়াটাও কোনও ব্যাপার নয়। যথেষ্ট ‘রিকভারি’ সময় পেয়েছি।” সাইনা বরং বলছেন, “আমি প্রচণ্ড চেষ্টা করেছি, কিন্তু পাশাপাশি অনেক আনফোসর্ড এরর-ও করেছি।” ইহান এতটাই দ্রুত এবং আক্রমণাত্মক ছিলেন যে, সাইনার খেলা দীর্ঘতম র্যালিরও আয়ু ছিল মাত্র ৩৮ সেকেন্ড। গড়ে ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই এক-একটা র্যালি শেষ করে দিয়ে ইহান পয়েন্ট কুড়িয়েছেন।
অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, ওয়েম্বলি ফুটবল স্টেডিয়াম চত্বরে তৈরি অলিম্পিক ব্যাডমিন্টন এরিনায় এশীয় টুর্নামেন্টগুলোর তুলনায় কর্ক সামান্য মন্থর গতিতে যাচ্ছে। ফলে সাইনার সুবিধে। কিন্তু ইহান তুলনায় সামান্য ভারী কর্কেও অবিশ্বাস্য আক্রমণাত্মক এবং দ্রুত গেম খেলে অবাক করে দিয়েছেন। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম চার স্থানে থাকা চার চিনা প্রতিপক্ষের মধ্যে ইহানকে এখনও ৬টা সাক্ষাতে এক বারও হারাতে পারলেন না বাইশ বছর বয়সি সাইনা। ব্রোঞ্জের লড়াইয়ে যে চিনা প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে নামবেন, সেই জিন ওয়াংয়ের বিরুদ্ধেও ছ’বারের সাক্ষাতে সাইনা পিছিয়ে (২-৪)। বস্তুত শীর্ষস্থানীয় চিনা মেয়েদের বিরুদ্ধে ‘হেড-টু-হেড’-এ সাইনা একমাত্র শিজিয়ান ওয়াংয়ের বিরুদ্ধে এগিয়ে (৩-১)। কিন্তু সাইনার অলিম্পিক পদক আটকাতে এবং লন্ডন থেকে নিজেরা মেয়েদের ব্যাডমিন্টনের সব পদক কুড়োতে চিন শেষ মুহূর্তে শিজিয়ানকে দল থেকে বাদ দেয়।
সাইনার মতোই ব্রোঞ্জ পদকের দোড়গোড়ায় দাঁড়ানো বিজেন্দ্র আবার রীতিমতো উত্তেজিত। বেজিং অলিম্পিকের ব্রোঞ্জজয়ী ভারতীয় বক্সার গত রাতে জিতে উঠে বলেছেন, “রিংয়েও আমি যথেষ্ট উত্তেজিত ছিলাম। এখন স্বীকার করছি, প্রতিটা রাউন্ড শেষে আমাকে কোচেরা সাবধান করছিলেন, শান্ত হও, না হলে লড়াই থেকে ছিটকে যাবে। কিন্তু আমি মনে করি উত্তেজিত থাকলেও আমি আমার প্রতিদ্বন্দ্বীর শক্তি-দুর্বলতা বুঝতে কোনও ভুল করিনি। আমার দরকার ছিল শেষ রাউন্ডে নিজে কোনও ভুল না করা। সেটা মনে হয় পেরেছি।” এক্সেল এরিনায় বিজেন্দ্রর লড়াইয়ের সময় গ্যালারি জুড়ে ‘ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া’ চিৎকার হয়তো প্রাক্তন বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর ভারতীয় বক্সারকে আরও বেশি তাতিয়ে দিয়েছিল। “গোটা ভারত রাত জেগে টিভিতে আমাকে দেখছে। আমার কর্তব্য হল দেশবাসীর আমায় নিয়ে প্রত্যাশার মূল্য দেওয়া,” বলেছেন বিজেন্দ্র।
অ্যাথলেটিক্স এ দিন শুরু হওয়ামাত্র পদকের দাবিদার কৃষ্ণা পুনিয়া ডিসকাসের ফাইনালে উঠলেন। কোয়ালিফাইংয়ে ভারতীয় মেয়ে ছোড়েন ৬৩.৫ মিটার। তাতেই সহজে ফাইনালের টিকিট পেয়ে যান তিনি। তবে শটপাটে ওমপ্রকাশ নিজের গ্রুপে দশম (১৯.৮৬ মিটার) হয়ে ছিটকে গিয়েছেন। মেয়েদের ট্রিপল জাম্পে ময়ূখা জনি-ও (নিজের গ্রুপে ১৩তম) ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ। আর একমাত্র ভারতীয় সাঁতারু গগন উলালমত পনেরোশো মিটার ফ্রিস্টাইলে সব হিট মিলিয়ে সবার শেষে (১৬মিঃ ৩১.০৪ সেঃ) পান। |