‘‘আসব স্যার?’’
উত্তরের অপেক্ষা না করে যুবক এ বার ঢুকে আসেন বিডিও’র ঘরে, বলেন, ‘‘বছরখানেক ধরে আমার টাকাটা পাচ্ছি না। এই তো সামান্য ক’টা টাকা, কেন শুধু শুধু আমাকে ঘোরাচ্ছেন বলুন তো!’’
এটা যদি প্রথম ছবি হয়, তাহলে দিন কয়েক আগে নাগাড়ে বেজে চলা ল্যান্ড ফোনটা রিসিভ করতেই বিডিও অফিসের এক কর্মীকে শুনতে হয়েছিল, ‘‘গাড়ির ওই ভাড়ার টাকাটা কি পাওয়া যাবে, অনেকদিন হয়ে গেল স্যার!’’
গত এক বছর ধরে দফায় দফায় পাওনাদারদের তাগাদায় জেরবার তেহট্ট-১ বিডিও। গত সেপ্টেম্বর মাসে তেহট্টের বেশ কয়েকটি এলাকায় বার্ড ফ্লু দেখা দিয়েছিল। দ্রুত পরিস্থিতি সামলে ‘বাহবা’ কুড়িয়েছিল প্রশাসন। কালিং পর্বের সময় হাতে হাতে টাকা পেয়ে বিগত সরকারের মুখে ‘চুনকালি’ লেপন করে দেওয়া গেছে বলে দাবি করেছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা।
কিন্তু তাদের আত্মতুষ্টিতে প্রশ্ন চিহ্ন ঝুলিয়ে দিয়েছে প্রশাসনের তহবিলে টান পড়ায়। গ্রামবাসীদের হাতে ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে দেওয়া গেলেও যাদের ‘সাহায্য’ নিয়ে পরিস্থিতি সামলেছিল প্রশাসন, সেই ভাড়া নেওয়া গাড়ির টাকা, পেট্রল পাম্পের তেলের দাম, কিংবা স্টেশনারি দোকানের বিল এখনও যে পরিশোধ হয়নি। নদিয়ার জেলাশাসক অভিনব চন্দ্র বলেন, ‘‘ওই ব্লকে এখনও প্রায় আট লক্ষ টাকা ধার থেকে গেছে। ইতিমধ্যে আমরা ওই ব্লককে ২ লক্ষ ৮ হাজার টাকা দিয়ে দিয়েছি। বাকি টাকাটা আমরা রাজ্যের প্রাণী সম্পদ দফতরের কাছে চেয়ে পাঠিয়েছি। দেখা যাক কবে পাওয়া যায়।’’ বিডিও নীলাঞ্জন পাল স্পষ্টই বলছেন, ‘‘বেশ সমস্যায় ও অস্বস্তিতে আছি। মহকুমা ও জেলা প্রশাসনকে বার বার তদ্বির করছি।” গতবছরের বার্ড ফ্লু’র ঘটনায় প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল। তেহট্ট ১ ব্লকের তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত আট লক্ষ টাকা শোধ করা যায়নি। পাওনাদারেরা মাঝেমধ্যেই তাই ব্লক অফিসে এসে দরবার করে চলেছে। স্থানীয় মার্কেটিং কো-অপারেটিভ সোসাইটির ম্যনেজার ইন্দ্রজিত আচার্য বলেন, ‘‘বার্ড ফ্লু’র সময় আমাদের এখান থেকেই যাবতীয় স্টেশনারি মালপত্র নিয়েছিল তেহট্ট ১ ব্লক। বহুবার বলেও পাওনা প্রায় ২ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা আমরা পাচ্ছিনা।’’ তেহট্টের এক পেট্রল পাম্পের মালিক তিলকচন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘‘বার্ড ফ্লু’র সময় প্রায় লক্ষাধিক টাকার তেল নিয়েছিল ব্লক প্রশাসন। এক বছর পরেও সেই টাকা পেলাম না।’’ মনিরুল সেখ, সঞ্জয় ঘোষ কিংবা তাপস দাসদের কথায়, ‘‘টানা ছ-দিন গাড়ি নিয়ে পড়েছিলাম বার্ড ফ্লু কবলিত ওই এলাকাগুলোতে এখন কাজ শেষ হয়ে যেতেই ভুলে গিয়েছে ব্লক প্রশাসন।’’ |