|
মুখোমুখি ১... |
|
যুদ্ধের জেতা হারা সব করিডরে |
সেই লম্বা, দড়ি পাকানো চুলের ডাচ মহাতারকা। আশির দশকে যাঁর ফুটবলে মজে ছিল
কলকাতা
থেকে মিলান।
আমস্টারডম থেকে রিও। শহরে ঝটিকা সফরে ঘুরে যাওয়া সেই নেদারল্যান্ডস
অধিনায়ক রুড ক্ষুলিট
যেন আবার কিছু স্বপ্নের পাস বাড়ালেন বিস্ময়াবিষ্ট গৌতম ভট্টাচার্য-কে |
পত্রিকা: প্রথমেই একটা সংশয় কাটানোর আছে। সেটা আপনার নামের উচ্চারণ নিয়ে। ইংরেজি ভাষ্যকাররা আপনাকে ‘গুলিট’ বলেন। আমাদের কাগজের নীতি অনুযায়ী আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মাতৃভাষায় তার স্থানীয় উচ্চারণ অনুসরণ করি। আমরা লিখি ‘খুলিত’। কোনটা ঠিক? |
রুড: (হাসি) হ্যাঁ, ডাচ উচ্চারণ অনুযায়ী ওটা হবে ‘ক্ষুলিট’।
|
পত্রিকা: আপনার সেই বড় বড় চুল কেটে ফেলা দেখে মনে হচ্ছে এ যেন ডেলায়লার সামনে চুল কেটে ফেলা স্যামসন। চুলটা কাটলেন কেন? |
ক্ষুলিট: আমি খুব খুশি যে চুলটা কেটে ফেলেছি। ভেরি হ্যাপি। পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়স হল। এ বয়সে অত লম্বা, লম্বা চুল অড লাগে। আর আমি চাইও নি চুলটাকে একটা ব্যক্তিগত ট্রেডমার্কের পর্যায়ে নিয়ে যেতে।
|
পত্রিকা: কিন্তু এই যে বলে বয়স নিছক একটা সংখ্যা? |
ক্ষুলিট: ঠিক বলে। কিন্তু আমি ভাই নতুন করে বাঁচতে চেয়েছি। নতুন অনুভূতির মধ্যে থাকতে চেয়েছি। আমি সেই লম্বাচুলো ফুটবলার হিসেবে আর পরিচিত হতে রাজি নই। সেটা স্টুপিডের মতো কাজ হত। আমি চেয়েছি রাস্তায় হাঁটব শান্তিতে, চুল দেখে আর লোকে চিনে ফেলবে না। জীবনে অ্যাটেনশন অনেক পেয়েছি, আর না হলেও চলবে।
আপনি লিখবেন আমার লম্বা চুল ছিল পড়ে ফেলা একটা বইয়ের মতো। বই পড়া শেষ করে লোকে নতুন বই ধরে। আমার হাতে এখন নতুন বই। আগেরটার আর দরকার নেই।
|
পত্রিকা: তবু জানতে কৌতূহল হচ্ছে লম্বা চুলটা কি বিশ্বব্যাপী ডিফেন্ডারদের জন্য একটা ঔদ্ধত্যের বার্তাও ছিল? এক ধরনের ‘অ্যাগ্রো’ ছিল? |
ক্ষুলিট: আমি আসলে ‘রেগে’ মিউজিকের খুব ভক্ত ছিলাম। কনসার্ট-টনসার্টে যেতাম। বব মার্লেকে অ্যাডোর করতাম। নিজের মধ্যে একটা ব্যাপার ঘুরত যে স্টেজে ওরা যারা গান গাইছে তাদের আর আমার চুল একই রকম।
|
পত্রিকা: চুলের জন্য ডিফেন্ডারদের কাছে কখনও গালাগালি শুনেছেন?
ক্ষুলিট: না শুনিনি। তবে চুল ধরে টানার চেষ্টা করত। কিছু পরেই আবিষ্কার করত লাভ নেই। লোকটা ওদের পক্ষে খুব স্ট্রং।
পত্রিকা: খেলার মাঠে আপনাকে দেওয়া সবচেয়ে খারাপ খিস্তি কী?
ক্ষুলিট: আমি খিস্তি খুব একটা খাইনি। যেটা হত, ডিফেন্ডাররা কনুই চালিয়ে, গুঁতিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করত। তবে আপনি যদি খুব স্ট্রং হন, এগুলোকে পাত্তাই দেবেন না।
পত্রিকা: লম্বা চুলটা আপনার অস্ত্রাগারের অংশ ছিল কি না এই জন্যই জিজ্ঞেস করছি যে বড় বড় অনেক স্পোর্টসম্যানই নীরব এই জাতীয় আক্রমণাত্মক টোটকা ব্যবহার করে।
ক্ষুলিট: যেমন?
পত্রিকা: যেমন একজন বিখ্যাত ক্রিকেটার আছেন, আপনি সম্ভবত চিনবেন না। ওঁর নাম ভিভিয়ান রিচার্ডস। উনি ব্যাট করতে যেতেন ধ্বংসাত্মক ভঙ্গিতে চিকলেট চিবোতে চিবোতে। অথচ অবসরের পর ওঁর মুখে কেউ কখনও চুইং-গাম দেখেনি।
ক্ষুলিট: একদম ঠিক আছে। মাইকেল জর্ডনও তাই করত। মাঠে নামত চুইং-গাম মুখে। অথচ রিটায়ারমেন্টের পর কোথায় গেল চুইং-গাম! নিজের খেলা এবং কোচিং জীবন মিলে পাওয়া অভিজ্ঞতা থেকে এখন আমি কনভিন্সড, মাঠে মোটেও যুদ্ধের নিষ্পত্তি হয় না।
|
পত্রিকা: সে কী? কোথায় হয়? |
ক্ষুলিট: খেলার আগে করিডরে হয়। ফুটবল যুদ্ধের নিষ্পত্তি করে করিডরগুলো। যখন একটা টিম আরেকটা টিমের দিকে তাকায় আর বিলক্ষণ বুঝে যায় প্রতিপক্ষ কী ভাবছে। আসল জিনিস হল অ্যাটিচিউড। আপনার অ্যাটিচিউড যদি আত্মবিশ্বাসে ভরা হয়, বিপক্ষ সেই গন্ধ ঠিক পেয়ে যায়। ওই স্ক্যানিংটা চোখে, চোখেই হয়ে যায়। আর তখনই স্থির হয়ে যায় কারা জিতবে, কারা হারবে।
|
পত্রিকা: উইকিপিডিয়া খুলে আপনার সম্পর্কে খোঁজ করলে লোকে অপ্রত্যাশিত একজনের নাম পাবে। নেলসন ম্যান্ডেলা। |
ক্ষুলিট: হ্যাঁ। উনি আমার ভীষণ ঘনিষ্ঠ। ম্যান্ডেলা যে আমাকে চেনেন, এটা ভেবেও আমি গভীর সম্মানিত। আমাকে বলা ওঁর একটা কথা যখনই মনে পড়ে আমি ফের নিশ্চিত হয়ে যাই তার পাশে জীবনের কোনও ট্রফি, কোনও রেকর্ডই লাগে না। |
|
পত্রিকা: কথাটা কী? |
ক্ষুলিট: ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ‘জেলের বাইরে বেরিয়ে আসার পর আমার এখন দুনিয়া জুড়ে অনেক বন্ধু। যখন কারাগারে ছিলাম মাত্র কয়েকজন বন্ধু ছিল। আর রুড তুমি তার মধ্যে ছিলে’। এই কথাটা এখনও বলতে গিয়ে আমার গায়ে কাঁটা দিল। আমি পৃথিবী জোড়া এত সব বিখ্যাত মানুষজন দেখেছি। ম্যান্ডেলার মতো ক্যারিশমা কারও মধ্যে দেখিনি।
|
পত্রিকা: আপনি ক’বার মিট করেছেন ওঁকে? |
ক্ষুলিট: বেশ কয়েক বার। নেদারল্যান্ডসে করেছি। সাউথ আফ্রিকার বাড়িতে গেছি। আমার টিভি শো-তে ইন্টারভিউ করেছি।
|
পত্রিকা: ম্যান্ডেলা যখন কারাগারে তখন আপনার করা প্রতিটি গোল কি এক হিসেবে নিপীড়িত কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের হয়ে সরব প্রতিবাদও থাকত না যে তোদের বিশ্বে তোরা যা ইচ্ছে করতে পারিস। আরেকটা বিশ্ব আছে যেখানে কৃষ্ণাঙ্গদেরই জয়জয়কার! |
ক্ষুলিট: আমি তখন অ্যাপারথায়েড বিরোধী আন্দোলনের হয়ে তীব্র লড়াই করছি। মিলানে খেলতে গিয়ে দেখলাম ইতালিতে কেউ ম্যান্ডেলাকে চেনেই না। হল্যান্ডে সবাই চিনত। জানত। হল্যান্ডের মধ্যে বোধহয় একটা অপরাধবোধও কাজ করত। বর্ণবৈষম্য জারি রাখার ব্যাপারে ওরাও সায় দিয়েছিল ইংল্যান্ডের সঙ্গে। ১৯৮৭-তে ইওরোপিয়ান ফুটবলার অফ দ্য ওয়ার্ল্ড হয়ে ম্যান্ডেলাকে উৎসর্গ করেছিলাম। পরের বছর আমরা ইউরো কাপ জিতি। সেবারও মঞ্চে উঠে ম্যান্ডেলার কথা বলেছিলাম। তখন আমি রেডিও প্রোগ্রাম করতাম আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের জন্য। এএনসি-র হয়ে টাকা তুলতাম। প্লাস ‘রেগে’ মিউজিক ওয়াজ অল অ্যাবাউট এএনসি অ্যান্ড দেয়ার স্ট্রাগল। ফুটবল খেলতে খেলতেও আমার মনটা পুরোপুরি ওই সব দিকে ঝুঁকেছিল। তারপর অনেক বছর বাদে যখন ওঁদের মুখে শুনলাম...
|
পত্রিকা: কাদের মুখে? |
ক্ষুলিট: ম্যান্ডেলার সেই সব সহ-কয়েদি, একই সঙ্গে যাঁরা রবেন আইল্যান্ডে বন্দি ছিলেন। আমি যখন ওঁদের জেলটা পাঁচ বছর আগে দেখতে যাই, তখন ওঁদের সঙ্গেও কথা হয়। একে তো ওইটুকু পুঁচকে জায়গার মধ্যে ম্যান্ডেলা ২৭ বছর কাটিয়েছেন জেনে আমি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম, তারপর পুরনো সেই সব কথা শুনে রোমাঞ্চিত হয়ে পড়ি।
|
পত্রিকা: কীসের রোমাঞ্চ? |
ক্ষুলিট: রোমাঞ্চ হল ওঁদের মুখে শোনা ফ্ল্যাশব্যাকের। কেউ গারদে খবর দিয়েছিল রুড ক্ষুলিট নামে ফুটবলার তার বিশাল একটা পুরস্কার আমাদের উৎসর্গ করেছে। রীতিমত শোরগোল পড়ে যায় তখন। কয়েদিরা প্রচণ্ড খুশি, চিৎকার, চেঁচামেচি। আর ঠিক তার পরেই দুশ্চিন্তার মেঘ। এই যে ছেলেটা এত বড় সাহস দেখাল এবার যদি ফুটবল সংস্থা ওকে সাসপেন্ড করে দেয়! এবার যদি ওদের ট্রফিটাই কেড়ে নেয়।
অসাধারণ সব মুহূর্ত! এখনও বলতে বলতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছি।
|
পত্রিকা: ম্যান্ডেলাকে কাছ থেকে দেখে কী শিখেছেন? |
ক্ষুলিট: শিখেছি দয়ালু হতে। এই যে এত কাণ্ড করে স্বাধীনতা এল, এর পরেও উনি প্রতিহিংসাপরায়ণ হননি। বরঞ্চ এত বছর ধরে যারা ওঁকে অত্যাচার আর শোষণ করেছিল তাদের উনি বুকে জড়িয়ে ধরেছেন।
|
পত্রিকা: যে লোকটা নেদারল্যান্ডস আর এসি মিলানের দুর্ধর্ষ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ছিল। সেই লোকটা আর আমি যে মধ্যবয়সী জ্যাকেট পরা মানুষটাকে রেডিও মির্চির অফিসে বসে ইন্টারভিউ করছিতাঁদের মধ্যে তফাত কী? |
ক্ষুলিট: পুরনো সেই লোকটা মনের আনন্দে খেলত। খেলা থেকে লোককে বিনোদন দিতে চাইত। শিডিউল ছিল তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। সব কিছু ছকে বাঁধা। বিভিন্ন দেশে গেলেও বেড়ানোর সুযোগ নেই। এই লোকটার সেই সব ঝুটঝামেলা নেই। সে মনের আনন্দে দেশ ঘুরতে পারে। কোনও শিডিউলকে তার জবাবদিহি করার নেই। এই লোকটা তুলনায় অনেক সুখী।
|
পত্রিকা: সে কী! খেলোয়াড় জীবনের অ্যাড্রেনালিন ক্ষরণটা মিস করেন না? শরীরের কোষে কোষে সেই মাদকতাটা? |
ক্ষুলিট: না বাবা। আমার জীবনে অ্যাড্রেনালিন রাশ অনেক হয়েছে। আর দরকার নেই। আসলে তিরিশের কোঠায় পৌঁছে গেলে সমস্যা যেটা হয় ট্রেনিংটা ভীষণ কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। সেটা আর শরীর দিয়ে পারা যায় না।
|
|
পত্রিকা: কোচ ক্ষুলিটের অভিজ্ঞতা কেমন? |
ক্ষুলিট: কোচের কাজ হল বাইশটা ঈগলকে সামলে রাখা। সবচেয়ে কঠিন কাজ হল টিমে যারা চান্স পাচ্ছে না, সেই সব ঈগলকে সামলানো।
|
পত্রিকা: মনে করুন তিনজন ঈগলকে আপনার ম্যানেজ করতে হবে। ক্ষুলিট, মারাদোনা, জর্জ বেস্ট। |
ক্ষুলিট: যে তিনটে নাম বললেন, খুব সহজ। আমায় বিশেষ কিছুই করতে হবে না। ওদের শুধু নিজস্ব এক্সপ্রেশনের সুযোগ করে দিতে হবে। ওদের প্রকাশ করতে দিতে হবে।
|
পত্রিকা: সে কী! তা হলেই এদের বেয়াড়ামি চলে যাবে? |
ক্ষুলিট: আমি মনে করি না বেয়াড়ামি বলে। যখনই লোকে গড়পড়তার বাইরে এই ধরনের হয়, যখন তাদের নিজস্ব মতামত থাকে, যখন তাদের ব্যাকরণে ফেলা যায় না, তারা সব সময় স্পেশাল হয়।
|
পত্রিকা: কিন্তু স্পেশালকে সামলানো তো খুব মুশকিল। জর্জ বেস্ট লিগ ম্যাচের দিন ভোর পাঁচটায় ফিরতেন নাইটক্লাব থেকে। সঙ্গে সেই রাতের বান্ধবী। তাঁকে সামলাতেন কী করে? |
ক্ষুলিট: প্রথমত ষাট-সত্তর দশকের সেই দিন আর নেই। এখন এ সব সম্ভবই নয়। সব কিছু অনেক বেশি রেজিমেন্টেড। তবে কোচ হিসেবে আমার স্টার প্লেয়ার ভোর পাঁচটায় ফিরলে কোনও সমস্যা নেই। জর্জ বেস্ট পাঁচটায় ফিরে যে ম্যাচ জেতানো খেলাটা খেলত, সেটা আমার কাছে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। তথাকথিত ইনডিসিপ্লিন্ড হয়েও কী কী সব ম্যাচ ও জিতিয়েছে। কী বেস্ট, কী মারাদোনাএদের খাঁচায় আটকে রেখে কোনও লাভ নেই। ছেড়ে দিয়ে বরং অবজার্ভ করতে হয়। একেবারে বাধ্য না হলে, লাঠির কোনও ব্যাপার নেই।
|
পত্রিকা: বেস্ট, মারাদোনা বা আপনার আমলে যেমন হিংস্র ট্যাকল হত। বা রক্ষণাত্মক ফুটবল চলত তা এখনকার ফুটবল আইনে সম্ভবই না। সেইজন্য কি মনে হয় না মেসির সঙ্গে মারাদোনার তুলনাই অনুচিত? |
ক্ষুলিট: একদম তুলনা চলে না। খেলাটাই বদলে গেছে। গোলকিপারকে ব্যাকপাস আর আইনসম্মত নেই। হিংস্র সেই সব ট্যাকল চলে না। ফিফা বল প্লেয়ারকে অনেক বেশি নিরাপত্তা দিয়েছে।
|
পত্রিকা: আপনি যাঁদের সঙ্গে খেলেছেন বা দেখেছেন, সেরা কে? |
ক্ষুলিট: নিঃসন্দেহে দিয়েগো মারাদোনা। আমি এ রকম কাউকে দেখিনি। পেলের কথা লোকে বলে। আমি পেলেকে দেখিনি। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে মারাদোনাকে কিছু ম্যাচ খেলতে দেখেছি। যার তুলনাই হয় না। নাপোলির হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে একবার কয়েকটা গোল করেছিল। আজও ভুলতে পারিনি।
|
পত্রিকা: ফুটবলার মারাদোনাকে নিয়ে সমস্যা নেই। মানুষ মারাদোনা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ। |
ক্ষুলিট: আমি একমত নই। আমার কাছে মারাদোনা একজন দারুণ মানুষ। ভীষণ সৎ নিজের চিন্তাভাবনায়। কোনও রাখঢাক করে না। কোনও আড়াল নেই। কোনও ফন্দি নেই।
|
পত্রিকা: কোথায় গিয়ে মারাদোনা অন্যদের চেয়ে আলাদা হয়ে যান? |
ক্ষুলিট: অবিশ্বাস্য স্কিল।
|
পত্রিকা: জর্জ বেস্ট একবার লিখেছিলেন, ‘গ্রেট ফুটবলারের বিশেষত্ব হল তার ব্যালান্স। দু’দিক থেকে ডিফেন্ডার গুঁতিয়ে, লাথি মেরেও তাকে ব্যালান্সচ্যুত করতে পারে না। বলটা ঠিক তার পায়ে সাঁটিয়ে লেগে থাকবেই’। গ্রেটদের ছোট সেই তালিকায় আপনাকেও রেখেছিলেন।
|
ক্ষুলিট: আমি বলব বিশেষত্ব হল তার অ্যান্টিসিপেশন। ঠিক বোঝার ক্ষমতা। ব্যালান্সটা পরের স্টেজ।
|
পত্রিকা: অ্যান্টিসিপেশন বলতে ঠিক কী? |
ক্ষুলিট: খেলার দ্রুত গতির মধ্যেও ঠিক বুঝে নিতে পারা এর পর কী ঘটতে যাচ্ছে। আর সেখানে আমি ঠিক কী করতে চলেছি। আমি যদি খুব দ্রুত অ্যান্টিসিপেট করতে পারি, খেলার আগে ভাবতে পারি, আমি অবশ্যই ডিফেন্ডারদের আগে থাকব। বাইরে থেকে মনে হতে পারে ব্যাপারটা খুব সহজ আর আপনিই ঘটছে, আদৌ তা নয়। খেলা চলতে চলতে নানা রকম প্যাটার্ন তৈরি হয়। গ্রেট ফুটবলার হল সেই যে মাথার মধ্যে প্যাটার্নটা দ্রুত বুনে নিয়ে সেকেন্ডের ভগ্নাংশে তা থেকে নিজস্ব কর্মপদ্ধতি ঠিক করে ফেলে। ফুটবলাররাও এক হিসেবে দাবা খেলে। কিন্তু দাবাড়ুর মতো একটা চাল থেকে আরেকটা চালের মধ্যে অতটা সময় পায় না। ওরা দাবা খেলে মুভিং বলের সঙ্গে। সেই দাবা বোর্ডে কার মাথা কত দ্রুত নিখুঁত ভাবে খেলছে সেটাই অ্যান্টিসিপেশন।
|
পত্রিকা: অ্যান্টিসিপেশন আনার ট্রেনিং কী? |
ক্ষুলিট: (হাসি) ওটা আনা যায় না। (ওপরের দিকে তাকিয়ে) ওটা হয় উনি আপনাকে দিয়েছেন অথবা দেননি। |
|