আয়লার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ প্রাচীরের ভূমিকা যে অপরিসীম, তা একাধিকবার উঠে এসেছে পরিবেশবিদদের আলোচনায়। তা সত্ত্বেও অবাধে ম্যানগ্রোভ নিধন চলছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের ইটখোলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মাতলা নদী লাগোয়া সুন্দরবনের কৃপাখালি জঙ্গলে। রাতের অন্ধকারে সেই সব কাটা গাছের ডাল পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ ভাবে ম্যানগ্রোভ নিধনে ক্ষুব্ধ জঙ্গল লাগোয়া কৃপাখালি গ্রামের বাসিন্দারা। কী ভাবে বন দফতরের নজর এড়িয়ে দিনের পর দিন গাছ কাটা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা। গ্রামবাসীদের আশঙ্কা, এ ভাবে গাছ কাটা চলতে থাকলে আর জঙ্গল বাঁচানো যাবে না। ভেঙে পড়বে পরিবেশের ভারসাম্য। এ ব্যাপারে একাধিকবার প্রশাসন এবং বন দফতরকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। |
কেটে সাফ করে ফেলা হয়েছে ম্যানগ্রোভ। —নিজস্ব চিত্র। |
বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক বছর আগে নদীবাঁধ বাঁচাতে এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে ওই এলাকায় ম্যানগ্রোভ রোপণ করা হয়। ধীরে ধীরে সেই সব গাছ বেড়ে কয়েকশো একর এলাকা জুড়ে ঘন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। মাস কয়েক ধরে সেই জঙ্গলেরই গাছ কাটা হচ্ছে অবাধে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, গ্রামেরই কিছু অসাধু লোকজন মেছোভেড়ি বানানোর উদ্দেশে গাছ কাটছে। এর পিছনে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় কিছু নেতার মদতও রয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। গ্রামবাসীদের আশঙ্কা, যে ভাবে জঙ্গলের গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে, তাতে নদীবাঁধ দুর্বল হয়ে পড়বে। বর্ষায় গ্রাম প্লাবিত হবে। ইতিমধ্যে এর প্রতিবাদে ক্যানিং থানা, এসডিপিও (ক্যানিং) এবং মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা।
এসডিপিও (ক্যানিং) পিনাকীরঞ্জন রায় জানিয়েছেন, ওই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত হচ্ছে। মহকুমাশাসক শেখর সেন বলেন, “বিষয়টি জানার পরেই আমি সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানিয়েছি।” দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডিএফও লিপিকা রায় জানিয়েছেন, এ রকম ঘটনার কথা আমি শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য আমি দফতরের আধিকারিকদের বলেছি।” রাজ্যের মুখ্য বনপাল অতনু রাহা বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। গাছ কাটা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনও মতেই এই এলাকায় বেআইনি মেছোভেড়ি করতে দেওয়া যাবে না।”
গাছ কাটা বন্ধের দাবিতে আন্দোলনে নামার কথা ভাবছেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব। ক্যানিংয়ের কংগ্রেস নেতা তথা অর্ণব রায় বলেন, “পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে কোনও ভাবে গাছ কাটা যায় না। ওই এলাকায় গাছ কাটা ও মেছোভেড়ি তৈরি বন্ধ না হলে আমরা আন্দোলনে নামব।” ক্যানিং-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের নারায়ণচন্দ্র ঘোষ বলেন, “জঙ্গলের গাছ কাটা অন্যায়। আমরা এর সমর্থন করি না। গাছ কাটা হচ্ছে কি না, তা খোঁজ নিয়ে দেখছি। তেমন হলে তা অবিলম্বে বন্ধ করতে প্রশাসনকে বলব।” |