|
|
|
|
গুড়াপে ধর্ষণের অভিযোগ আনলেন আরও এক তরুণী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
গুড়াপ-কাণ্ডে ফের ধর্ষণের অভিযোগ।
আজ দুলালস্মৃতি সংসদ হোমের আরও এক প্রাক্তন আবাসিক তরুণী সিআইডি-র কাছে হোমের সম্পাদক উদয়চাঁদ কুমারের ঘনিষ্ঠ শ্যামল ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন। হোমের আবাসিক গুড়িয়ার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শ্যামল এখন জেল হাজতে।
গুড়িয়ার মৃত্যু-রহস্যের তদন্তে নেমে ওই হোমের আবাসিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা দাবি করছিলেন, সেখানে মহিলা আবাসিকদের উপরে যৌন নির্যাতন চালানো হত। নির্যাতনের পিছনে ছিলেন ধৃত উদয়চাঁদ এবং শ্যামল। এ বার এই তরুণীর কথায় শ্যামলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের হল।
দিন কয়েক আগে হোমের আর এক প্রাক্তন আবাসিক মহিলা ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করায় গ্রেফতার করা হয় দাদপুরের এক যুবককে। একটি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রকল্পের কর্মী ওই যুবক কাজের সুবাদে গুড়াপের হোমে যাতায়াত করতেন। মহিলার অভিযোগ, সেই সুযোগেই ওই যুবক তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন।
গুড়াপের ঘটনায় এ পর্যন্ত যে দু’জন ধর্ষণের অভিযোগ আনলেন, তাঁরা কেউই মানসিক ভারসাম্যহীন নন। তবে দুঃস্থ। শ্যামলের বিরুদ্ধে যিনি ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন, তিনি বর্তমানে জাঙ্গিপাড়ার একটি হোমে রয়েছেন। বুধবার সিআইডি-র একটি দল ওই হোমে যায়। সেখানেই বছর সাতাশের ওই তরুণী তদন্তকারীদের কাছে অভিযোগ করেন, গত বছর শীতকালে এবং তার পরবর্তী সময়ে শ্যামল তাঁকে বহু বার ধর্ষণ করেছে। এই অভিযোগ সিআইডি নথিভুক্ত করে। বিষয়টি গুড়াপ থানাকেও জানানো হয়। এই অভিযোগের ভিত্তিতে শ্যামলের বিরুদ্ধে নতুন মামলাও রুজু করা হয়। অসুস্থ থাকায় ওই তরুণীর এখনও ডাক্তারি পরীক্ষা করানো যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গুড়াপের প্রসঙ্গ টেনে এ দিন রাজ্যের শিশুকল্যাণমন্ত্রী শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সেখানে যা হয়েছে তা ন্যক্কারজনক। যৌন নিগ্রহ থেকে মেরে ফেলার মতো ঘটনা ঘটেছে। এমনকী ওই হোমের আর্থিক কেলেঙ্কারিও ব্যাপক। হোমের সেক্রেটারি সমাজকল্যাণ দফতরের রাজ্য তহবিল সংক্রান্ত কমিটির সচিব ছিলেন। তহবিলে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।”
তবে গুড়াপের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার শিশুদের হোমগুলি নিয়ে সতর্ক পদক্ষেপ করা শুরু করল রাজ্য সরকার। রাজ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৪৬টি শিশুদের হোম রয়েছে। এদের বাস্তব সমস্যা এবং তার প্রতিকারের জন্য কী করা উচিত এক সপ্তাহের মধ্যে তার রিপোর্ট দেওয়ার জন্য হোমগুলিকে নির্দেশ দিল রাজ্য সরকার। শুক্রবার মহাকরণে সরকারি-বেসরকারি বেশ কিছু শিশু-হোমের কর্তা এবং জেলা সমাজকল্যাণ অফিসারদের নিয়ে এক বৈঠকে ওই নির্দেশ দেন শ্যামাপদবাবু।
তিনি জানান, শিশুদের হোমগুলিতে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, নিরাপত্তা নিয়ে নানা সমস্যা রয়েছে। তার ভিত্তিতে ঠিক হয়েছে, হোমগুলিতে সিসিটিভি বসানো হবে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “অনেক সময় দেখা যায় হোমের কোনও কোনও আবাসিক গাছের উপর চড়ে বসে আছে। কিন্তু তারা কখন নেমে আসে, তারপর কোথায় যায়, তার হদিস করা মুশকিল হয়ে যায়।”
শিশুদের হোমগুলিতে অনেক ক্ষেত্রেই সাজাপ্রাপ্ত, বিচারাধীন শিশু অপরাধীদের সঙ্গেই স্বাভাবিক আবাসিকদের রাখতে হয়। আবার কোথাও মানসিক ভারসাম্যহীন শিশুর সঙ্গে থাকছে সুস্থ, স্বাভাবিক কোনও কিশোর। এতে নানা সমসা্য হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।
শিশুকল্যাণমন্ত্রীর কথায়, “এমনও ঘটছে, যেখানে বয়স্ক আশ্রয়হীন মহিলারা শিশুদের হোম গিয়ে উঠছেন। তাঁদের তাড়াতে গেলে সটান জেলাশাসকের কাছে দরবার করছেন। অন্য জায়গার অভাবে জেলাশাসক বাধ্য হয়ে তাঁদের শিশুদের হোমেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন।” রাজ্যে সরকারি হোমের সংখ্যা ১৮টি। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ২৮টি হোম। সব মিলিয়ে প্রায় ৯০০ শিশু রয়েছে হোমগুলিতে। আবাসিক পিছু রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার মিলিত মাসিক বরাদ্দের পরিমাণ ১২০০ টাকা। এই টাকা যথেষ্ট কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। |
|
|
|
|
|