রেণু সরকার হত্যা-মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ পর্বের তৃতীয় দিন সাক্ষ্য দিলেন নিহতের দুই প্রতিবেশী দিলীপরঞ্জন ভৌমিক ও গোপাল সাহা।
শুক্রবার বোলপুর ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারক সোমেশপ্রসাদ সিংহের এজলাসে ওই সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। সরকার পক্ষের আইনজীবী তপনকুমার দে বলেন, “এ দিন দিলীপবাবু বিচারক ও আইনজীবীদের সামনে ঘটনাস্থল থেকে
উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্রগুলি শনাক্ত করেছেন। পাশাপাশি এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত উজ্জ্বল তপাদারকে ইতিমধ্যে শনাক্ত করেছেন আর এক সাক্ষী গোপাল সাহা।”
গত ১৩ জানুয়ারি রাতে শান্তিনিকেতনে খুন হন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষিকা রেণুদেবী। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বাড়ির কেয়ারটেকার উজ্জ্বল তপাদার এবং এলাকার দাগি দুষ্কৃতী মঙ্গল সাহানি ও তার সঙ্গী পিন্টু দাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা দু’জনেই এখন জেল হাজতে। ধৃতদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ৩০২, ৩৯৪, ৪১১ ও ৩৪ ধারায় খুন ও ডাকাতির চার্জ গঠন করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে রেণুদেবীকে লোহার রড দিয়ে খুন করার কথা কবুল করেছে মঙ্গল। অন্য দু’জন খুনের ষড়যন্ত্রে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত বলেও পুলিশের দাবি।
এ দিন প্রথমেই সাক্ষীদের বয়ান নেন তপনবাবু। এজলাসে দিনের প্রথম সাক্ষী ৭২ বছরের দিলীপবাবুকে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের উদ্ধার করা সামগ্রী শনাক্ত করতে বলেন সরকারি আইনজীবী। ফ্রিজ, গ্যারাজের ভাঙা তালা, বোতল, রেণুদেবীর হাওড়া-বোলপুর রেল টিকিট-সহ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া নানা সামগ্রী শনাক্ত করেন তিনি। রেণুদেবীর মৃত্যুর খবর তিনি প্রথম জানতে পেরেছিলেন কেয়ারটেকার উজ্জ্বলের কাছ থেকে। সরকারি আইনজীবীর প্রশ্নে এ কথাও জানিয়েছেন দিলীপবাবু।
পরের সাক্ষী গোপাল সাহা উজ্জ্বলকে শনাক্ত করলে তপনবাবু তাঁর কাছে জানতে চান, রেণুদেবীকে কী ভাবে চিনতেন, ঘটনার দিন কী ভাবে খবর পেয়েছিলেন, খবর পেয়ে কী করেছিলেন। তিনিও জানিয়েছেন, উজ্জ্বলের কাছ থেকেই প্রথম খবর পেয়েছিলেন। তাঁর দাবি, ঘটনাস্থলে পুলিশ আসার পরই দোতলার ঘরে উঠে রেণুদেবীর নিথর দেহ দেখেছিলেন।
সরকার পক্ষের আইনজীবী বয়ান নেওয়ার পর সাক্ষীদের জেরা করেন অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীরা। এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত পিন্টু দাসের আইনজীবী দিলীপ নায়েক দিলীপবাবুর কাছে জানতে চান, রেণুদেবীর ঘরে তিনি কোনও পায়ের ছাপ দেখেছিলেন কি না।
দিলীপবাবু অবশ্য এমন কোনও পায়ের ছাপ দেখতে পাননি বলেই দাবি করেন। এর পরেই পিন্টুর আইনজীবী তাঁকে প্রশ্ন করেন, রেণুদেবীর বাড়ির গ্যারাজের ভাঙা তালাটি চাবি দিয়ে খুলে দেখা হয়েছিল কি না এবং ভাঙা তালার দু’টি অংশকে মিলিয়ে দেখা হয়েছিল কি না। দু’টি প্রশ্নের উত্তরেই দিলীপবাবু দাবি করেন, এ রকম কিছু করা হয়েছিল কি না, তিনি জানেন না।
এ দিনের অপর এক সাক্ষী গোপালবাবুর কাছে অভিযুক্ত উজ্জ্বলের আইনজীবী সৈয়দ শাহিদুল আরেফিন রেণুদেবীর বাড়ি সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করেন। রেণুদেবীর বাড়ির অবস্থান, সীমানা প্রাচীর আছে কি না, তাতে কি কাঁটাতারের বেড়া আছে-- এই ধরনের বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর আইনজীবী গোপালবাবুর কাছে জানতে চান।
আজ, শনিবার এই মামলায় সাক্ষ্য দেবেন নিহত রেণুদেবীর অন্য দুই প্রতিবেশী সুতপা বসু ও মিহিরকুমার মণ্ডল। |