হামলার উদ্দেশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে গুলি মজুত করার অভিযোগ ওঠায় এক মাসেরও বেশি আরান্ডি-২ পঞ্চায়েতে আসছেন না প্রধান সিপিএমের সুলেখা পাল। ফলে, স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে পঞ্চায়েতের যাবতীয় গ্রামোন্নয়নের কাজ। পরিষেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রামবাসীরা। সুলেখাদেবী দাবি করেছেন, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।
বিধানসভা ভোটের পর বামফ্রন্ট পরিচালিত আরামবাগ ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েতের অধিকাংশই বারেবারে অচল হয়েছে। দুর্নীতি, স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলে বারে বারে ওই সব পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ দেখিয়েছে তৃণমূল। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল আরান্ডি-২ পঞ্চায়েত। ওই পঞ্চায়েতের পক্ষে নূন্যতম পরিষেবা দেওয়া হচ্ছিল। সেখানে ক্ষোভ-বিক্ষোভ, ঘেরাও হয়নি। সেই পঞ্চায়েতই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে গত ২৮ জুন থেকে।
সুলেখাদেবীর বাড়ি রায়পুর গ্রামে। গত ২৭ জুন ওই গ্রামে একটি শুকিয়ে যাওয়া খাল সংস্কারের সময়ে ১ হাজার ৮ রাউন্ড একে-৪৭ রাইফেলের গুলিভর্তি একটি বস্তা উদ্ধার হয়। গ্রামে হামলা চালানোর জন্যই ওই গুলি মজুত করা হয় বলে সুলেখাদেবী-সহ জনা পনেরো সিপিএম নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় তৃণমূলের পক্ষ থেকে। তার পরের দিন থেকেই আর পঞ্চায়েতে আসছেন না প্রধান। পুলিশ জানায়, সুলেখাদেবী ‘পলাতক’।
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে সুলেখাদেবীর দাবি, “তৃণমূল মিথ্যা অভিযোগে এবং ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফাঁসিয়েছে। ওই সব গুলির সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। কাজের ব্যাপারে জনপ্রিয়তার জন্যই আমাকে এ ভাবে সরানো হল। পঞ্চায়েতে গেলেই পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করবে। আগাম জামিনের চেষ্টায় রয়েছি।”
প্রধান না-আসায় শংসাপত্র প্রদানের মতো নূন্যতম পরিষেবাও সাধারণ মানুষ পাচ্ছেন না। ব্লকের তত্ত্বাবধানে ১০০ দিনের প্রকল্প-সহ যে সব কাজ হয়, তা-ও স্তব্ধ। কারণ, প্রধানের সই ছাড়া কোনও টাকা লেনদেনই সম্ভব নয়। এ ছাড়াও ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন এবং তৃতীয় রাজ্য অর্থ কমিশনের বরাদ্দ তহবিল থেকে যে সব গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম উন্নয়নের কাজ হয়, যেমন পানীয় জল প্রকল্পগুলির রক্ষণাবেক্ষণ, রাস্তা-সাঁকো-সেতু ইত্যাদি মেরামত, জলনিকাশি ব্যবস্থা, প্রাথমিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, মা ও শিশুর পুষ্টি ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য বিধান ব্যবস্থার উন্নতি সাধন ইত্যাদিও বন্ধ।
সেয়ারা, রায়পুর, গোবরা, গোপালদহ, রাজপুর, পুরা ইত্যাদি গ্রামের মানুষের একাংশের দাবি, উদ্ধার হওয়া গুলির সঙ্গে সুলেখাদেবীর কোনও সম্পর্ক নেই। পুলিশ তদন্ত করলেই প্রকৃত অপরাধীরা ধরা পড়বে। এ ভাবে পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় তৃণমূল নেতা সোহরাব হোসেন অবশ্য বলেন, “সেই সময়ে গ্রামবাসীদের একটা বড় অংশ সুলেখাদেবীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছিলেন। সেই কারণে থানায় দায়ের করা অভিযোগে তাঁর নাম রয়েছে। পঞ্চায়েতটি দ্রুত চালু করার জন্য বিডিওকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।” বিডিও মৃণালকান্তি গুঁই বলেন, “বিষয়টা মহকুমাশাসক এবং জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রধানের অবর্তমানে পঞ্চায়েতটি প্রায় অচল হতে বসেছে।” আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপপ্রধানকে প্রধানের দায়িত্ব সামলানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই তা কার্যকর হবে।” |