রাজ্যের স্বার্থে বিনিয়োগ স্বাগত। কিন্তু বিনিয়োগ করতে যারা আসবে, তারা যাতে আইন মেনে চলে, সেই ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে ‘সতর্ক’ থাকার আবেদন জানাচ্ছেন সিপিআই সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত। নতুন বিনিয়োগকে আহ্বান জানানোর পাশাপাশিই রাজ্যে বন্ধ শিল্পের পুনরুজ্জীবনে মনোযোগ দেওয়ার জন্যও সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। মারুতি-প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখিত আবেদন জানাতে চলেছেন সিপিআইয়ের শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক গুরুদাসবাবু।
মারুতি সংস্থাকে বিনিয়োগে আহ্বান জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। মানেসরের মারুতি কারখানায় হিংসাত্মক ঘটনায় প্রাণহানি এবং তার পরে রাজ্য সরকারের এই আহ্বানের প্রেক্ষিতেই মমতা-প্রশাসনকে ‘সতর্ক’ হওয়ার কথা বলছেন গুরুদাসবাবু। রাজ্যের বর্ষীয়ান সাংসদের কথায়, “আমরা বিনিয়োগের বিরোধী নই। রাজ্যের জন্য বিনিয়োগ আসা ভাল। কিন্তু মানেসরে যে ঘটনা ঘটেছে, তার পরে শ্রমিক স্বার্থের ক্ষেত্রে কোনও অপরাধী সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানানোয় শ্রমিকদের কাছে ভুল বার্তা যাবে কি না, তা-ও ভেবে দেখতে হবে। বিশেষত, যে সব সংস্থার বিরুদ্ধে দেদার শ্রম আইন লঙ্ঘন, বেসরকারি সশস্ত্র বাহিনী পোষার মতো বহু অভিযোগ রয়েছে। রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করব, তারা এলেও আইন মান্য করার দিকে যেন কড়া নজর রাখা হয়।” সিপিআই সাংসদের আরও বক্তব্য, মানেসরের কারখানায় গোলমালের পরে বিজেপি-শাসিত গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর রাজ্যে মারুতিকে নিয়ে যেতে সক্রিয় হয়েছেন। মমতার সরকার ক্ষমতায় এসেই সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠালে কিছু বলার থাকত না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিকে বিশেষ একটি সংস্থাকে আমন্ত্রণ প্রশ্ন তোলার অবকাশ রাখে বলে তাঁর মত।
গুরুদাসবাবুদের এই প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “যে কোনও সংস্থারই উচিত সংশ্লিষ্ট রাজ্যের আইন মেনে চলা। আবার রাজ্য সরকারের উচিত রাজ্যের উন্নয়নের জন্য সচেষ্ট হওয়া।” শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থবাবু আরও বলেছেন, “বাম জমানাতেও কারখানার পার্সোনেল ম্যানেজার খুনের মতো হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছিল। আমরা কেউই হিংসা চাই না। রাজ্যের উন্নয়নই আমাদের সকলের লক্ষ্য হওয়া উচিত। রাজ্যের স্বার্থে প্রতিষ্ঠিত সংস্থার নতুন বিনিয়োগ এলে ভাল নয় কি?”
মুখ্যমন্ত্রীকে ‘সতর্ক’ থাকতে বলার পাশাপাশিই গুরুদাসবাবু রাজ্যের বন্ধ শিল্প নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। তাঁর মতে, “পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যশালী শিল্প হল পাট, চা এবং ইঞ্জিনিয়ারিং। সেগুলির পুনরুজ্জীবনে রাজ্য সরকারের কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। আবার এমন সব সংস্থাকে ডাকা হচ্ছে, যাদের নিয়ে প্রশ্ন আছে!” বিগত বামফ্রন্ট সরকার এই ক্ষেত্রে একই ভুল করেছিল বলে মেনে নিয়েও প্রবীণ সিপিআই নেতার অভিযোগ, “বর্তমান রাজ্য সরকারের শ্রম ও শিল্পনীতি, কোনওটাই স্পষ্ট নয়।” তাঁর ব্যাখ্যা, যে সব সংস্থায় ট্রেড ইউনিয়ন নামক ‘সেফটি ভাল্ভ’ রাখার অধিকার নেই, সেখানে অনিয়ন্ত্রিত শ্রমিক বিক্ষোভ মানেসরের মতো কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলতে পারে। এই জায়গাতেই সতর্ক থাকতে হবে পশ্চিমবঙ্গকে।
ঠিকা শ্রমিক (প্রতিরোধ ও বিলুপ্তি) সংশোধনী আইন, ন্যূনতম মজুরি সংশোধনী আইন, খনি নিরাপত্তা আইন, নির্মাণ শ্রমিক সংশোধনী আইন শ্রমিক স্বার্থের সঙ্গে জড়িত এই চারটি বিল কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রক এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পাশ হয়ে গেলেও এখনও সংসদে আসেনি। ওই বিলগুলি পাশ হওয়ার আগে নতুন শিল্পে ছাড় দেওয়া নিয়ে বিশদে ভাবনাচিন্তা করা উচিত বলে সিপিআই নেতৃত্বের মত। |