ইনফোসিসকে এ রাজ্যে ধরে রাখার চেষ্টায় অবশেষে আশার আলো।
তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের এই অন্যতম প্রধান সংস্থাকে ঘিরে সমস্যার কেন্দ্রে ছিল বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (সেজ) তকমা। রাজ্যে নতুন করে কোনও সেজ খুলতে দিতে নারাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। অন্য দিকে, ইনফোসিসের বক্তব্য, সেজের সুবিধা না পেলে আর্থিক দিক থেকে তারা এতটাই পিছিয়ে থাকবে যে, অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এঁটে ওঠা সম্ভব হবে না। দু’পক্ষই নিজের নিজের অবস্থানে অনড় থাকলেও বিকল্প পথের সন্ধান চলছিলই। সেই চেষ্টাই খানিকটা ইতিবাচক দিকে এগিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের মত। প্রশাসনিক সূত্রে এত দিন বলা হচ্ছিল যে, সম্ভাব্য সমাধানসূত্রের একটি হতে পারে ইতিমধ্যেই অনুমোদিত বিশেষ আর্থিক অঞ্চলে ইনফোসিসের প্রকল্পকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া। তাতে এক দিকে রাজ্য সরকারকে যেমন তার নীতিগত অবস্থান থেকে সরে আসতে হয় না, তেমনই ইনফোসিসও কাঙ্ক্ষিত আর্থিক সুবিধা পেয়ে যায়। ফলে শ্যাম ও কুল, দুই-ই রক্ষা হয়।
এই সূত্র ধরেই রাজারহাটে শাপুরজি পালোনজির বিশেষ আর্থিক অঞ্চলে প্রকল্প গড়তে ইনফোসিস ইচ্ছুক বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। প্রাথমিক ভাবে আপত্তি নেই ওমানের সুলতানের প্রাসাদ, মুম্বইয়ের ভি টি স্টেশন, তাজ হোটেল থেকে দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণ সংস্থা শাপুরজি পালোনজিরও। এ ব্যাপারে আলোচনা অনেকটাই এগিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি। রাজারহাটে ৫০ একর জমিতে সেজ গড়ার জন্য ২০০৭-০৮ সালে অনুমোদন পায় শাপুরজি গোষ্ঠী। সেখানে একটি তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক গড়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু সেজের অনুমোদন পাওয়ার পরেই বিশ্ব জুড়ে শুরু হয় মন্দা। মার খায় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। ফলে ব্যবসায়িক কারণেই সেজ গড়া আর লাভজনক নয় বিবেচনা করে এই প্রকল্প থেকে সরে যেতে চায় শাপুরজি গোষ্ঠী। সেজের স্বীকৃতি বাতিলের জন্য আবেদন করে তারা।
কিন্তু সেই আর্জি জানানোর আগেই যে হেতু শাপুরজি গোষ্ঠীকে কেন্দ্র কিছু আর্থিক সুবিধা দিয়েছিল, সে হেতু সেজ তকমা বাতিলের আগে সেই টাকা ফেরত চাওয়া হয়। এই পর্যায়ে ইনফোসিসের কাছ থেকে প্রস্তাব পায় শাপুরজি।
এখন পর্যন্ত যা আলোচনা হয়েছে, তাতে শাপুরজির বিশেষ আর্থিক অঞ্চলে ‘কো-ডেভেলপার’ হতে পারে ইনফোসিস। সে ক্ষেত্রে শাপুরজিদের জমিতে পূর্ব পরিকল্পনা মতোই নিজস্ব ক্যাম্পাস তৈরি করতে পারবে ইনফোসিস। পরিবর্তে ইনফোসিস রাজারহাটে ৭৫ কোটি টাকা দিয়ে যে ৫০ একর জমি কিনেছে, তা শাপুরজি গোষ্ঠীর হাতে তুলে দিতে পারে। তবে গোটা বিষয়টি এখনও আলোচনার স্তরেই রয়েছে বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য।
মহাকরণ সূত্রের খবর, এই ব্যবস্থার আইনি দিকটিও খতিয়ে দেখেছে রাজ্য। সেজের দায়িত্বে থাকা ডেভেলপমেন্ট কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, ডেভেলপমেন্ট কমিশনারের বক্তব্য, শাপুরজি পালোনজির বিশেষ আর্থিক অঞ্চল যে পর্যায়ে রয়েছে, তাতে ইনফোসিসকে সামিল করার জন্য দিল্লি দৌড়তে হবে না। রাজ্য স্তরেই বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া যাবে।
শিল্প মহলের দাবি, এই ব্যবস্থায় দু’টি সংস্থাই লাভবান হবে। এবং ইনফোসিসকে ধরে রাখতে পেরে স্বস্তি পাবে রাজ্য সরকারও। কারণ, ইনফোসিস এই নামটাই তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে রাজ্যের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে শিল্প মহলের ধারণা। গত কয়েক বছরে কার্যত থমকে যাওয়া শিল্পায়নের পালে নতুন করে বাতাস লাগার সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি, ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে ইনফোসিস প্রকল্প গড়লে প্রায় ৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে রাজ্যে এসে প্রকল্প গড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করার সময় নিজেই এ কথা জানিয়েছিলেন সংস্থার প্রাণপুরুষ নারায়ণমূর্তি।
তাই ইনফোসিসকে ধরে রাখতে তৎপর ছিল সরকারও। সেজ-এর তকমা ছাড়াই তাদের কী ভাবে সমপরিমাণ আর্থিক সুবিধা দেওয়া যায়, সেই পথ খোঁজা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত শাপুরজি গোষ্ঠীর সঙ্গে রফা হলে মমতা সরকারের নীতিভঙ্গ না করেই রাজ্যে সেজ গড়তে পারবে ইনফোসিস। |