গভীর রাতে একটি বাড়িতে রড, লাঠি নিয়ে চড়াও হয়ে বাড়ির লোকেদের মারধর ও মহিলার শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ উঠল এক পুলিশকর্মী ও তাঁর দুই সঙ্গীর বিরুদ্ধে। রামপুরহাট শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ওই ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, রাতেই পুলিশে খবর দিলেও রামপুরহাট থানা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বাসিন্দাদের একাংশই অভিযুক্ত পুলিশকর্মী-সহ তিন জনকে আটকে রাখেন। মঙ্গলবার ভোরে পুলিশ এসে ওই তিন জনকে গ্রেফতার করে। ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত পুলিশকর্মীর নম্বরবিহীন মোটরবাইক, মাদক এবং অস্ত্রও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত পুলিশকর্মী খায়রুল খন্দকার ইসলাম জেলা পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর কনস্টেবল। কয়েক বছর ধরে তিনি রামপুরহাটের এসডিপিও-র অধীন ‘এমার্জেন্সি ফোর্স লাইনে’ কর্মরত। তাঁর বাড়ি মুর্শিদাবাদের সালার থানার তালেবপুর গ্রামে। খায়রুলের সঙ্গেই ধরা পড়েছে তাঁর দুই সঙ্গী শোভন মণ্ডল ও রঞ্জন ভট্টাচার্য। মঙ্গলবার রামপুরহাট আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ধৃতদের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা বলেন, “ওই পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হবে। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও খতিয়ে দেখা হবে।” |
অভিযোগ, সোমবার রাত ১২টা নাগাদ ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সমীর দাসের বাড়িতে চড়াও হন খায়রুল-সহ তিন জন। সমীরবাবুর অভিযোগ, “ওরা লোহার রড দিয়ে আঘাত করে দরজা প্রায় ভেঙেই ফেলছিল। ভয় পেয়ে দরজা খুলে দিই। খায়রুল তখন বলেন, আমার বিরুদ্ধে মাদক বিক্রি করার অভিযোগ আছে। তাই আমাকে এখনই ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। আমি অস্বীকার করায় জোর করে ঘরে ঢুকে আমাদের মারধর করতে শুরু করে ওই তিন জন।” সমীরবাবুর স্ত্রী পার্বতী দাস বলেন, “আমরা ওদের হাতে পায়ে ধরে ১ হাজার টাকা দিই। কিন্তু ওরা আরও টাকা দাবি করে মারধর করতে থাকে। আসবাবপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়।” সমীরবাবুর ছেলে আশিস দাসের অভিযোগ, “ওরা তিন জন মা ও আমার স্ত্রীকে মারধর করে শ্লীলতাহানিও করে।” এর পরে খায়রুলরা সমীরবাবুকে বাড়ি থেকে মারতে মারতে বাইরে নিয়ে যান বলে অভিযোগ।
স্থানীয় বাসিন্দা হরপ্রসাদ দাস, পথিক মণ্ডলদের অভিযোগ, “রাত ১টা পর্যন্ত এলাকায় ওরা দাপিয়ে বেড়ায়। সমীরবাবুকে একটি কর্দমাক্ত জায়গায় ফেলে দেয়। ওদের হাতে লোহার রড ও পাইপ ছিল বলে কেউ প্রথমে এগিয়ে যাওয়ার সাহস করতে পারেনি। পরে অনেকে জড়ো হয়ে ওই তিন জনকে ধরে ফেলে।” স্থানীয় ফরওয়ার্ড ব্লক কাউন্সিলর স্বপন দত্তের ক্ষোভ, “রাতেই পুলিশে খবর দেওয়া হয়। কিন্তু ওরা সাহায্যের জন্য আসেননি। ঘটনাস্থল থেকে থানা বেশি দূরে না হলেও পুলিশ আসতে ভোর হয়ে যায়।” এ দিন ভোর ৪টে নাগাদ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ওই ওয়ার্ডের চালধোয়ানি পুকুরপাড়ের একটি বিদ্যুতের খুঁটিতে তিন জনকে বেঁধে রেখেছেন এলাকাবাসী। কিছু পরে পুলিশ এসে উদ্ধার করে নিয়ে যায় তাঁদের।
সহকর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, খায়রুলের বিরুদ্ধে তোলাবাজি, মাদক সেবন-সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। রঞ্জন ও শোভন নামে ধৃত অন্য দু’জনের বিরুদ্ধেও নিজেদের পুলিশের চর দাবি করে বিভিন্ন জায়গায় ক্ষমতা জাহির করেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। ধৃতদের বিরুদ্ধে সোমবার রাতেই ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের আর এক বাসিন্দা দুলাল চক্রবর্তীর বাড়িতেও ঝামেলা পাকানোর অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় একটি ক্লাবের সদস্য চন্দন সরকার, ষষ্ঠী সাহা, পার্থ সরকার, ছোটন মণ্ডলদের অভিযোগ, “ওই পুলিশকর্মী প্রায়ই পাড়ায় এসে গোলমাল পাকাতেন। দিন দশেক আগেই মদ খেয়ে এসে তিনি বিশৃঙ্খলা করেছেন। প্রতিবাদ করলে পাল্টা হুমকি দিতেন ওই পুলিশকর্মী। তাই সোমবার বিকেলেই এ নিয়ে থানায় আমরা লিখিত অভিযোগও জমা দিয়েছিলাম।” রামপুরহাট থানার এক পুলিশকর্মী জানালেন, খায়রুলকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছিল। অভিযোগ জমা পড়তেই ওই দিন গভীর রাতে ওয়ার্ডে গিয়ে ওই পুলিশকর্মী হামলা চালান বলে এলাকাবাসীর ধারণা। যদিও অভিযুক্ত পুলিশকর্মীর স্ত্রী তসমিন বানুর দাবি, “আমার স্বামী নির্দোষ।” |