ধাওয়া করে দুষ্কৃতীদের ধরতে গিয়ে তাদের ছোড়া বোমায় গুরুতর জখম হলেন দুই ভাই। রবিবার গভীর রাতে চুঁচুড়া থানার ব্যান্ডেল নেতাজি পার্ক এলাকার ২ নম্বর কলোনির ঘটনা। বোমা ছুড়ে পালানোর আগে দুষ্কৃতীরা ওই এলাকারই বাসিন্দা, এক স্কুল শিক্ষকের বাড়িতে ডাকাতি করে সোনার গয়না এবং নগদ কয়েক হাজার টাকা লুঠ করে।
ওই এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেশ কিছু দিন ধরে ব্যান্ডেল স্টেশন চত্বরের কিছু দুষ্কৃতী ওই এলাকায় অবাধে ঘোরাফেরা করছে। মহিলাদের কটূক্তিও করছে। এ নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ জানানো হলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এর ফলেই, রবিবারের ঘটনা। পুলিশের দাবি, ওই এলাকায় নিয়মিত টহলদারি চালানো হয়। তবে, সোমবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) তথাগত বসু বলেন, “দুষ্কৃতী-দলটিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।” |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাত দেড়টা নাগাদ সাত-আট জন প্রথমে পোলবার মহানাদ প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক শঙ্কর বর্মনের বাড়িতে হানা দেয়। শঙ্করবাবুর মা কল্পনাদেবীর ঘর রাস্তার দিকে। সেই ঘরের দরজা ভেঙে দুষ্কৃতীরা ঢোকে। সকলেরই মুখ বাঁধ ছিল কাপড়ে। কল্পনাদেবীর মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে আলমারির চাবি নেয়। আলমারি খুলে জামাকাপড় তছনছ করে। কিন্তু গয়না বা টাকা ওই আলমারিতে ছিল না। এর পরে দুষ্কৃতীরা পাশের শঙ্করবাবুর ঘরে গিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে তাঁকে খাটের এক কোণে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকতে বাধ্য করে। তার পরে চাবি নিয়ে ওই ঘরের আলমারি খুলে নগদ কয়েক হাজার টাকা এবং শঙ্করবাবুর মা ও স্ত্রীর কয়েক ভরি সোনার গয়না লুঠ করে। পাশে রাখা মাটির ভাঁড় ভেঙে জমানো পয়সা নিতেও তারা ছাড়েনি।
ওই বাড়ি লাগোয়া বাড়িতেই থাকেন শঙ্করবাবুর দিদি কল্পনা বিশ্বাস। সেই বাড়িতে শঙ্করবাবুকে নিয়ে গিয়ে কল্পনাদেবীকে দরজা খোলানোর চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। কিন্তু ওই বাড়ি থেকে কোনও সাড়া না পাওয়ায় ফিরে এসে দুষ্কৃতীরা শঙ্করবাবু ও তাঁর মাকে একটি ঘরে বন্ধ করে রেখে বেরিয়ে যায়। পরে শঙ্করবাবুর চিৎকার শুনে কল্পনাদেবী ও প্রতিবেশীরা এসে তাঁদের উদ্ধার করেন। |
তত ক্ষণে দুষ্কৃতীরা হানা দেয় কিছুটা দূরের আর একটি বাড়িতে। কাঠ-মিস্ত্রি সঞ্জয় বাহাদুর সার্কি এবং তাঁর ভাই সন্তোষ ওই বাড়িতে থাকেন। দরজা ভেঙে দুষ্কৃতীরা ঢুকেছে টের পেয়ে তাঁরা লাঠি হাতে বেরিয়ে আসেন। দুষ্কৃতীরা পালায়। সঞ্জয় ও সন্তোষ তাদের ধাওয়া করে। এক দুষ্কৃতী পড়ে যায়। দুই ভাই তাকে ধরতে গেলে অন্য দুষ্কৃতীরা তাঁদের লক্ষ করে দু’টি বোমা ছোড়ে। সঞ্জয়ের দু’টি পা-ই ঝলসে যায়। সন্তোষের মুখের বাঁ দিকে স্প্লিন্টার লাগে। দু’জনকে মাটিতে পড়ে যেতে দেখে দুষ্কৃতীরা পালায়। বোমার শব্দে এলাকার লোকজন ঘটনাস্থলে চলে আসেন। তাঁরাই দু’ভাইকে উদ্ধার করে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। রাতেই পুলিশ তদন্তে আসে।
এ দিন শঙ্করবাবুর বাড়ির সামনের বিদ্যুৎ-স্তম্ভে সন্ধ্যা থেকে আলো জ্বললেও অত রাতে দেখা যায়, রাস্তাটি অন্ধকার। আলোর কাচ রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। স্থানীয় লোকজনের অনুমান, ডাকাতির আগে দুষ্কৃতীরাই ওই আলো ভাঙে। শঙ্করবাবু বলেন, “রাত দেড়টা নাগাদ দরজায় ধাক্কা শুনে ভেবেছিলাম মা ডাকছে। দরজা খুলতেই দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালাল। স্কুলের মিড ডে মিলের কয়েক হাজার টাকা আলমারিতে ছিল। সেই টাকাও দুষ্কৃতীরা নেয়।”
সব মিলিয়ে দুষ্কৃতীরা তাঁর বাড়ি থেকে প্রায় ২০ হাজার টাকা এবং ৩-৪ ভরি গয়না লুঠ করেছে বলে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন শঙ্করবাবু।
|