রাতে ভাড়ার ‘গ্যারাজ’, দিনে রিকশার ‘স্ট্যান্ড’ ন্যাশনালে
নিবার রাত ন’টা। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে হর্ন দিতেই ভিতর থেকে মুখ বাড়ালেন এক প্রৌঢ়। ‘কী ব্যাপার?’ তাঁকে বলা হল, রাতের জন্য গাড়িটা কলেজ ভবনের ভিতরে রাখতে চাই। শুনেই তাঁর চটজলদি জবাব, ‘ও সব হবে না’। বললেন ঠিকই, কিন্তু বলার পরেও সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলেন। ব্যাগ থেকে ১০০ টাকার একটা নোট বার করে রাতটুকুর মতো গাড়ি রাখার বন্দোবস্ত করার অনুরোধ করতেই হাবভাব বদলে গেল তাঁর। কয়েক মুহূর্ত দাঁড়াতে বলে ভিতরে ঢুকে গেলেন। মিনিট দুয়েক পরে বেরোলেন চাবি হাতে। একশোর পাশাপাশি আরও ৫০ টাকা বার করতে বলে আগে থেকে কেন বন্দোবস্ত করে রাখিনি, সে জন্য মৃদু ধমকও দিলেন।
এর পরে কোথায় গাড়ি পার্ক করা হবে, সেই জায়গাটা নিজেই দেখিয়ে দিলেন তিনি। একই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, ভোরবেলা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এসে যেন গাড়ি বার করে নেওয়া হয়। নিয়মিত গাড়ি রাখলে আর একটু কম খরচে ‘বন্দোবস্ত’ করে দেওয়া হয় বলেও জানিয়ে রাখলেন। ভিতরে তখন আরও পাঁচটি গাড়ি পার্ক করা আছে।
গাড়ি আছে, অথচ রাখার জায়গা নেই? ‘মুশকিল-আসান’ হিসেবে হাজির ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ। দিনের পর দিন সন্ধ্যার পরে কলেজ চত্বর গ্যারাজ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। অভিযোগ, চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের একাংশ এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত।
ন্যাশনাল মেডিক্যালের ভিতরে এ ভাবেই দিনভর দাপিয়ে বেড়ায় অজস্র রিকশা। ছবি: দেবাশিস রায়
মাসোহারার ভিত্তিতে আশপাশের বেশ কিছু বাসিন্দাই এই মেডিক্যাল কলেজ চত্বরকে ‘পাকির্ং স্পেস’ হিসেবে ব্যবহার করে চলেছেন। মাস কয়েক আগে এক ব্যক্তির মৃতদেহ নিয়ে তাঁর পরিবারের লোকেরা সন্ধ্যার পরে দেহদানের জন্য অ্যানাটমি বিভাগে যোগাযোগ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁদের গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
কর্তৃপক্ষ অবশ্য বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনও পদক্ষেপ করেননি। অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী বলেন, “মৌখিক ভাবে কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন। মাঝরাতে আচমকা হানা দিয়ে এটা ধরতে হবে।”
কলেজ চত্বরকে পার্কিং স্পেস হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি হাসপাতাল চত্বর ব্যবহৃত হচ্ছে রিকশা স্ট্যান্ড হিসেবেও। চিকিৎসকদের গাড়ি তো দূর, রোগী নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সও বহু ক্ষেত্রে হাসপাতালে ঢুকতে পারে না রিকশার দৌরাত্ম্যে। সকাল আটটা থেকে দুপুর তিনটে পর্যন্ত আউটডোরের সামনে সার সার রিকশা দাঁড়িয়ে থাকে। সেখানেই রাস্তা আটকে ভাড়া নিয়ে দরদস্তুর চলে। অ্যাম্বুল্যান্সে বা ট্যাক্সিতে রোগী নিয়ে ভিতরে ঢুকতে গেলেও বাধা পেতে হয়। বিষয়টি নিয়ে রোগী বা তাঁদের পরিজনেরা তো বটেই, এমনকী চিকিৎসকদের তরফেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক বার অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি।
নিরাপত্তার কারণে হাসপাতাল চত্বরে বহিরাগতদের গাড়ি রাখা বন্ধ করতে একাধিক বার নির্দেশ জারি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য নিরাপত্তাকর্মীদেরও নজর রাখতে বলা হয়েছে। তার পরেও পরিস্থিতি এমন থাকছে কী ভাবে? হাসপাতালের সুপার পার্থ প্রধানের জবাব, “রিকশা দেখলেই তাড়িয়ে দিই। তখনকার মতো চলে যায়। তার পরে আবার ফিরে আসে। এর যে কী সমাধান, আমরাও তা জানি না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.