টোলগে ওজবেকে সবুজ-মেরুন জার্সি পরিয়ে দিলেন রুদ খুলিট!
জগমোহন ডালমিয়া ঘোষণা করলেন বর্ষসেরা মোহনবাগান ফুটবলার রহিম নবির নাম!
ক্লাব ছেড়ে যাওয়ার পরও হোসে ব্যারেটো যা হাততালি পেলেন তার ধারেকাছেও গেল না বিশ্ববরেণ্য ফুটবলার খুলিটকে নিয়ে দর্শক-উচ্ছ্বাস!
নিজের ডিজাইন করা জার্সি টোলগে-নবিরা পরার পর হাঁটু গেড়ে ভিক্ষার ভঙ্গিতে পুরো টিমের কাছে ট্রফি আর গোল চাইলেন গায়ক বাবুল সুপ্রিয়!
প্রয়াত জার্নেল সিংহের হয়ে মোহনবাগান রত্ন নিতে পঞ্জাব থেকে এসেছিলেন তাঁর তিন মেয়ে। মঞ্চের পিছনের জায়ান্ট স্ক্রিনে বাবার খেলা দেখতে দেখতে তাঁরা চোখ মুছছিলেন!
খুলিটকে মাঝখানে দাঁড় করিয়ে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে ছবি তুললেন ভারতের সর্বকালের দুই সেরা ফুটবলার চুনী গোস্বামী এবং প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। |
মোহনবাগান দিবসের চমকপ্রদ মঞ্চ-সজ্জা আর আলোর নীচে এ রকম নানা মুহূর্ত তৈরি হল রবিবারের সন্ধ্যায়। নেতাজি ইন্ডোরে।
কিন্তু বিশ্বফুটবলের মহা-তারকা প্রধান অতিথি হয়ে এসে যা বললেন তাতেও তো চমক! “ব্রিটিশদের হারিয়ে জেতা একটা ফুটবল ম্যাচ স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল! এখানে এসে শুনে আশ্চর্য হয়েছি। ’৮৭-তে নেলসন ম্যান্ডেলাকে যখন ইউরোপের সেরা ফুটবলার হওয়ার ট্রফিটা উৎসর্গ করেছিলাম, তখনও ভাবিনি এটা পরে অন্য মাত্রা পেয়ে যাবে। ফুটবলের শক্তিতে কত কী না ঘটে! ” মঞ্চে ঘুরে ঘুরে বলছিলেন খুলিট। আন্তরিক ভঙ্গিতে। মুখে হাসি।
কিন্তু খুলিট যে খেলাটার জন্য বিশ্ববরেণ্য, সেই ফুটবলে তো গত দু’বছর কোনও সাফল্যই আসেনি বাগানে। তাতে অবশ্য জৌলুস কমেনি অনুষ্ঠানের। কারণ ঘরোয়া ক্রিকেটের পাঁচটি ট্রফির চারটিই তো সবুজ-মেরুন তাঁবুতে। এ বছর থেকে চালু হওয়া বর্ষসেরাদের জন্য শৈলেন মান্না স্মৃতি পুরস্কার তাই পেয়ে গেলেন ক্রিকেটার লক্ষ্মীরতন শুক্ল। দলের সেরা ক্রিকেটার হলেন দেবব্রত দাস। ফুটবলের মান বাঁচাল শুধু অমিয় ঘোষের খুদে মোহনবাগান। এ বারের নার্সারি লিগের চ্যাম্পিয়ন হয়ে। ক্রিকেটারদের সঙ্গে নার্সারি ফুটবলারদেরও সংবর্ধিত করা হল। বস্তিবাসী ছাত্রদের জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিলের গোল প্রকল্পের এক ছাত্র দিলসান রহমানকে পুরস্কৃত করা হল নিয়মিত অনুশীলনে আসার জন্য। প্রত্যেকটি পুরস্কার দেওয়ার সময় স্টেডিয়ামের বিভিন্ন জায়ান্ট স্ক্রিনে ফুটে উঠছিল তাদের কীর্তির ছবি। যা অনুষ্ঠানকে অন্য মাত্রা এনে দিল। |
সেরা ক্রীড়াবিদের পুরস্কার নিয়ে লক্ষ্মী। |
ট্রফি জিতে নাচার সুযোগ পাননি। তাতে কী? গতবার যেখানে স্টিভ ডার্বির টিম নেচেছিল সেখানেই নাচলেন টোলগে, শিল্টন, ইচে, স্ট্যানলিরা। অধিনায়ক ওডাফা ওকোলি শহরে নেই। তিনি ছাড়া এসেছিলেন প্রায় সব ফুটবলারই। জার্সি উদ্বোধনের পর বাবুল সুপ্রিয়র ‘সবুজ-মেরুন, সবুজ মেরুন, পাল তোলা নৌকো ছুটছে দারুণ’ গানের সঙ্গে নাচলেন এ বারের কোচ সন্তোষ কাশ্যপও। নাচ দেখার পর স্টেডিয়ামে উপস্থিত কয়েক হাজার দর্শকের মনের কথা বলে দিলেন মোহনবাগান প্রেসিডেন্ট টুটু বসু। আর্তি মাখানো গলায় টুটু বললেন “বাবুল বলছিল, ও মাঠে থাকলেই নাকি ইস্টবেঙ্গলকে হারাই। এ বার ওর তৈরি জার্সি। ট্রফি পাবে তো ভাই? জিতবে তো?”
দুর্দান্ত অনুষ্ঠানে চোনা ফেলে দিল অবশ্য দুই ঘরের ছেলে সুব্রত ভট্টাচার্য ও সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতি। দু’জনেই জানাচ্ছেন, এ দিন সন্ধ্যায় অন্য কাজে ‘ব্যস্ত’ ছিলেন। পদ্ম মিত্র, অরুময় নৈগম, নিমাই গোস্বামী, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া প্রাক্তন কোনও ফুটবলারকেও দেখা যায় নি। দেখা যায়নি ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডানের বড় কর্তাদের। টোলগে বিতর্কে জড়িয়ে যাবেন বলে আসেননি আই এফ এ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায়ও। টোলগে সরকারি ভাবে এখনও মোহনবাগানের নন। তবু তাঁকে কেন জার্সি পরানো হল তা নিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরই অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছে বিতর্ক। ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার বললেন, “এর সবচেয়ে ভাল জবাব দিতে পারবেন আই এফ এ সচিব।” উৎপলবাবুকে অবশ্য ফোনে পাওয়া যায়নি। মোহনবাগান অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত যুক্তি দিয়েছেন, “টোলগে তো আমাদের জার্সি পরে অনুশীলনই করছেন। আমরা তাই ফুটবলার তালিকা প্রকাশ করে টোলগের নাম ঘোষণা করিনি।”
১৯১১-র ঐতিহাসিক আই এফ এ শিল্ড জয়-দিবস উদযাপনের দিনেও টোলগে বিতর্ক লেগে রইল মোহনবাগানের গায়ে!
|