ভাবনা ছিল ত্রিফলা আলোয় শহরকে লন্ডনের চেহারা দেওয়ার। কিন্তু সেই কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় রীতিমতো ফাঁপরে পড়েছে কলকাতা পুরসভা। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে বামেরা সরব হবেন সেটা প্রত্যাশিতই। আজ সোমবার, পুরসভার বাম কাউন্সিলররা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ঘরের সামনে বিক্ষোভও দেখাবেন। প্রশ্ন তুলছেন পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলররাও। বিষয়টি নিয়ে কোন্দল শুরু হয়েছে তৃণমূলের মধ্যেই। জট ছাড়াতে আসরে নেমেছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি চাইছেন, ত্রিফলা বাতি লাগানোর বিষয়টি নিয়ে মেয়র পরিষদে আলোচনা হোক।
কিন্তু এতে সমস্যা বাড়ার আঁচ পাচ্ছে তৃণমূল শিবির। তাঁদের মতে, এক তো আগে কখনওই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়নি মেয়র পরিষদে। এখন অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পরে পরিষদে তা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে, রাজনৈতিক বিড়ম্বনা তাতে বাড়বে বই কমবে না। নিয়মমাফিক বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে, কমিটি না গড়ে এবং বিনা দরপত্রে যে ভাবে ২৭ কোটি টাকার কাজ করা হচ্ছে, তা নিয়ে আগেই আপত্তি জানিয়েছিল পুরসভার অর্থ দফতর। মেয়র পরিষদে আলোচনা উঠলে সে সব প্রসঙ্গও সামনে চলে আসবে। একাধিক মেয়র পারিষদ স্পষ্টই জানিয়েছেন, এখন বিষয়টি বৈঠকে তুললে নানা প্রশ্ন উঠবে। এক মেয়র পারিষদের কথায়, “স্পট কোটেশন করে কাজের বরাত দেওয়া নিয়ে পুরসভার অর্থ দফতর আপত্তি জানিয়েছিল। সেই আপত্তি জানিয়ে অর্থ দফতর ঠিক কী লিখেছিল সেটাও দেখতে চাইব।” এই চাপানউতোরের মধ্যে সমস্যায় পড়েছেন ঠিকাদাররা। তাঁদের বিল আটকে গিয়েছে। সেই সমস্যা কাটানোর পথ খুঁজতেও মেয়র পরিষদে আলোচনা চাইছেন মেয়র। পুরসভা সূত্রের খবর, দরপত্র এড়াতে ২৭ কোটি টাকার কাজকে ৫৪০টি ভাগ করে ‘স্পট কোটেশন’-এর ভিত্তিতে বরাত দেওয়া হয়েছে। এই ‘অনিয়ম’-এর ঘটনায় যাঁরা জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্রের নেতৃত্বে বামেদের এক প্রতিনিধি দল ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে তদন্ত চেয়ে রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। সোমবারের বিক্ষোভ কর্মসূচির আগে পুরসভার অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান, সিপিএম কাউন্সিলর দীপঙ্কর দে এ দিন বলেন, “কমিশনারকে চিঠি দিচ্ছি। ত্রিফলা আলো সংক্রান্ত ফাইলপত্রও চাইব।”
পুর প্রশাসন অবশ্য এই ‘অনিয়ম’ নিয়ে পুরসভার ডিজি (আলো) গৌতম পট্টনায়ককে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন আগেই। ওই চিঠির জবাবে ডিজি (আলো) লিখেছেন, তাড়াহুড়োর জন্যই দরপত্র ছাড়া ‘স্পট কোটেশন’ করে কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে। এবং ওই কাজের জন্য ‘ক্ষমা’ও চেয়েছেন তিনি। যদিও তাঁর জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেননি পুর প্রশাসন। পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলর মালা রায় বলেন, “আলো দফতরের এক এগজিকিউটিভের কাছে জানতে চেয়েছিলাম এ ভাবে টেন্ডার ছাড়া কাজের বরাত দিচ্ছেন কেন? পরে তো ঠিকাদাররা বিপদে পড়বেন। উনি জবাব দিয়েছিলেন, ডিজি (আলো) বলেছেন এটা করতেই হবে। তাই করতে বাধ্য হয়েছি।” |